থমকে অনুদান, ছাদহীন বহু পরিবার
রকারি অনুদানে পাকা দেওয়াল আর করোগেটেড শিটের চালার দোতলা বাড়ির স্বপ্ন দোখানো হয়েছিল বছর খানেক আগে। প্রাথমিক ভাবে ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকায় ‘আমার বাড়ি’ ও ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পের উপভোক্তাদের প্রথম দফার ৪০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছিল। কাজ শুরু হয়েছিল কিন্তু অচিরেই থমকে গিয়েছিল কাজ।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার টাকা আর আসেনি। ফলে মুর্শিদাবাদ জেলার হাজারের বেশি হতদরিদ্র পরিবার বছর খানেক ধরে প্রায় উদ্বাস্তুর জীবন কাটাচ্ছেন। মাথার উপর ছাউনি খুইয়ে তাঁদের গত বছরের বর্ষা কেটেছে চরম দুগর্তিতে। বছর ঘুরে আরও একটা বর্ষা সামনে। দুর্গতির দ্বিতীয় মরসুমের জন্য বুক বাঁধছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই সেই অসম্পূর্ণ বাড়িরও হতশ্রী অবস্থ। ঝড়ে টিঁকলে হয়!
কেন্দ্রীয় যোজনার ওই টাকা আবাসন ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর ঘুরে উপভোক্তাদের কাছে কবে পৌঁছবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কোনও আধিকারিকই। জেলায় ওই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক নিরঞ্জন কুমার। তাঁর দায় এড়ানো জবাব, “ওই ব্যাপারে আমি কথা বলতে পারব না।” জেলাশাসক রাজীব কুমারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের জেলা আধিকারিক অশোক পাইক চৌধুরি বলেন, “ওই প্রকল্পের বকেয়া টাকার একটি অংশ রাজ্যের আবাসন দফতর থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচর্নী বিধির কারণে ওই টাকা আপাতত খরচ করা যাচ্ছে না।”
অসম্পূর্ণ ‘আমার বাড়ি’। গত এক বছর ধরে টালির ছাউনি দেওয়া জায়গায় বসবাস। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
২০১২-২০১৩ অর্থবর্ষের ওই প্রকল্পটি পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার বছর খানেক আগে শুরু হয়ে মাঝপথে থমকে রয়েছে। ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধির আওতায় পড়ার কথা নয় বলে জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানানো হয়েছে। তাহলে কেন উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করা যাবে না? এ বার অশোকবাবুর জবাব, “দফতরের উর্ধতন কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি, তাঁরা কি বলেন?” বছর খানেক আগে শুরু করা ওই প্রকল্পের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মধ্যে এত গা ছাড়া ভাব থাকলেও মাস ছয়েক আগের ২৯ ডিসেম্বর বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারে ৫০ লক্ষা টাকা খরচের সরকারি জনসভায় ‘মিনি মহাকরণ’ নিয়ে হাজির থাকা মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘুদের জন্য কত বড় কাজ করছেন তা জানাতে ‘আমার বাড়ি’ ও ‘গীতঞ্জলি’ প্রকল্পের উল্লেখ করেছিলেন।
মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির ডাহাপাড়া পঞ্চায়েতের কুডুলপাড়া গ্রাম সংসদের দিনমজুর জারব শেখের স্ত্রী ডলিনা বিবি বলেন, “টালির চালা আর কঞ্চির বেড়ার উপর কাদামাটি লেপা দেওয়ালের বাড়ি ছিল। ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকায় ইটের দেওয়াল আর করোগেটেড চালের বাড়ির স্বপ্ন দেখালো সরকার। ৪০ হাজার টাকাও দিল। তারপর হাত গুটিয়ে নিল।” ওই পঞ্চায়েত সমিতির তেঁতুলিয়া-খোঁয়াড়পাড়ার সাইমুদ্দিন শেখ ওরফে কালীরামেরও একই দশা। তিনি বলেন, “আগের ঘর ভেঙে সরকারি টাকায় নতুন ঘর তৈরি শুরু করি। এখন সে ঘরও নেই। নতুন ঘরও বিশ বাঁও জলে।”
মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই পঞ্চায়েত সমিতিতে এ রকম ভুক্তভোগী পরিবারের সংখ্যা ৪০টি যাঁরা প্রথম দফার ৪০ হাজার টাকা বাড়ি তৈরিতে খরচ করে ইউটিলাইজেশান সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন, অথচ দ্বিতী ও তৃতীয় দফার একটি টাকাও পাননি।” মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের বি ডি ও মনোজকুমার দাস বলেন, “জেলাপ্রশাসন থেকে টাকা না পাওয়ার ফলে ওই সংকট তৈরি হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার বকেয়া টাকা না দেওয়ায় বহরমপুর ব্লকে আমার বাড়ি প্রকল্পের ১৩০টি পরিবারের বাড়ি তৈরি মাঝপথে থমকে রয়েছে। খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার টাকা না পাওয়ায় বছর খানেক ধরে সেখানে ওই দুই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অন্তত ১০০টি বাড়ি অসর্ম্পূণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.