|
|
|
|
গোষ্ঠী-লড়াইয়ে রণক্ষেত্র কংগ্রেস অফিস |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
ঠিক যেন সিনেমার গ্যাংওয়ার। প্রকাশ্যেই বন্দুক উঁচিয়ে গুলি চালানো হচ্ছে। রাস্তার এ দিক থেকে ও দিকে উড়ে গিয়ে পড়ছে ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল। বাঁশ দিয়ে পরের পর গাড়ির কাঁচ ভাঙছেন দলীয় কর্মীরা। বিধায়কের চলন্ত গাড়ির
কাঁচে উড়ে গিয়ে পড়ল পাথর। আতঙ্কে দৌড়চ্ছেন পথ চলতি লোকজন। কংগ্রেসের দু’পক্ষের গোলমালের জেরে আজ দুপুরে এমনই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রাঁচির ঝাড়খণ্ড প্রদেশ কংগ্রেস কার্য্যালয় ও তার আশপাশের এলাকা।
গোলমালের শুরু প্রদেশ দফতরের ভিতরেই। অল্পক্ষণের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে প্রদেশ দফতরের বাইরের রাস্তায়। দলীয় সূত্রের খবর, ধানবাদ এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক মান্নান মল্লিক ও বোকারোর বেরমোর বিধায়ক রাজেন্দ্র সিংহের সমর্থকদের মধ্যে গোলমাল হয়। প্রথমে হাতাহাতি ও পরে গুলির লড়াই পর্যন্ত গড়ায়। গুলিতে মহঃ আসলাম নামে এক কংগ্রেস কর্মী আহত হন। তিনি মান্নান শিবিরের লোক বলেই দাবি করা হয়েছে। ঘটনার পরে রাজেন্দ্রর ছেলে অনুপ সিংহের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মান্নান মল্লিক। অনুপ ঝাড়খণ্ড যুব কংগ্রেসের সভাপতিও। |
|
কংগ্রেসের গোষ্ঠী-কোঁদল নেমে এসেছে রাস্তায়। শুক্রবার রাঁচিতে মুন্না কামদার তোলা ছবি। |
ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের দায়িত্ব পাওয়ার পরে দলের বিধায়ক ও সাংসদদের নিয়ে আজ প্রথম বৈঠক ডেকেছিলেন এআইসিসি সম্পাদক বি কে হরিপ্রসাদ। রাজ্যসভার সাংসদ তথা কর্ণাটক কংগ্রেসের এই নেতা সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের দায়িত্বে এসেছেন। কথা ছিল দলীয় বিধায়ক ও সাংসদদের প্রত্যেকের সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলবেন। কিন্তু দলীয় কর্মীদের বিশৃঙ্খলার জেরে সবটাই ভেস্তে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে হরিপ্রসাদ ও অন্যান্য কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রদেশ অফিসের বাইরে বেরিয়ে এসে দু’পক্ষের লোকজনকেই থামানোর চেষ্টা করেন। তবে তাতে কোনও লাভ হয়নি। প্রথম দিন এসেই এমন ঘটনায় তিনি নিজেই অপ্রস্তুত। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুখদেব ভগতকে ঘটনার তদন্ত করে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তাঁকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হরিপ্রসাদ। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যত বড় নেতাই হোক না কেন ঘটনার পিছনে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হবে তাঁকে দলে রাখা হবে না।”
কংগ্রেস কর্মীরা জানাচ্ছেন, সংগঠন মজবুত করার বিষয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে হরিপ্রসাদ বৈঠক শেষ করার পরেই গোলমাল শুরু হয়। মান্নান তখন হরিপ্রসাদের সঙ্গে দেখা করে বেরোচ্ছিলেন। তখন রাজেন্দ্রর ছেলে, অনুপের নেতৃত্ব কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মী সমর্থকরা মান্নানকে লক্ষ্য করে কটুক্তি করেন। মান্নানপন্থীরাও অনুপ ও তার দলবলের দিকে তেড়ে যান। ধাক্কা দেওয়া হয় প্রবীণ বিধায়ক মান্নানকে। শুরু হয় দু’ পক্ষের মধ্যে বচসা। তারপরে তা গড়ায় হাতাহাতিতে। ইতিমধ্যে মান্নান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি চলাকালীন হঠাৎই শূন্যে গুলি চালাতে শুরু করে দুই বিধায়কের দেহরক্ষীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ মতো মান্নানের দেহরক্ষী গুলি চালাতেই কংগ্রেস অফিসের বারান্দা থেকে সাফারি পড়া কয়েক জন পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, কংগ্রেস অফিসের ভিতর থেকে রাজেন্দ্র সিংহের নিরাপত্তা কর্মীরাই গুলি চালায়। রাজেন্দ্র সিংহ অবশ্য তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “চব্বিশ ঘন্টা কাটতে দিন। প্রদেশ সভাপতির রিপোর্টেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
সূ্ত্রের খবর, দুজনেই কয়লা খনি অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা। এলাকার দখলদারি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে অনেকদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। দিন কয়েক আগে প্রদেশ অফিসে, এক দলীয় বৈঠকে মান্নানকে অপমান করেন অনুপ। আজকের ঘটনা
তারই জের বলেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের ধারণা। |
|
|
|
|
|