|
|
|
|
ছক-ভাঙা সফরে ঢাকাকে মৈত্রী-বার্তা প্রণবের |
শঙ্খদীপ দাস ও আশিস বসু • পালাটানা (ত্রিপুরা) |
তিস্তা জলবণ্টন চুক্তিতে যে এখনও তাঁর আপত্তি, সে কথা ক’দিন আগেই কেন্দ্রকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধায়। স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এ ব্যাপারে কেন্দ্রেরও হাত-পা বাঁধা। কিন্তু অপারগতার সেই পটভূমিতে দাঁড়িয়েও শক্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিবিড় সহযোগিতার প্রশ্নে ঢাকাকে আজ মৈত্রী বার্তা দিতে চাইলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
পালাটানায় আজ একটি গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। সেই প্রকল্প পত্তনে ঢাকার সহযোগিতার জন্য প্রণববাবু যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন, তেমনই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে দিল্লির তরফে যথাসম্ভব সাহায্যেরও আশ্বাস দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্পর্কের প্রতীক এই প্রকল্প। পারস্পরিক এই সহযোগিতা শুধু দু’দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে তা-ই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে মজবুত করতেও সহায়ক হয়ে উঠবে।”
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক শান্তির প্রশ্নে দিল্লি বরাবরই ঢাকাকে পাশে চায়। তবে অনেকের মতে, রাষ্ট্রপতি আজ যে বার্তা দিলেন, তা হাসিনার পক্ষেও ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ নির্বাচনের আগে সাম্প্রতিক পুরভোটে হারের মুখ দেখতে হয়েছে আওয়ামি লিগকে। এই অবস্থায় প্রণববাবুর প্রশংসা হাসিনার হাত মজবুত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। |
|
পালটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পাশে ত্রিপুরার রাজ্যপাল
দেবানন্দ কোঁয়ার ও মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী |
মূলত ঢাকাকে বার্তা দিতেই যে তাঁর পালাটানা আগমন, সে কথা এ দিন গোপন রাখেননি রাষ্ট্রপতিও। বিদ্যুৎ প্রকল্পটির উদ্বোধনের পর তাঁর বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত উন্নয়নশীল দেশ। রোজই কোনও না কোনও কারখানা বা প্রকল্প গড়ে উঠছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সচরাচর এ সব প্রকল্পের উদ্বোধনে যান না। তবে এই প্রকল্পটির গুরুত্ব ভিন্ন। প্রকল্পটির জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহের স্বার্থে বাংলাদেশ যদি না তাদের সড়ক ও বন্দর ব্যবহার করতে দিত, তা হলে এত শীঘ্র বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। প্রণববাবুর বলেন, “এ জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নয়াদিল্লি কৃতজ্ঞ।” আজকের অনুষ্ঠানে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক করিমও উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে উদ্দেশ করে প্রণববাবু বলেন, “আপনি আমাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে নিশ্চয়ই জানাবেন।”
প্রশ্ন হল, এই বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও কি শেষ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঢাকার অসন্তোষ প্রশমন করতে পারবে দিল্লি? জবাবে এক কূটনীতিক বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে দিল্লির সীমাবদ্ধতার কথা ঢাকাকে জানানো হয়েছে। তবে প্রণববাবুর ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হল, তাঁর কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনেক। অথচ তিনি যে রাজ্যের মানুষ, সেই রাজ্যই সব থেকে বেশি তিস্তা চুক্তিতে বাধা দিচ্ছে। তাই যেন আজ প্রোটোকল ভেঙে ঢাকাকে বার্তা দিতে চাইলেন তিনি। বোঝাতে চাইলেন, তিস্তা বাদ দিয়েও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আরও অনেক বিষয় রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রসারের জন্য উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির তরফেও নয়াদিল্লির ওপর চাপ রয়েছে। ঢাকাকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানান মানিক সরকার। তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক, জল, রেল ও আকাশপথে যোগাযোগ না বাড়ালে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির অনগ্রসরতা কাটবে না।
পালাটানার প্রকল্পটি থেকে ৭২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির চাহিদা মেটানোর পরেও তার মধ্যে ৯৮ মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই বিদ্যুৎ ঢাকা চাইছে। তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রের খবর, যেহেতু পালাটানার প্রকল্পটি গ্যাস ভিত্তিক, এবং সেই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এমনিতেই সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তাই সম্ভবত ওই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ না-ও দেওয়া হতে পারে। রাষ্ট্রপতি আজ বলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বের মতো ও-পার বাংলাতেও বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করছে। ভারত-বাংলাদেশ একটি যৌথ গ্রিড গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও চলছে। শীঘ্রই তা সম্পন্ন হবে।”
পালাটানায় যে বিদ্যুৎ প্রকল্পটির আজ উদ্বোধন হল, তা এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্যাস ভিত্তিক পরিবেশ সহায়ক প্রকল্প। তাঁর প্রকল্পটি উদ্বোধন করতে আসার এটিও অন্যতম কারণ বলে জানান রাষ্ট্রপতি। এই প্রকল্পের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের থেকে ১৬ লক্ষ ২০ হাজার কার্বন ক্রেডিট পাবে ভারত। সেটাও একটা রেকর্ড।
|
পুরনো খবর: নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপতি |
|
|
|
|
|