মৃত ৫৫০ ছাড়াল, বাড়তে পারে বহু গুণ
বশিষ্ট বলতে খালি গর্ভগৃহটুকু।
আর তার আশপাশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লোহার চাঙড়, কাঠের টুকরো, ঢাউস মাপের পাথর। কাছে গেলে দেখা যাবে চাঙড়ের তলায় চাপা পড়ে রয়েছেন বহু মানুষ। বেশির ভাগই এসেছিলেন কেদারনাথ দর্শনে। কিন্তু আচমকা হড়পা বান আর ধসের জেরে পালানোর ফুরসতটুকু মেলেনি। উদ্ধারকাজ যত এগোচ্ছে, পরিষ্কার হচ্ছে কেদারের ছবিটা। শুক্রবার ফের নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এখনও প্রায় আড়াইশো মানুষ আটকে রয়েছেন কেদারনাথে।
শুক্রবার আরও ১৩টি চপার পাঠিয়েছে বায়ুসেনা। সব মিলিয়ে কেদার-সহ বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে আপাতত কাজ করছে প্রায় ৪৩টি চপার। ধারাসু ও গৌচরে দুটি হেলিপ্যাড চালু করেছে বায়ুসেনা। আইটিবিপি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর আগেই হাত মিলিয়েছিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে। শুক্রবার রেল আবার নতুন টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে। উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়া যাত্রীদের ফেরাতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
কেদারনাথ মন্দিরের চাতাল। শুক্রবার সেখানে শুধু দলা পাকানো মৃতদেহ। ছবি: এপি
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে উদ্ধার কাজ। নদী বয়ে চলেছে খর স্রোতে। আর তার উপর দিয়েই দড়ির সেতু তৈরি করেছে উদ্ধারকারী দল। সেই টলমল সেতু বেয়ে এ পারে আসার অপেক্ষায় কয়েকশো মানুষ। অথচ এক বারে এক জনই পার হতে পারে সেই সেতু। অধৈর্য হয়ে উঠছেন আটকে পড়া মানুষ। আকুল প্রশ্ন বাণে জর্জরিত উদ্ধারকারীরা কখন পার হবেন তাঁরা? আদৌ পার হতে পারবেন তো? দিন কয়েক আগেই খুব কাছ থেকে নিজেদের পরিজনদের অসহায় মৃত্যু দেখেছিলেন এঁদের কেউ কেউ। সে স্মৃতি মেলাতে না মেলাতেই ফের শুরু হয়েছে মৃত্যুর সঙ্গে ভারসাম্যের খেলা।
মৃতদেহের সংখ্যা দেখে কপালের ভাঁজ বাড়ছে উত্তরাখণ্ড সরকারের। সরকারি সূত্রে খবর, শুক্রবার হরিদ্বারে গঙ্গার দু’ধার থেকে ৪০টি দেহ মিলেছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়েছে। এখনও ৫০ হাজার মানুষ আটকে। আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যাটা আরও বহুগুণ। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৪,০০০ জনকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি পরিদর্শনে আগামিকাল উত্তরাখণ্ড যেতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দে। ত্রাণকার্যে সাহায্যের জন্য শুক্রবার কংগ্রেসের সব সাংসদ ও বিধায়ককে নিজেদের এক মাসের বেতন দিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। একই সঙ্গে সাংসদদের প্রত্যেককে তাঁদের নিজেদের তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে জমা দিতে বলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছে আমেরিকা থেকেও। বিভিন্ন রাজ্যের তরফেও ত্রাণ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি এসেছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতির রোষে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া উত্তরাখণ্ডের জনজীবনকে স্বমহিমায় ফেরাতে যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে কেন্দ্র ও উত্তরাখণ্ড সরকার। সমালোচকদের প্রশ্ন, প্রকৃতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে এই তৎপরতা কোথায় ছিল? উত্তরাখণ্ডে যেমন নদীতে ঢালাও বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া চলছে, তেমনই অবাধে চলছে গাছ-কাটা।
সেই সমালোচনায় কান নেই কৃষিমন্ত্রী হরক সিংহ রাওয়াতের। মৃত্যুপুরী কেদারের অবস্থা দেখে তিনি বিহ্বল। কেদারকে ফের বাসযোগ্য করে তুলতে যে বহু বছর সময় লাগবে, তা মেনে নিচ্ছেন তিনি।
তত দিন নিজেরই হাতে খোঁড়া ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াবে উত্তরাখণ্ড।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.