|
|
|
|
পাহাড় থেকে জল নেমে ভাসছে দিল্লি-হরিয়ানাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ে এখন অশনি সঙ্কেত দেখছে দিল্লি-হরিয়ানা।
উত্তরাখণ্ডে হড়পা বান ও লাগাতার বষ্টিতে নদীগুলোয় যে জলস্ফীতি হয়েছে, তা এখন উদ্বেগে রাখছে দিল্লি প্রশাসনকে। ইতিমধ্যেই হরিয়ানার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে হীরাকুঁদ ব্যারাজ থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে হরিয়ানা সরকারও। ইতিমধ্যেই চলতি সপ্তাহে প্রায় ১০ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে হরিয়ানা। যার জেরে দিল্লির যমুনা পারের নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি সরকার। গত বুধববার থেকেই যমুনার বিপদসীমার প্রায় তিন মিটার উপর দিয়ে বইছে। ১৯৭৮-এর পর যমুনার জল এত বাড়েনি বলেই জানিয়েছে সরকার। গত চব্বিশ ঘণ্টায় হরিয়ানা বা দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে বৃষ্টি না হলেও যে ভাবে প্রাক্বর্ষাতেই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আসল বর্ষা শুরু হলে রাজধানীর পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় দিল্লিবাসী।
দিল্লি প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই নদী খাত উপচে গিয়ে যমুনার জল নিচু এলাকা ভাসিয়ে দিতে শুরু করেছে। যার জন্য যমুনা ও হিন্ডন নদী সংলগ্ন প্রায় ৩০টি গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। প্রায় দশ হাজার মানুষকে ওসমানপুর, যমুনা বাজার, ভজনপুরা, শাস্ত্রী পার্ক, তিব্বত মার্কেট এলাকা থেকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। শাস্ত্রী পার্কের কাছে যমুনার জল প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো রেল-রোড ব্রিজ ছুঁয়ে ফেলায় দু’দিনের জন্য ওই সেতু দিয়ে সমস্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নদী সংলগ্ন নিচু এলাকা থেকে দুর্গতদের সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সরকার ৬২টি মোটর বোট নামিয়েছে।
এ দিকে যে ভাবে যমুনার জল বাড়ছে তাতে আগামী দিনে নিচু এলাকাগুলিতে পানীয় জলের সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দিল্লি প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জলের উৎসগুলি নদীর জলের ডুবে যাওয়ায় ওই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই দিল্লি জল বোর্ডের পক্ষ থেকে ওই এলাকাগুলিতে পানীয় জল পাঠানো শুরু হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে বহু পরিবার এখন থেকেই পানীয় জল মজুত করে রাখা শুরু করায় প্রকৃত দুর্গতরা খাবার জল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি জল কমে গেলে পর্যাত পরিকাঠামোর অভাবে ত্রাণ শিবিরে থাকা পরিবারগুলির মধ্যে টাইফয়েড, কলেরার মতো জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মতোই দিল্লিতেও প্রাক্ বর্ষার বৃষ্টিতেই দিল্লিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে অপরিকল্পতি নগরোন্নয়নকেই দায়ী করেছে দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্সের ভূগোল দফতর। দিল্লি ও নয়ডার দ্রুত নগরোন্নয়ন কী ভাবে যমুনা ও হিন্ডন নদীর উপর প্রভাব ফেলেছে, তার উপর সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালায় ওই দফতর। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গত ১৫ বছরে দ্রুত মুছে যাচ্ছে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার সবুজ। জলাভূমি বুজিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় আবাসন প্রকল্প। জলাশয় বুজে যাওয়ায় বৃষ্টির জল সোজা নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, আবাসন নির্মাণের স্বার্থে ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৩৬ শতাংশ অরণ্য ধ্বংস হয়েছে। ফলে আগামী দিনে আরও বড় মাপের বন্যার আশঙ্কা করছে দিল্লির পরিবেশবিদরা। |
|
|
|
|
|