প্রসঙ্গ পঞ্চায়েত
বাহিনী-ধন্দেও ভোটে তৈরি রাজ্য
বাহিনী পাওয়া নিয়ে যতই সংশয় থাকুক, পঞ্চায়েত ভোটের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কিন্তু শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। মহাকরণ সূত্রে আজ এই দাবি জানানো হয়েছে।
সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি এর মধ্যেই শাসকদলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে। দাবি জানিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে। এই দাবি নিয়ে কখনও রাজ্যের বিরোধীরা দরবার করেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে, কখনও আর্জি জানিয়েছেন দিল্লিতে এসে। গত কালও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের কাছে এসে কংগ্রেস নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি অভিযোগ করেছেন, পঞ্চায়েতে নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আজ প্রশাসন ও শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ফের এক সুরে জানিয়ে দেওয়া হল, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই রাজ্য প্রশাসন পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে সক্ষম। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ইতিমধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রার্থীরা তো বটেই, প্রস্তুত মানুষও। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে যদি নির্বাচন ভেস্তে যায়, তবে তা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ হবে না। তৃণমূলের যুক্তি, এর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। এই সূত্রে ২০০৩ ও ২০০৮ সালের উদাহরণ দেখাচ্ছে দল। দলের এক নেতার কথায়, “২০০৮ সালের রাজ্যের পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে অনেক বেশি অশান্ত ছিল। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, রিজওয়ানুর কাণ্ডের জন্য উত্তাল ছিল গোটা রাজ্য। অশান্ত ছিল জঙ্গলমহলও। তা সত্ত্বেও সে সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন হয়নি। তা হলে এখন কেন হবে?” এ বারে যে ভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ধুঁয়ো তুলে বিরোধী দলগুলি সরব হয়েছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
এক কথায়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে রাজ্য সরকার অনড় থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন বানচাল করে দেওয়ার যে অভিযোগ বিরোধী দলগুলি তুলতে শুরু করেছে, সেই অভিযোগের মোকাবিলায় এ বার সরব হল শাসকদল।
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, প্রশাসনের মদতে তৃণমূল যে সন্ত্রাস শুরু করেছে, তা এ বার মনোনয়ন পেশের সময়েই প্রমাণিত। এ বারে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কেন্দ্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন প্রার্থীরা। তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূলের প্রার্থী।
বিরোধীদের সেই অভিযোগ উড়িয়ে আজ তৃণমূলের দাবি, এখন পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে ৫৯ হাজার জনকে। বিরোধী দলগুলির মধ্যে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি যথাক্রমে ৫৫ হাজার, ২৬ হাজার, ১৫ হাজার জনকে প্রার্থী করেছে। এ ছাড়া আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক-সহ নির্দলরা প্রায় ৬০ হাজার আসনে ভোটে লড়ছেন। সব মিলিয়ে, প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজারের কাছাকাছি প্রার্থী এ বারের ভোটে লড়াই করছেন। তৃণমূলের যুক্তি, যদি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসই হতো, তা হলে ওই বিপুল সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারলেন কী ভাবে? মমতার বক্তব্য, আসলে বিরোধীরা সব কিছুর মধ্যেই সন্ত্রাসের ভূত দেখছেন। বিরোধীদের যে নিচু তলায় সংগঠন ভেঙে গিয়েছে, সেই সত্যটি স্বীকার করতে চাইছেন না তাঁরা। তৃণমূলের দাবি, জেলা পরিষদের লড়াইয়ে সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন। কিন্তু যখন পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রশ্ন আসছে, প্রার্থী দিতে পারছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। তৃণমূলের বক্তব্য, আসলে নিচু তলায় যে সিপিএমের জনপ্রিয়তা ধসে গিয়েছে, সেই সত্যটি স্বীকার করতে পারছে না দল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “বিরোধী দলগুলি জনসমর্থনের অভাবে প্রার্থী দিতে পারছে না। সেটা তাদের অক্ষমতা। তা লুকোতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হচ্ছে।”
তৃণমূলের আরও যুক্তি, এ বার ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে, মহিলা প্রার্থীরা একতরফা ভাবে জিতে গিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূল। একই সঙ্গে প্রশাসনও যে এ বারে তৎপরতা বাড়িয়েছে, তা বোঝাতে শাসক দলের আরও যুক্তি, চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম বার জেলা পরিষদের আসনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁরা স্থানীয় বিডিও ছাড়াও এসডিও-র কাছে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন।
এত কিছুর পরেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সংশয় কিন্তু এখনও কাটেনি। শেষ পর্যন্ত বাহিনী আদৌ মিলবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। আর বাহিনী যদিও পাওয়াও যায়, তা কত পরিমাণ হবে, সেটাও স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে ভোট করা হবে, তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে প্রশ্ন রেখেছে কমিশন। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য পুলিশ দিয়েই আগামী মাসের নির্দিষ্ট দিনে পঞ্চায়েত ভোট করতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। মহাকরণ সূত্রের খবর, কোন দফায় কোন বুথে কী পরিমাণ পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন, সেই পরিকল্পনাও ইতিমধ্যে ছকে ফেলা হয়েছে। তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে কমিশন যদি ভোট বাতিল বা পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে, তবে তা রাজ্যের পক্ষে শুভ হবে না।
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া হাওড়া উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট কমেছে বলে বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও, আজ সেই অভিযোগও খণ্ডন করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভোট পেয়েছিল প্রায় ৪৮ শতাংশ। সিপিএম পায় ৪৪ শতাংশ। আর চলতি উপনির্বাচনে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৪৪.৫ শতাংশ। সিপিএম পায় ৪১.৭২ শতাংশ। মুকুল রায় বলেন, “তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, ২০০৯ সালে জোটে থেকে কংগ্রেস ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, তা হলে এ বারের প্রাপ্ত ভোটের নিরিখেও তৃণমূলের ভোট বেড়েছে।” সংখ্যালঘু ভোট শাসকদলের সঙ্গে নেই বলেও যে প্রচার করা হচ্ছে, তা-ও খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের দাবি, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাঁচলা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী প্রায় ১১ হাজার ভোটে এগিয়েছিল। বর্তমানে হাওড়া পুরসভাটি সিপিএমের দখলে রয়েছে। ওই পুরসভার ৫০টির মধ্যে ৪০টি ওয়ার্ড লোকসভা উপনির্বাচনের আওতায় ছিল। হাওড়া পুরসভার ভোট আসন্ন। মুকুলবাবুর দাবি, “আমাদের শক্তি যে হাওড়ায় বাড়ছে, তা ওই নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.