|
|
|
|
গোপীবল্লভপুরে অভিযুক্ত তৃণমূল |
বৃদ্ধ সিপিএম কর্মীর হাতে টাঙির কোপ
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
সন্ত্রাসের তালিকা বাড়ছে। এ বার বাড়িতে চড়াও হয়ে বৃদ্ধ সিপিএম কর্মীকে টাঙি-ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরের মানিচবাড়িয়া গ্রামের ঘটনা। রামজীবন খামরি নামে বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধ আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় অমরদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম সদস্য রামজীবনবাবুর দুই ছেলে সমীর ও ভগীরথ খামরিও জখম হন বুধবার বিকেলের ওই ঘটনায়। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে বেরিয়ে দুই ভাই গোপীবল্লভপুর থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু প্রায় ঘণ্টা খানেক থানায় বসিয়ে রাখার পর তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ঝাড়গ্রাম থেকে ডাকযোগে গোপীবল্লভপুর থানায় অভিযোগপত্রটি পাঠিয়েছেন ভগীরথবাবু। অভিযোগের প্রতিলিপি ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষের কাছেও। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
কিন্তু রামজীবনবাবুর উপরে হামলা হল কেন? সমীরবাবুর বক্তব্য, “মাস খানেক ধরে বাবাকে ও আমাদের সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বলা হচ্ছিল। আমরা রাজি হইনি। গত বুধবার বিকেলে গ্রামে পতাকা লাগানো নিয়ে গণ্ডগোল হয়। আমরা যুক্ত না থাকলেও ওই ঘটনার জেরে হামলা চালাতে পারে তৃণমূলের লোকেরা। হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা মানস পাত্র।” অভিযুক্ত মানসবাবু ফোন ধরেননি। তৃণমূলের গোপীবল্লভপুর ১ ব্লক সভাপতি সিংরাই মুর্মু বলেন, “প্রকৃত ঘটনা আমার জানা নেই। তবে ঘটনার দিন মানস এলাকায় ছিলেন না।” |
|
পুঝাড়গ্রামে আহত সমীর ও ভগীরথ খামরি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত বুধবার গোপীবল্লভপুর থানার মানিচবাড়িয়া গ্রামে সিপিএমের কর্মীরা দলীয় পতাকা লাগাতে গেলে বাধা দেন তৃণমূলের লোকজন। এই নিয়ে উভয়পক্ষে বচসা-মারামারি হয়। ভগীরথবাবু বলেন, “চাষের কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে খেতে বসেছিলাম সবে। বারান্দায় খাটিয়ায় ঘুমিয়ে ছিলেন বাবা। ৩৫-৪০ জন আচমকা টাঙি-বল্লম-ভোজালি হাতে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সকলেই প্রায় এলাকার পরিচিত মুখ। হামলাকারীরা ঘুমন্ত বাবার ডান হাতের কব্জিতে সজোরে টাঙির কোপ মারে। কব্জি থেকে হাতের অনেকটা কেটে ঝুলতে থাকে। তারপর ওরা বাবার মাথায় ও কোমরে টাঙি ও ভোজালি দিয়ে কোপাতে থাকে, মাটিতে ফেলে লাথি-ঘুসি মারে।”
ভগীরথবাবু বলেন, “বাবাকে বাঁচাতে গেলে আমি ও দাদা আক্রান্ত হই। দাদার মাথায় টাঙির কোপ মারা হয়। ভোজালির আঘাতে আমার বাম হাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আমাদের চিৎকার শুনে পড়শিরা ছুটে এলে হামলাকারীরা আমাদের বাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।”
দুই ভাইয়ের দাবি, “গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে এসেছিল। কিন্তু আমাদের উপেক্ষা করে চলে যায় ওরা। তবুও পড়শিদের সাহায্যে গোপীবল্লভপুর থানায় যাই। পুলিশ আমাদের গোপীবল্লভপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ৩ জনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু রামজীবনবাবুর হাতের জখম দেখে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বুধবার গভীর রাতে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাতে সমীরবাবু ও ভগীরথবাবু গোপীবল্লভপুর থানায় অভিযোগ জানাতে যান। যদিও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলেই তাঁদের দাবি। সিপিএমের অমরদা লোকাল কমিটির সম্পাদক সফিরুল্লা মিঞা বলেন, “এত বড় ঘটনা। অথচ শাসক দলের নেতা-কর্মীদের আড়াল করার জন্য পুলিশ অভিযোগ নিতে রাজি হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রামজীবনবাবুর দুই ছেলে গোপীবল্লভপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। ভগীরথ শুক্রবার মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ পাঠিয়েছে জানার পরই গোপীবল্লভপুর থানা থেকে আমাকে ফোন করে অভিযোগ নিতে চাইছে। কেন বৃহস্পতিবার সমীর ও ভগীরথবাবু থানায় যাওয়া সত্ত্বেও অভিযোগ নেওয়া হল না, সেই সদুত্তর আইসি আমাকে
দিতে পারেননি।”
ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষ অবশ্য বলেন, “ওরা নিশ্চয়ই পদ্ধতি মেনে অভিযোগপত্র জমা দেননি। থানা অভিযোগ না-নিলে উর্ধ্বতন আধিকারিকদের কাছে তো যেতে পারতেন।” দুই ভাইয়ের বক্তব্য, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দেখে উর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করার সাহস পেলাম না।” |
|
|
|
|
|