হাওড়া স্টেশনে গুলিতে জখম যুবক, ধৃত ১
কাল তখন প্রায় সাড়ে ৯টা।
অফিস টাইমে যাত্রীঠাসা স্টেশন। হঠাৎ একটা কান-ফাটা শব্দ। আর তার পর মুহূর্তেই আতঙ্কিত যাত্রীদের চিৎকার আর ছোটাছুটি পাল্টে দেয় কিছুক্ষণ আগের ব্যস্ত স্টেশনের ছবিটা।
কেউ দৌড়োচ্ছেন। কেউ বলছেন “পালাও, বোমা ফেটেছে।” কেউ বলছেন, “খুন, খুন!” তবে সকলেই চেষ্টা করছেন তড়িঘড়ি স্টেশনের বাইরে বেরোনোর। স্টেশনের ক্যাব রোডের মুখে রেলরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পে ডিউটি করছিলেন রেলরক্ষী বাহিনী বা আরপিএফ জওয়ানেরা। শব্দ পেয়ে তাঁরাও বন্দুক উঁচিয়ে ছুটতে শুরু করেছেন শব্দের উৎসের দিকে। পরে ভিড় সরতেই দেখা গিয়েছে, স্টেশনে থেকে বেরোনোর সাবওয়ের চাতালের উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এক ব্যক্তি। পাশেই পড়ে একটি ওয়ান শটার।
শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া স্টেশনে। আর এর ফলে কার্যত ঘুম ছুটে গিয়েছে হাওড়া রেলপুলিশ, আরপিএফ এবং হাওড়া সিটি পুলিশের। ঘটনাটি গোলাবাড়ি এলাকায় ঘটলেও এর দায় পড়েছে আরপিএফ এবং রেল পুলিশের উপরেও। কারণ হাওড়া স্টেশন যে মাওবাদী বা উগ্রপন্থী কোনও সংগঠনের লক্ষ্য হতে পারে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সতর্কবার্তা বরাবরই ছিল। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এই গুলি চলার ঘটনা যে স্টেশনের নিরাপত্তার ফাঁক স্পষ্ট করে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
যদিও রেলের দাবি, ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আরপিএফ জওয়ানেরা স্টেশনটিকে ঘিরে ফেলেন। তাঁরাই একটি গাড়ি করে রক্তাক্ত ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অন্য দিকে, আক্রমণকারী ব্যক্তিও স্থানীয় গোলাবাড়ি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনার তদন্ত শুরু করে হাওড়া সিটি পুলিশ জানায়, গুলিতে আহত বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তির নাম শেখ মৈনুদ্দিন। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বালিঘাইয়ে। যে ব্যক্তি তাঁকে গুলি করেছে তাঁর নাম শেখ আসলম। বাড়ি হুগলির খানাকুলে। দু’জনেই পরস্পরের পরিচিত এবং দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
কিন্তু কেন ভরা স্টেশনে এই খুনের চেষ্টা?
পুলিশ জানায়, আসলম পেশায় কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। মৈনুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দাদার শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। জেরার মুখে আসলম পুলিশকে জানান, এ দিন সকালে তিনি নিজেই ফোন করে মৈনুদ্দিনকে হাওড়া স্টেশনে ডেকে পাঠান। এর পরে সাবওয়ের কাছে মুখোমুখি হতেই ওয়ান শটার বার করে তাঁর দিকে তাক করেন। কিন্তু ট্রিগারে চাপ পড়ার আগেই মৈনুদ্দিন ডান হাত দিয়ে বন্দুকটির নল চেপে ধরে নীচের নামিয়ে দিতেই গুলি তাঁর ডান হাতের তালু ফুঁড়ে ডান পায়ের উরুতে ঢুকে যায়। তখনই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
প্রাথমিক ভাবে আসলমকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, প্রতিশোধ নিতেই মৈনুদ্দিনের উপর গুলি চালান তিনি। কারণ, মৈনুদ্দিন তাঁকে জানিয়েছিলেন সোনার খনির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় তাঁর কাছে অনেক সোনা রয়েছে। সোনা বিক্রি করবেন বলে আসলমকে ক্রেতা খুঁজতেও বলেন তিনি। সরল মনে সে কথা বিশ্বাস করে নেন আসলম। পুলিশ জানায়, আত্মীয়ের অনুরোধ রাখতে আসলম তাঁর দোকানেরই মালিককে সোনা কেনার কথা বলেন। আসলমের কথায় ওই দোকানের মালিক মৈনুদ্দিনের কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে সোনা কেনেন। কিন্তু সেই সোনা যাচাই করাতে গিয়ে মালিক দেখেন ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা পুরো সোনাই নকল! দোকানের মালিক এই ঘটনার পর আসলমকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেন।
পুলিশ জানায়, চাকরি খুইয়ে উত্তেজিত আসলম মৈনুদ্দিনকে খুনের চক্রান্ত করেন। শ্যালককে বলে একটি ওয়ান শটার জোগাড় করেন তিনি। মাস দুয়েক ধরে মৈনুদ্দিনের সঙ্গে নতুন করে ভাবও জমান। এর পর শনিবার ফোন করে মৈনুদ্দিনকে হাওড়া স্টেশনে ডেকে পাঠান। তাঁকে বাসস্ট্যান্ড থেকে অনুসরণ করে সাবওয়ের কাছে আসতেই পকেট থেকে ওয়ান শটার বার করে গুলি চালান। কিন্তু অনভ্যস্ত হওয়ায় গুলি ঠিক জায়গায় লাগেনি। পুলিশ জানায়, খুনের চেষ্টার অভিযোগে আসলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠলে মৈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে কী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.