ব্যাঙ্গ-বিদ্ধ দম্পতি দাঁড়িয়ে থাকেন খোলা রাস্তাতেই
বিয়ের সাজে বহরমপুরের জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের সামনের সিঁড়িতে পাত্রপাত্রী দু’জনেই মাথা নিচু করে হয়ে বসে রয়েছেন। দুজনেরই কপালে চন্দনের ফোঁটা। লাল শাড়িতে পাত্রী, পাটভাঙা ধুতি-পাঞ্জাবিতে পাত্র। জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ের পাশেই জনবহুল ক্যান্টনমেন্ট রোড। পথচলতি ছিটকে আসা মন্তব্য, আড়ষ্ট করে রেখেছে তাঁদের। রেজিষ্ট্রি বিয়ে করতে আসা পাত্রপাত্রীদের এ বোধহয় গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। বসার কোনও জায়গা নেই। খোলা রাস্তায় রোদ-বৃষ্টির মধ্যে জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের সামনে তাঁদের জুবুথুবু অপেক্ষা অব্যাহত।
জেলা রেজিষ্ট্রার দেবাশিস মুখোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টা নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “দেখি জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ পাওয়া যায় কিনা। ইতিমধ্যেই আইজিকে (রেজিষ্ট্রার) বলেছি।”
জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের একই ছাদের নিচে রয়েছে ডিএসআর-১ ও ২ ছাড়াও এডিএসআর (বহরমপুর) এবং জেলা রেজিষ্ট্রারে দফতর। দফতরের চেয়ার-টেবিল, নথিপত্র রাখার পরে কর্মীদেরও বসার জায়গার অভাব রয়েছে। ওই সরকারি দফতরের ভেতরে পাশাপাশি দু’জন স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলাও করার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয়। দেবাশিসবাবু বলেন, “রেকর্ড রুমে কোনও জায়গা নেই। পর পর আলমারি সাজিয়ে নথিপত্র রাখার ফলে রেকর্ড রুমে ঢোকাও যায় না। এখন আমাদের কম পক্ষে আরও ২০ হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গা প্রয়োজন। বাড়ি ভাড়া করে দফতর স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।”
অফিসে স্থান সঙ্কুলান হয় না। অগত্যা এভাবেই অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা রেজিষ্ট্রারের অধীনে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যে ১৮টি অফিস রয়েছে, তার মধ্যে বহরমপুরের জেলা রেজিষ্ট্রার এবং লালবাগ ও ভরতপুরের দুটি এডিএসআর কার্যলয় পূর্ত দফতরের অধীনে। বাকি অফিসগুলি ভাড়া বাড়িতে চলছে। তবে জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসে জেলার দূর-দূরান্তের পাত্রপাত্রী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন এসে বসার জায়গা না পেয়ে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি মাথার উপরে কোনও ছাদ না থাকায় রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতেও তাঁদের আশ্রয়হীন হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় বলেও অভিযোগ।
দোতলা জেলা রেজিষ্ট্রার দফতরের ঢোকার মুখে ও সিঁড়ির জায়গা দখল করে থাকেন বিভিন্ন দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার। ফলে দাঁড়ানোরও জায়গার অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে জমি ও অন্যান্য রেজিষ্ট্রি করতে আসা মানুষেরও ভিড় লেগেই রয়েছে দফতরে। ওই ভিড়ের মাঝে বিয়ের সাজে পাত্রপাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকতেও সংকোচ বোধ করেন। ভিড় থেকে নিজেদের আড়াল করতে তাঁরা রাস্তার পাশে দফতরের গা লাগোয়া বারান্দায় এসে বসে বসেন। কিন্তু সেখানেও রেহাই নেই।
দলিল লেখক অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক মহিবুল ইসলাম বলেন, “ওই অসুবিধার কথা জানিয়ে জেলা রেজিষ্ট্রারে কাছে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। বসার ঘরের বন্দোবস্ত করে দেওয়া থেকে শৌচালয় নির্মাণের জন্য আন্দোলনও করেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।”
সরকারি ওই গাফিলতির কারণে জেলা রেজিষ্ট্রার দফতরে রেজিষ্ট্রির সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কমেছে। সে কথা জেলা রেজিষ্ট্রারও স্বীকার করছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী তিনটি এবং হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী ৪টি রেজিষ্ট্রি হয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, “বসার জায়গার অভাব-সহ বিভিন্ন অসুবিধার কারণে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের কাছে রেজিষ্ট্রি বিয়ের ভিড় বাড়ছে। আমাদের দফতরে এলে ঘন্টার পর ঘন্টা তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের কাছে গেলেই ১০ মিনটের মধ্যে বিয়ের পর্ব মিটে যায়। তাহলে তাঁরা আমাদের কাছে কেন আসবেন?”
যাঁরা আসছেন তাঁদের জন্য কি একটু ভাবা যায় না?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.