|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
রসিক থেকে গবেষক, সবার জন্য |
গুরু দত্তকে নিয়ে এক ধরনের নস্টালজিয়ায় ভুগি আমরা। তিনি অনেকটাই ‘মিথ’ আমাদের কাছে। এখনও পর্যন্ত তাঁর জীবন বা চলচ্চিত্র নিয়ে যতটুকু আলোচনা হয়েছে তা অনেকটাই তথ্যভিত্তিক কিংবা স্মৃতিমূলক। এ ধরনের কাজের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েও যে খেদটা থেকে যায়, তাহল তাঁকে বা তাঁর ছবি নিয়ে নৈর্ব্যক্তিক কোনও মূল্যায়নে যেতে চাই না আমরা। সেই অপূরিত কাজটিই অরুণ খোপকারের গুরু দত্ত: আ ট্র্যাজেডি ইন থ্রি অ্যাক্টস (পেঙ্গুইন বুকস, ২৫০.০০)। অরুণ নিজেওচলচ্চিত্রকার এবং চলচ্চিত্রের শিক্ষক, নানান অধ্যায়ে ভাগ করেছেন গুরু দত্তের ছবিকে। ‘ইমেজেস অব সাফারিং’, ‘দ্য ফ্রেম অব হিস্টরিক টাইম... ’, ‘ডার্কনেস স্টলড, টাইম স্টিলড’ ইত্যাদি। অরুণের রচনাগুলি মরাঠি থেকে অনুবাদ করেছেন শান্তা গোখলে।
মণি রত্নমের প্রথম ছবি থেকে এখনও পর্যন্ত শেষ ছবি ‘রাবণ’ পর্যন্ত বিস্তারিত ফিল্মপঞ্জি শুধু নয়, কোন ছবি কী পুরস্কার পেয়েছে তা-ও আছে ভরদ্বাজ রঙ্গন-এর কনভারসেশন উইথ মণি রত্নম-এ (পেঙ্গুইন/ ভাইকিং, ৭৯৯.০০)। ভরদ্বাজ দীর্ঘ কথোপকথন করেছেন মণির সঙ্গে, তাঁর ছবির স্টাইল থেকে সমাজ-বাস্তবতা অবধি সব কিছু নিয়েই। মণির সঙ্গে নিজের দারুণ বন্ধুত্বের কথা লিখেছেন এ আর রহমান বইটির শুরুতে, মণিস্যার বলে ডাকেন তাঁকে, ফিরে গিয়েছেন স্মৃতিতে, যখন প্রথম তাঁদের দেখা হয় ‘রোজা’ তৈরির সময়। মণি এসেছিলেন তাঁর স্টুডিয়োতে ’৯০ সালে, রহমান প্রায় তৈরিই ছিলেন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্যে, কিন্তু তা ঘটেনি, আর তাঁদের যুগলবন্দি ‘রোজা’কে অসাধারণ সাফল্য দিয়েছিল। শুধু সে ছবির গানই নয়, আবহসঙ্গীতও জেগে আছে দর্শকের কানে এখনও। নায়কন, অঞ্জলি, রোজা, বম্বে, দিল সে, যুবা, গুরু নিজের বিশিষ্ট ছবিগুলো নিয়ে মণি বলে গিয়েছেন অনর্গল, বাকি বইটি জুড়ে। যদিও এই কথা-বলা নিয়ে বইটির মুখবন্ধেই বলেছেন ‘সো ইট বিকামস আ বিট অব অফেন্স অ্যান্ড আ বিট অব ডিফেন্স, দ্য ইনটেলেকচুয়াল ড্রেসিং অব বেবিজ... মে বি ইট ইজ ট্রু, মে বি নট সো ট্রু।’
‘ব্রিলিয়ান্টলি ডেসক্রাইবস’— রাসেল পুকুট্টির আত্মস্মৃতি সম্পর্কেও বলেছেন এ আর রহমান। সাউন্ডিং অফ/ দ্য মেমোরিজ অব অ্যান অস্কার-উইনিং সাউন্ড ডিজাইনার (পেঙ্গুইন বুকস, ৩৯৯.০০)। ভারতের শ্রেষ্ঠ সাউন্ড ডিজাইনার বলা হয় পুকুট্টিকে, প্রায় এক দশক আগের ‘ব্ল্যাক’ থেকে শুরু করে হালের ‘চিটাগঙ’ই তার প্রমাণ। তিনিই প্রথম যিনি এশিয়া থেকে অস্কার পেয়েছেন ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’-এর জন্যে। সে ছবির পরিচালক ড্যানি বয়েল বলেছেন ‘ও ছিল আমার পরশপাথর, ছবিটা তৈরির সময়।’ আর এই স্মৃতিকথা পড়েও তিনি মুগ্ধ। বইটিতে পুকুট্টির সহায়ক-লেখক বৈজু নটরাজন।
