অভিযোগের ঝাঁঝ কমিয়ে মমতা ফের উন্নয়ন বার্তায়
খুনের চক্রান্তের তত্ত্ব থাকল তাঁর বক্তৃতায়। থাকল সেই চক্রান্তে বিরোধীদের সামিল হওয়ার অভিযোগও। সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ? সে-ও রইল। কিন্তু, সে-সব ছাপিয়ে থাকল উন্নয়নের বার্তা। অপরাধীরা ছাড় পাবে না, জানিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রতি কঠোর হলেন। তৃণমূলের সন্ত্রাস প্রমাণ করতে পারলে ব্যবস্থা নেবেন, এমন আশ্বাসও দিলেন।
এক কথায়, শুক্রবার পাওয়া গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বর্ধমানের অন্ডাল ও পুরুলিয়ার মানবাজারে মূলত উন্নয়ন ও রাজ্য সরকারের সাফল্যের কথাই তুলে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার করলেন তিনি। দুই জায়গাতেই তিনি দাবি করেছেন, ‘পরিবর্তনের’ জন্যই আজ রাজ্য বছরে একশো দিনের কাজে গোটা দেশে এক নম্বর। জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে, দার্জিলিং পাহাড়ও হাসছে। আবার গ্রামীণ সংখ্যালঘু ভোটারদের কথা মাথায় রেখে বলেছেন, সাচার কমিটির রিপোর্টে যা প্রস্তাব ছিল, তা পূরণ করা হয়েছে।
কামদুনি-কাণ্ডের কথাও এসেছে। তবে গ্রামবাসীদের প্রতিবাদ নিয়ে কটাক্ষ না করে প্রশাসকের সুরেই তিনি বলেছেন, “দু’টি ঘটনা ঘটেছে। আমরা সমর্থন করছি না। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিয়েছে। মালদহে ধর্ষণের ঘটনায় ২৭ দিনের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজার ব্যবস্থা করেছি। এক মাসের মধ্যে ওদেরও (কামদুনির অভিযুক্তদের) মৃত্যুদণ্ড চাইব।” একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “সব ভাইয়েরাই কি খারাপ?”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের কয়েক হাজার প্রার্থীকে সন্ত্রাস চালিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা, তারও জবাব এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “ওরা বলছে, তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। তা সত্যি হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর মিথ্যা হলে কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএমকাউকে ছাড়া হবে না।” মমতা জানান, ৫৭ হাজার আসনের মধ্যে ৫১ হাজারে লড়াই হচ্ছে। ১ লক্ষ ৭০ হাজার প্রার্থী রয়েছেন। “কোথাও জিততে পারবে না বলে ওরা ‘হারাতঙ্কে’ ভুগছে” কটাক্ষ তৃণমূল নেত্রীর।

বেষ্টনী পেরিয়ে। পুরুলিয়ার মানবাজারে। ছবি: সুজিত মাহাতো
তাঁকে খুনের চক্রান্তের তত্ত্ব অবশ্য এদিনও মনে করাতে ভোলেননি মমতা। যদিও তাঁকে (এবং মুকুল রায়কে) হত্যার ‘চক্রান্তকারী’ হিসাবে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি-মাওবাদী’র নাম করলেও সংবাদমাধ্যমের উল্লেখ করেননি। মানবাজারের সভায় মমতা বলেন, “জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরে এসেছে বলে মাওবাদীরা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। ওরা কাপুরুষের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে মানুষ খুন করে। ক্ষমতা থাকলে এখানে এসে চালাও গুলি।”
অন্ডালের উখড়ায় এ দিন দুপুর ১টায় সভা ছিল মমতার। তিনি আসেন পৌনে দু’টো নাগাদ। ছোট মাঠেও উপচে পড়া ভিড় হয়েছিল। বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, রাস্তায় লোকজন ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিছু দিন আগেই বারাবনির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দিলীপ সরকারকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। মমতা বলেন, “এখানে এক কমরেড খুন হয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওই ঘটনায় দুঃখিত। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই। ”
বর্ধমান জেলার খনি অঞ্চলে সভা ছিল বলে শিল্পের প্রসঙ্গ বারবার উঠে এসেছে মমতার বক্তব্যে। জানিয়েছেন, অন্ডাল বিমাননগরীতে ডিসেম্বরের মধ্যে ‘এয়ারবেস’ চালু হয়ে যাবে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে দলের শ্রমিক সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতানেত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও দোলা সেনের অনুদামীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা যে তিনি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নেতাদের প্রতি তাঁর বার্তা, “ওখানে ইস্পাতের কোটি কোটি টাকা কামানোকে কেন্দ্র করেই মারামারি হচ্ছে। সরকার বরদাস্ত করবে না। কড়া হাতে সব দমন করা হবে।”
মানবাজার কলেজের বিশাল মাঠে ৪টে নাগাদ সভা শুরুর কথা থাকলেও মমতা পৌঁছন ঘণ্টা দেড়েক পরে। তাতেও লোকজনের উৎসাহে খামতি পড়েনি। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, লক্ষাধিক লোকের ভিড় হয়েছিল। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মমতাকে এক ঝলক দেখার জন্য গাছেও অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সভার জন্য তৃণমূল প্রচুর বাস তুলে নেওয়ায় নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে। এখানেও শিল্প ও কর্মসংস্থানের কথা বলেছেন তিনি। দাবি করেছেন, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। এনটিপিসি-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ প্রকল্প হবে।
সংবাদমাধ্যম এদিনও তাঁর নিশানায় ছিল। তবে সমালোচনার তীব্রতা গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেকটাই কম। অন্ডালের সভায় মমতা অভিযোগ করেন, “আনন্দবাজার চ্যানেল, ২৪ ঘণ্টা আর আকাশ বাংলা এক তরফা সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-কে দিয়ে মিথ্যা প্রচার, সন্ত্রাসের অভিযোগ করছে।” মানবাজারে মমতা বক্তৃতা শুরু করার কিছুক্ষণ পরে অনেককে উঠে যেতে দেখা যায়। কারণ, তাঁরা কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় ছিলেন মূলত মমতাকে দেখার জন্য। সেই ছবি মমতার চোখও এড়ায়নি। তিনি বলেন, “যাঁরা চলে যাচ্ছেন, তাঁদের ছবি তুলছে আনন্দবাজার, ২৪ ঘণ্টা আর আকাশ বাংলা। আপনারা আমার মিটিং না শুনে চলে যাচ্ছেন, ওরা এটাই দেখাবে। এটাই ওদের প্ল্যান! আমি হাতজোড় করে বলছি, দয়া করে আমাদের মিটিং কভার করবেন না।”
ভিড় কিছুটা পাতলা হওয়ার জন্য সভামঞ্চেই দলনেত্রীর মৃদু ধমক খান পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। কেন বেলা ২টো থেকে লোক জড়ো করা হয়েছে, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা।

সহপ্রতিবেদন সমীর দত্ত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.