আইনি যুদ্ধের লাভ, বিজ্ঞাপন ছাড়াই ক্রিকেট দূরদর্শনে
ল ঢাকছে না বিজ্ঞাপনে!
বেসরকারি চ্যানেলে ক্রিকেট দেখতে বসলে ক্রীড়াপ্রেমীদের অভিযোগ থাকে, বিজ্ঞাপনের রমরমায় অনেক সময়েই ‘মিস’ হয়ে যায় ওভারের শুরু বা শেষের বল। ধোনির হেলিকপ্টার শট বা অশ্বিনের ঘূর্ণিতে ব্যাটসম্যানের বোকা বনে যাওয়া এ সবের জন্য অপেক্ষা করতে হয় রিল্পের জন্য। কিংবা ধরা যাক, দূরন্ত সেঞ্চুরি করে আউট হয়ে ফিরছেন কোহলি, অথচ গোটা স্টেডিয়ামের উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি আর টিভিতে দেখা গেল না। কারণ, শুরু হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞাপন।
এখন কিন্তু ক্রীড়াপ্রেমীদের একটি অংশ বেজায় খুশি। কারণ, প্রসার ভারতী এবং ইএসপিএনের আইনি যুদ্ধে দূরদর্শনে ধোনিদের ম্যাচ বিজ্ঞাপনহীন।
প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ যেমন খুবই খুশি। তিনি বলছেন, “খেলার উত্তেজক মুহূর্তে বিজ্ঞাপনের জন্য আমরা অনেক সময় বল দেখতে পাই না। ওই বলে যদি কোনও উইকেট পড়ে বা কোনও ক্যাচ মিস হয়ে থাকে, তার জন্য আফশোস হয়। দূরদর্শনে বিজ্ঞাপন ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল দেখানোর খবরে আমি তাই যথেষ্টই উত্তেজিত।” স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, “আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৮৩ লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা। আমার বাড়ির লোকজনকে তো আর ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতে পারিনি। তাঁরা দূরদর্শনেই ভারতের বিশ্বজয় দেখেছিলেন। কোনও বিরতি ছাড়াই।”
প্রাক্তন ফুটবলার রাজেন্দ্র মোহনের কথায়, “টিভিতে ম্যাচ দেখার সময় মাঝখানে বিজ্ঞাপন দেখালে ম্যাচের উত্তেজনাটাই লঘু হয়ে যায়। আজকাল ম্যাচ চলাকালীন ঢালাও বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে খুব বিরক্ত লাগে। তাই অনেক সময় বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করে শুয়ে পড়ি।”
১৯৭৫-এর বিশ্বজয়ী হকি দলের অধিনায়ক অজিতপাল সিংহও বললেন, “ওভারের মাঝে খেলা দেখানো বন্ধ করে বিজ্ঞাপন দেখানোটা আমার পছন্দ নয়। তাতে খেলার তাল কেটে যায়।”
রবিবারের ফাইনালে অবশ্য তাল কাটার কোনও আশঙ্কা নেই। ‘মেঘ না চাইতেই জল’-এর মতো এমন এমন অভাবনীয় পরিস্থিতি তৈরি হল কী করে? ওই বিজ্ঞাপন নিয়েই যত গণ্ডগোল।
২০০৭ সালের ‘স্পোর্টস ব্রডকাস্ট ম্যান্ডেটরি সিগনাল শেয়ারিং অ্যাক্ট’ অনুযায়ী চিহ্নিত কিছু বেসরকারি চ্যানেলকে দূরদর্শনের সঙ্গে তাদের সম্প্রচার ভাগ করে নিতে হয়। ইএসপিএন সেই চিহ্নিত চ্যানেলগুলির মধ্যে পড়ে। আইন বলছে, ইএসপিএনের সম্প্রচারিত খেলা দেখাবে দূরদর্শন। পরিবর্তে দূরদর্শন যে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করবে, তা থেকে আয়ের ৭৫ শতাংশ তারা ইএসপিএন-কে দিতে বাধ্য থাকবে।
কিন্তু গোল বাধল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ক্ষেত্রে। ইএসপিএন দূরদর্শনকে সম্প্রচারের কথা জানায় টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র দু’দিন আগে। প্রসার ভারতীর পক্ষ থেকে তখন জানিয়ে দেওয়া হয়, এত অল্প সময়ে তাদের পক্ষে বিজ্ঞাপন জোগাড় করা অসম্ভব।
তখন ইএসপিএন বলে, দূরদর্শন তাদের বিজ্ঞাপনই দেখাতে পারে। কিন্তু ওই বিজ্ঞাপন থেকে ইএসপিএন যা আয় করেছে, তার ৭৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে। বেঁকে বসে প্রসার ভারতী।
কারণ বিজ্ঞাপন না তুলতে পারায় তাদের এ ক্ষেত্রে নিজস্ব আয় তো হবেই না, উল্টে হবে লোকসান।
সমাধান হিসেবে প্রসার ভারতীর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, যে সব বিজ্ঞাপন ইএসপিএন পাচ্ছে, সেগুলি ছাড়াই ‘ক্লিন ফিড’ দূরদর্শনকে দেওয়া হোক। তা হলে আর কোনও টাকা দিতে বাধ্য থাকবে না প্রসার ভারতী। ইএসপিএন রাজি না হওয়ায় বিষয়টি গড়ায় দিল্লি হাইকোর্ট পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়েই বিজ্ঞাপন-মুক্ত সম্প্রচারের অনুমতি পেয়েছে দূরদর্শন।
প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকারের কথায়, “জনতার প্রতি আমাদের যা দায়িত্ব, তা পালন করা হয়েছে। আমাদের কোষাগার খালি করে কোনও বহুজাতিককে মুনাফা আমরা দিইনি। কিন্তু অনেক দিন বাদে মানুষ এমন ভাবে ম্যাচ দেখবেন যে, তাঁদের মনে হবে যেন মাঠে বসে আছেন।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.