আশির দশকের শুরুতে ঋত্বিক সিনে সোসাইটির প্রতিষ্ঠা, রানা সরকারের তত্ত্বাবধানে। সেই সঙ্গে সে সোসাইটির মুখপত্র ‘এফ্’-এরও জন্ম। দীর্ঘকাল এই চলচ্চিত্রপত্রটি ছবি নিয়ে সিরিয়াস ভাবুকদের চিন্তা উসকে দিত। এতে প্রকাশিত সেই সব রচনাদি থেকেই কিছু প্রবন্ধ গ্রন্থিত হয়ে প্রকাশ পেল নির্বাচিত এফ্ (সম্পা: বীরেন দাশশর্মা ও উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃত্তের বাইরে, ২০০.০০)। রচনাগুলিকে রাখা হয়েছে চলচ্চিত্র-ব্যক্তিত্ব, সিনেমা ও সমাজ, চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক আঙ্গিক এই তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করে। রয়েছে রানা সরকারকে নিয়েও একগুচ্ছ রচনা।
সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়েছে টেক ওয়ান/ রিফ্লেকশনস অন সিনেমা (প্রধান সম্পাদক: নীলোৎপল মজুমদার)। এতে মূলত বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার ও তাঁদের কাজ নিয়ে আলোচনা, সরাসরি ছবির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের কলমে। যেমন প্রয়াত মণি কলকে নিয়ে লিখেছেন পুতুল মাহমুদ, ফয়েজিয়া ফতিমা, রাজীব কুমার-সহ অনেকেই। ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ সত্যজিৎ ও তাঁর সিনেমার সঙ্গে নিজের দীর্ঘ যাত্রার কথা লিখেছেন ‘মাই পথের পাঁচালী’তে। বার্গম্যান নিয়ে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, শোহেই ইমামুরা ও ওজুকে নিয়ে অশোক বিশ্বনাথন, বারট্রান্ড তাভেরনিয়েরকে নিয়ে প্রদীপ বিশ্বাসের রচনা। পশ্চিমবঙ্গে চলচ্চিত্র চর্চা প্রসারের আন্দোলনে প্রায় পঞ্চাশ বছর যুক্ত রয়েছেন সত্যজিৎ চৌধুরী। নৈহাটি সিনে ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্ত ছিলেন সে সিনে ক্লাবের মুখপত্র ‘দৃশ্য’-এর সম্পাদনায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যা বিভাগেরও প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ ছিলেন, মূলত তাঁরই উদ্যোগে সেখানে স্নাতক স্তরে পাঠ্য হয় চলচ্চিত্রবিদ্যা। এস আর এফ টি আই-এর জন্মলগ্ন থেকে তার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনাদি নিয়ে প্রকাশ পেল ভারতীয় চলচ্চিত্রের শততম বর্ষে/ ফিল্ম নিয়ে (একুশ শতক, ৩০০.০০)। শুরুতেই ‘আপন কথা’য় সিনেমার সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের স্মৃতি। চলচ্চিত্রের সঙ্গে অন্য শিল্পআঙ্গিকের (যেমন চিত্রকলা বা থিয়েটার) তুলনামূলক আলোচনা বইটির একাধিক রচনায়। সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্রে আধুনিকতার উন্মেষ-পর্ব নিয়ে বিতর্ক, আবার এ দেশের চলচ্চিত্রে দিকপালদের বিশিষ্ট কিছু ছবি নিয়েও আলোচনা। এক চলচ্চিত্র-ঐতিহাসিকের দৃষ্টিকোণে উদ্ভাসিত তাঁর রচনাদি। বিশেষত অশোক বিশ্বনাথনের ‘শূন্য থেকে শুরু’কে যখন তিনি ‘বোধ-সমুজ্জ্বল একটি নতুন কাজ’ বলে চিহ্নিত করেন, লেখেন যে ‘ফিল্মটি বাস্তবের নিহিত জটিলতা নানা মাত্রায় সাজিয়ে ধরে আমাদের সামনে। প্রসঙ্গগুলি কখনো স্মৃতির ভেতর জগৎ থেকে উঠে আসে, কখনো সাক্ষাৎ ঐতিহাসিক বাস্তব পর্দা জুড়ে থাকে ঠিক ডকুমেন্টারি ফিল্মের মতো।’ রসিক থেকে গবেষক, সকলেরই অবশ্যপাঠ্য এ বই। |
|
|
|
|
|