স্বল্প সঞ্চয়ে এক বছরে আয় বৃদ্ধি ১২০ কোটি
সারদাদের ভরাডুবিতে ডাকঘরের পালে হাওয়া
পুরনো ডাকঘর আবার নগদে বাড়ছে। পুরনো আদর্শ আঁকড়ে থেকেই। লোভের টোপ না-দিয়েই।
কয়েক গুণ বেশি সুদের আশায় যাঁরা বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন, সারদা গোষ্ঠীর বিপুল কেলেঙ্কারির পরে তাঁরাই ফের ডাকঘরমুখী। গত কয়েক মাসের তথ্য বলছে, প্রধানত ডাকঘরের বিভিন্ন মাসিক রোজগার প্রকল্পে একেবারে ছাপোষা মানুষের বিনিয়োগের ঝোঁক এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। মিলছে ঠেকে শেখার প্রমাণ।
বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির অবিশ্বাস্য হারে সুদ-সহ চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া হরেক সুবিধার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বাড়ি এসে মাসিক কিস্তির টাকা নিয়ে যাওয়ার সুবিধা তো বটেই। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল সুদের হার। ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখলে যেখানে সুদ পাওয়া যেত ৮.৪%, লগ্নি সংস্থাগুলি তার কয়েক গুণ বেশি সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কার্যত বাজার দখল করে নেয়। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, বেশি সুদের আশায় কয়েক লক্ষ মানুষ ডাকঘরের বিভিন্ন প্রকল্পে তাঁদের জমানো টাকা মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তুলে নিচ্ছিলেন।
কপাল পুড়ছিল ডাকঘরের।
স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকদের মতে, সারদার মতো সংস্থায় সাধারণ মানুষের টাকা রাখার পিছনে আরও দু’টি বড় কারণ ছিল। i ২০১১-র ১ ডিসেম্বর থেকে কিষান বিকাশ পত্র তুলে নেওয়া হয়। আগে কিষান বিকাশ পত্রে জমা রাখা টাকা মেয়াদ ফুরোনোর পরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই প্রকল্পেই ফের বিনিয়োগ করতেন আমানতকারীরা। সেই প্রকল্প উঠে যাওয়ায় এক লপ্তে অনেক টাকা হাতে পেয়ে আমানতকারীরা তা রাখেন বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পে।
ওই বছরেই ১ ডিসেম্বর থেকে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের এজেন্টদের কমিশনের হার কমিয়ে দেওয়া হয়। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফের মতো প্রকল্পে উঠে যায় এজেন্টদের কমিশন ব্যবস্থা। এর ফলে বেশি কমিশনের আশায় এজেন্টদের একাংশ সারদার মতো সংস্থার হয়ে কাজ শুরু করেন। এই ‘পাশের ঘরের ছেলে’র মতো পরিচিত এজেন্টদের তৎপরতায় বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির রমরমা শুরু হয়।
চাকা ফের উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে সারদার মতো লগ্নি সংস্থার ভরাডুবির পরে। বিপুল তছরুপের জেরে ওই সংস্থার অসংখ্য আমানতকারী কার্যত পথে বসেছেন। আমজনতার সেই বিপর্যয়ের পরে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখার মোহে কিছুটা হলেও ভাটার টান দেখা যাচ্ছে। খুলতে শুরু করেছে ডাকঘরের পাথরচাপা কপাল।
কতটা খুলেছে ডাকঘরের কপাল?
রাজ্য সরকারের হিসেব বলছে, ২০১২ সালের মে মাসে রাজ্যের সব ডাকঘরের বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে যত টাকা জমা পড়েছিল, সেই মাসেই তার চেয়ে ন’কোটি টাকা বেশি তুলে নিয়েছিলেন আমানতকারীরা। কিন্তু এ বছরের মে মাসে আমানতকারীরা যত টাকা তুলেছেন, তার চেয়ে ১১২ কোটি টাকা বেশি জমা পড়েছে বিভিন্ন স্বল্প স্বঞ্চয় প্রকল্পে। এর ফলে ঠিক এক বছরের ব্যবধানে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে নিট আয় ১২০ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছে। এই প্রবণতা ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ বলে মনে করছেন রাজ্যের স্বল্প সঞ্চয় অধিকর্তা মোবেশ্বর আলি বৈদ্য।
জমা পড়ার হার যেমন বেড়েছে, অনেকটা কমেছে মেয়াদ ফুরোনোর আগে টাকা তোলার প্রবণতাও। যেমন, ২০১২ সালের মার্চ ও এপ্রিলে বারুইপুর ডাকঘর থেকে যথাক্রমে এক কোটি ১৬ লক্ষ এবং ৬৬ লক্ষ টাকা মেয়াদ শেষের আগেই তুলে নিয়েছিলেন আমানতকারীরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ধরা পড়ে সারদা কেলেঙ্কারি। তার পরে মার্চ ও এপ্রিলে ডাকঘরের মাসিক প্রকল্প থেকে টাকা তোলা হয়েছে যথাক্রমে ৭৬ লক্ষ এবং ৪৭ লক্ষ টাকা। উত্তর কলকাতার কাশীপুর ডাকঘরে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪০২০ জন আমানতকারী মেয়াদ ফুরোনোর আগেই তুলে নিয়েছিলেন ৫৮ কোটিরও বেশি টাকা। এ বছরে ওই একই সময়ে টাকা তুলেছেন ২০৬৩ জন। অঙ্কটা ২২ কোটি টাকার মতো। আমানতকারীরা জানান, পারিবারিক কারণে মেয়াদ ফুরোনোর আগেই এ বার টাকা তুলতে হয়েছে। ডাকঘরের কর্তারা মনে করেন, গত বার বেশি টাকা তুলে নেওয়ার মূল কারণটা ছিল অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখার লোভ।
টাকা জমা রাখার প্রবণতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি এবং টাকা তুলে নেওয়ার হার হ্রাস দু’দিক থেকেই পালে হাওয়া লেগেছে ডাকঘরের। সুদ কম জেনেও মানুষ কষ্টার্জিত অর্থের নিশ্চিন্ত নিরাপত্তাই বেছে নিচ্ছেন। তাতে লাভ সরকারেরও। স্বল্প সঞ্চয়ে বেশি টাকা জমা পড়লে রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজে ঋণ হিসেবে আরও বেশি অর্থ পাবে। এটা একটা ভাল দিক বলে মনে করে অর্থ দফতর।
আমানতকারীরা ফের ডাকঘরমুখী হওয়ায় সরস্বতী চৌধুরী খুব খুশি। ডাকঘরের এই এজেন্ট শত প্রলোভনেও বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার হয়ে কাজ করতে ছোটেননি। তাঁর বিশ্বাস, মানুষ আবার ফিরবে।
এবং সরস্বতীদেবীর বিশ্বাস কতটা নিখাদ, তারও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ডাকঘরের কপাল চওড়া হতে থাকায়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.