মৃত্যুর পর জানা গেল মৃতের ডেঙ্গি হয়েছিল। এমনই ঘটনা ঘটল লালগড়ের গোবিন্দপুরের কিশোরী রিম্পা সাহার (১৫) ক্ষেত্রে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মে মাসের শুরু থেকেই জ্বরে ভুগছিল ওই কিশোরী। ১৩ মে তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৫ মে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে চলে যান আত্মীয়েরা। বাড়িতে ফেরার পর ফের জ্বরে আক্রান্ত হয় কিশোরী। মাঝে-মধ্যে ভুল বকতে থাকে। তখন তাকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাও করান আত্মীয়েরা। সব শেষে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই মাসের ২০ মে। ৩০ মে হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে ফের বাড়ি নিয়ে চলে আসেন পরিজনেরা। এ দিকে, হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এলে জানা যায়, রিম্পার ডেঙ্গি হয়েছিল। কিন্তু রিম্পা হাসপাতাল থেকে চলে আসায় আর সেই মতো চিকিৎসা করা যায়নি। বাড়িতে নিয়ে আসার পর রিম্পার আত্মীয়েরা ওঝার শরণাপন্নও হয়েছিল! উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে ৪ জুন তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার কলকাতার এসএসকেএম থেকে একটি চিঠি আসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরার কাছে। তাতেই জানা যায়, লালগড়ের গোবিন্দপুরের রিম্পা সাহা নামে একজনের ডেঙ্গি হয়েছে। ঘটনা জানার পরেই শুক্রবার ঘটনাস্থলে যান স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী ও আধিকারিকেরা। কী ভাবে ওই এলাকায় ডেঙ্গি হল, আর কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, এসব খতিয়ে দেখেন তাঁরা। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওই এলাকায় ডেঙ্গি কিভাবে এল, তা ছড়িয়ে পড়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে এক মাস নজরদারি চালানো হবে। ডেঙ্গি এড়াতে এলাকায় প্রচারও চালানো হবে।”
তারই সঙ্গে ডেঙ্গিতে মৃত কিশোরীর বাড়ির পাশাপাশি ১০০টি বাড়িতে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রতিটি বাড়িতেই খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। আক্রান্ত হওয়ার পর টানা ৫ দিন জ্বর থাকলেই রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। দেখা হবে তাতে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে কি না। এ ছাড়াও কোথাও বৃষ্টির জল জমে রয়েছে কিনা, কোথাও টানা জলাধারে জল জমে রয়েছে কি না তাও দেখা হবে। থাকলে সেই জল ফেলে দেওয়া হবে। কারণ, পরিষ্কার জমা জলেই ডেঙ্গির জীবাণুবাহিত মশার জন্ম হয় বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।
চলতি বছরে এই প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেল। প্রথমেই মৃত্যুও হল এক কিশোরীর। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তারই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া এলাকায়, জ্বর হলেই ওঝা নয়, হাসপাতালে চিকিৎসার পরামর্শও দেবে স্বাস্থ্য দফতর। |