আশ্বাসই সার, তাই রং বদলান ভোটার
ক বাড়িতে মমতার ছবি সাঁটানো তেরঙ্গা পতাকা পতপত করে উড়ছে। আর এক বাড়িতে কাস্তে হাতুড়ি আঁকা লাল পতাকা টাঙানো। গ্রামের একের পর এক বাড়ির সদস্যরা এ ভাবে যেন জানিয়ে দেন, তাঁরা কোন দলের সমর্থক। অন্য দলের পতাকা খুলে তাঁদের দলের পতাকা বাড়ির সামনে রাখার জন্য দিনের পর দিন মগজ ধোলাইয়ের কাজ চালান নানা দলের ভোটকর্মীরা। তাতে কেউ কেউ রাজি হন, অনেকে বেঁকে বসেন ফি বছর।
পঞ্চায়েত ভোটে ফালাকাটা ব্লকের ধনীরামপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিসাবাড়ি-সরুগাঁও গ্রামের এক অংশে ৪৫টি পরিবার এ ভাবেই জানিয়ে দেন তাঁরা কোথায় ভোট দিতে চলেছেন। ১৩ বাই ৩১ নম্বর অংশের ভোটার ১২৫১। তবে ৪ টি পরিবারের মোট ২১৫ জন ভোটারের উপর অনেকটাই নির্ভর করে পঞ্চায়েত প্রার্থীদের ভাগ্য।
ধনীরামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী বোর্ড ছিল আর এস পি-র দখলে। ১৩ বাই ৩১ নম্বর অংশে গত বার প্রায় একশো ভোটে নির্বাচিত হন সিপিএম প্রার্থী বিক্রম শৈব। গতবার ৪৫টি বাড়ির ৩টি বাড়িতে কংগ্রেসের পতাকা ওড়ানো ছিল। বাকিগুলিতে লাল পতাকা লাগিয়েছিলেন বাসিন্দারা। সে বার কংগ্রেস প্রার্থী দিলীপ রায় বুঝে যান, নির্বাচনে জেতা সহজ হবে না। পরিবর্তনের জমানায় এবার গ্রামের ৪৫টি পরিবারের দুটি বাদে রাতারাতি তাঁরা সিপিএম-এর বদলে তৃণমূলের পতাকা বাড়িতে টাঙানোর সিদ্ধান্ত নেন। পঞ্চায়েতের একটি আসন হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গ্রামের সিপিএম নেতাদের মধ্যে। ক্ষমতায় এলে জল, বিপিএল কার্ড থেকে বার্ধক্য ভাতা ভাঙাচোরা রাস্তায় মাটি ফেলার প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে শিসাবাড়ি-সরুগাঁও-এর ঘরে ঘরে। বাসিন্দারা জানান, ৪৫ পরিবারের মধ্যে দু’-এক জন চাষি ছাড়া বাকিরা দিনমজুরি কাজ করে সংসার চালান। বেশির ভাগ পরিবারের পুরুষ ভিন রাজ্যে। কেউই বিপিএল তালিকা ভুক্ত নন। ১০০ দিনের কাজ বছরে ১৫ দিনের বেশি মেলেনি। মাটির রাস্তাঘাট গুলি ভাল হয়নি। বার্ধক্য ভাতার জন্য পঞ্চায়েত দফতর আর সিপিএম নেতার দোরে ঘুরেও দরিদ্ররা সুবিধা পাননি। বেশির ভাগ বাড়িতে নলকূপ নেই।
সারদা রায় নামে এক গ্রামবাসী গত বার পর্যন্ত সিপিএম-এর পতাকা বাড়ির পাটকাঠির বেড়া দেওয়া ঘরে টাঙিয়ে ছিলেন। এ বার তৃণমূল নেত্রীর ছবি সাঁটানো পতাকা তাঁর বাড়িতে। সারদাবাবুর কথায়, “দিনমজুরি করে ছয় জনের সংসার চালাচ্ছি। ভাঙা ঘরে থাকি। ইন্দিরা আবাসের জন্য পঞ্চায়েত ও পার্টির লোকজনকে জানিয়েছি। তারা তো কোন কিছুই করেনি। মায়ের জন্য বার্ধক্য ভাতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পাঁচ বছর ঘুরে তা মেলেনি। কিছুদিন আগে মা মারা যান। সব দেখে শুনে পতাকা পাল্টালাম।”
দিন মজুর দেবেন রায়ের পরিবারে ৬ জন ভোটার। বহু বছর আগে থেকে বাড়িতে লাল পতাকা টাঙান। তাঁর কথায়, “দিন পনেরো আগে তৃণমূলের লোক বোঝাল, নিজেরা গ্রামের রাস্তা ঘাট সহ নানা সমস্যায় ভুগছি। উন্নতি না দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পতাকা বাড়িতে টাঙিয়েছি। সিপিএম নেতারা এসে অনেক বুঝিয়েছিলেন। ক্ষমতায় থাকা নতুন দল কি করে তা দেখব বলে ওদের ফিরিয়ে দিয়েছি।”
তবে প্রতিনিয়ত বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সব দলই। কামিনী রায়ের কথায়, “কেরলে গিয়ে দিনমজুরি করি। গ্রামে সে ভাবে কাজ হয়নি বলে গত বার কংগ্রেসের পতাকা টাঙাই। এ বার তৃণমূলের পতাকা বাড়িতে টাঙানো। সিপিএম-এর লোক তা দেখে আমাকে বোঝায়, ক্ষমতায় এলে গ্রামের উন্নতি করবে। তাই তৃণমূল পতাকা টাঙানোর ৩ দিন পরে সিপিএম-ঝান্ডা লাগাই।” তৃণমূল নেতা আলি আকবর বলেন, ৪৫টি পরিবার বুঝে গিয়েছে সিপিএম দল উন্নয়ন মূলক কাজ করে না। তবুও আশাবাদী সিপিএম নেতা নাসির হক। তিনি বলেন, “গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি বললে মানব না। ১০০ দিনের কাজও হয়েছে। ভোট দেরি আছে। এর মধ্যে পতাকার রঙ পাল্টে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.