প্রথমে জমি পাওয়া ঘিরে জটিলতা। এর পর তার দাম নিয়ে টানাপোড়েন। এই দুই পর্ব পেরিয়ে এসে এ বার জমির ব্যবহার নিয়ে নতুন সমস্যা। জমি-জট আর পিছু ছাড়ছে না আইটিসি ইনফোটেক-এর। রাজ্যের অবশ্য দাবি, সব দিক খতিয়ে দেখে জট কাটাতে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইটিসি গোষ্ঠীর এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জন্য রাজারহাটে প্রায় ১৭ একর জমি চিহ্নিত করে রেখেছে রাজ্য। সমস্যা হল, ওই জমির একটি অংশে নিজেদের সদর দফতরের (ভার্জিনিয়া হাউস) শাখা তৈরি করতে চায় আই টি সি। কিন্তু ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক কারণে ওই জমির ২৫% ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পর আবার দফতর তৈরির অনুমতিও দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত রাজ্য। এই কারণেই আপাতত ফের ঝুলে গিয়েছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা লগ্নির এই প্রকল্প। যা চালু হলে কর্ম-সংস্থান হওয়ার কথা কমপক্ষে পাঁচ হাজার জনের।
শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে রাজ্য সব রকম সাহায্য করছে। কিন্তু কিছু নিয়মকানুন তো মেনে চলতেই হবে।” তিনি বলেন, “সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, তারা কত শতাংশ জমি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য ব্যবহার করতে চায়। তা জানার পর আলোচনা করে বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে।” |
মহাকরণ সূত্রে খবর, নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তি ক্যাম্পাসের জমির ২৫% বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য আগেই আর্জি জানায় আইটিসি। তা মেনেও নিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু এ বার সেই অংশ ছাড়া জমির আরও কিছুটা নিয়ে সদর দফতরের শাখা তৈরি করতে চায় সংস্থা। আর এই প্রস্তাবকে ঘিরেই দ্বিমত রয়েছে সরকারের অন্দরে।
প্রশাসনের একাংশের মতে, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য চিহ্নিত জমির ২৫ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্যিক বা অন্য কাজে ব্যবহারের ছাড় দেওয়া বেআইনি। আবার অপর পক্ষ মনে করছেন, আইটিসি-র মতো বহুজাতিক শহরে তাদের সদর দফতরের নয়া শাখা খুললে, তাতে আখেরে লাভ রাজ্যেরই। তাই লগ্নি, রাজ্যের ভাবমূর্তি এবং কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো উচিত। বিশেষত যেখানে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) নিয়ে বিতর্কে আটকে রয়েছে ইনফোসিস ও উইপ্রোর লগ্নি।
অবশ্য জমি নিয়ে আইটিসি-র সমস্যা নতুন নয়। এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে বাম জমানা থেকেই।
উইপ্রো বা ইনফোসিসের মতোই পূর্বতন বাম সরকারের আমলে রাজ্যে ক্যাম্পাস তৈরির জন্য ২৫ একর জমি চায় আইটিসি ইনফোটেক-ও। তখন ৫ একর জমি দেওয়ার কথা বলে রাজ্য। তা-ও আবার একর-পিছু ২.১৬ কোটি টাকা দরে। পরে অন্য দুই তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা দেড় কোটি টাকা দরে জমি পেলেও শিকে ছেঁড়েনি আইটিসি-র।
এই প্রেক্ষাপটে মহাকরণে পালা-বদলের পর রাজ্যে ফের ক্যাম্পাস তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করে আইটিসি-র এই শাখা সংস্থা। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেঙ্গালুরু সফরের সময় আগ্রহ আরও দানা বাঁধে। শুরু হয় জমির খোঁজ।
এ বার অবশ্য ৪৫-৫০ একর জমি চেয়েছিল সংস্থা। কিন্তু রাজারহাটে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ না-করায় তা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছে রাজ্য। তাই আপাতত ইনফোসিসের প্রস্তাবিত প্রকল্প এবং উইপ্রোর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের মধ্যবর্তী ১৭ একর জমিই আইটিসি ইনফোটেক-কে দিতে চায় তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, দামের সমস্যা মেটাতে রাজ্য তা দিতে রাজি সংস্থার পছন্দসই দামেই। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার সবুজ সঙ্কেতও মিলেছে। অবশ্য মূলধন জোগাড়ের খরচ (কস্ট অফ ক্যাপিটাল) হিসেবে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি কিছু টাকা। অর্থ দফতর সূত্রে খবর, এর পর সব কিছু মিলিয়ে প্রতি একর জমির দর ২ কোটি ছাড়াবে। তবে তা দিতে সংস্থার আপত্তি নেই বলেই তাদের দাবি।
সুতরাং জমি পাওয়া বা দাম নিয়ে সমস্যা আর নেই। এখন টানাপোড়েন জমি ব্যবহার নিয়ে। আলোচনার টেবিলে সেই কাঁটাও দূর হয় কি না, তার দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে রাজ্যের শিল্পমহল।
|