|
|
|
|
বিচারের অপেক্ষায় আমিনুলের পরিবার |
এখনও আতঙ্কে কড়েয়ার সেই নির্যাতিতা কিশোরী |
শমীক ঘোষ |
কামদুনির ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতার পথে জনজোয়ার। কিন্তু কলকাতারই পাম অ্যাভিনিউয়ের এক চিলতে ঘুপচি ঘরে এখনও আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছে ১৬ বছরের এক কিশোরী ও তার পরিবার। সুবিচারের আশায় দিন গুনছে প্রতিবাদের মাসুল দিয়ে আত্মঘাতী যুবক আমিনুল ইসলামের পরিবারও।
নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে মিছিলের ঢেউ দু’টি পরিবারের দরজায় পৌঁছয়নি এ দিন। দু’-একটি প্ল্যাকার্ডে অবশ্য চোখে পড়েছে আমিনুলের নাম। অথচ দু’টি পরিবারেরই দুঃসময় কিন্তু কাটেনি এখনও। কেন?
ওই কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ যাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে, তাদের সঙ্গীরা এখনও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। কিশোরীর দাবি দুষ্কৃতীদের সঙ্গীরা তাকে ও তার আত্মীয়দের ধমক দিয়ে বলছে, আদালতে ফের সাক্ষ্য দিতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
২০১২ সালের অক্টোবর থেকে এই কিশোরীর পাশে দাঁড়িয়ে বিচার চেয়ে দোরে দোরে ঘুরেছিলেন আমিনুল ইসলাম। পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে হেনস্থা হতে হয়েছিল আমিনুলকে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের একাংশের দহরম মহরমের জেরে আমিনুলের নামে ভুয়ো মামলা দায়ের করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দেন আমিনুল। এ বছরের ১ জানুয়ারি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আমিনুলের ঘটনা নিয়ে সাময়িক কিছুটা শোরগোল হয়েছিল। প্রতিবাদে রাস্তাতেও নেমেছিলেন নাগরিক সমাজের একাংশ। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কড়েয়া থানার দুই সাব ইনস্পেক্টর এবং দুই কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়। বদলি করা হয় কড়েয়ার তৎকালীন ওসি, ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে। গ্রেফতার করা হয় ধর্ষণে অভিযুক্ত শাহজাদা ও সেলিমকে। পুলিশ কর্তারা সেই সময় আশ্বাস দেন, নির্যাতিতা বিচার পাবে। আমিনুলের পরিবার বিচার পাবে। আলিপুর আদালতে ধর্ষণের মামলা চলছে। চার্জশিটও পেশ হয়েছে।
তা হলে এখনও আতঙ্কে কেন কিশোরীর পরিবার?
শুক্রবার বাড়িতে বসে ওই কিশোরী বলে, “গত ২০ মার্চ আলিপুর আদালতে আমার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। তার দিন সাতেক আগে থেকে শাহজাদা ও সেলিমের সঙ্গী আমির, শামসের আর কামরু পাড়ায় প্রতিদিনই আমাকে আর আমার ভাইবোনকে হুমকি দিয়ে বলত, সাক্ষ্য দিতে গেলে মেরে দেবে। এখনও আমি পাড়ায় বেরোলে ওরা কটূক্তি করছে। সাক্ষ্য দিলে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে।” কিশোরীর অভিযোগ, আদালতে গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২০ মার্চ সে ভয়ে কিছু বলতেই পারেনি।
২০ জুন প্রতিবেশী এক মহিলার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল বলে কিশোরী এ দিন জানায়। অভিযোগ, তার দিন দশেক আগে শামসের, আমির ও কামরু দলবল নিয়ে ওই মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে। ১৭ জুন কড়েয়া থানায় এ ব্যাপারে জিডি-ও করেন ওই মহিলা। তা সত্ত্বেও পুলিশ ওই কিশোরী বা অন্য সাক্ষীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের কর্তাদের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক তদন্তে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তবে এলাকার কয়েক জন মামলার অন্যতম সাক্ষী এক মহিলাকে মারধর করেছিল বলে অভিযোগ এসেছিল। অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু তারা জামিন পেয়ে গিয়েছে।
আর, প্রতিবাদী যুবক আমিনুলের পরিবার কেমন আছে? আমিনুলের ভাই আনোয়ার বলেন, “যে পুলিশ কর্মীদের জন্য দাদা আত্মহত্যা করল, তাদের এখনও শাস্তি হল না।” পুলিশ জানায়, বিভাগীয় তদন্ত শেষ হয়নি। আমিনুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলার তদন্তও চলছে।
আপাতত আমিনুলের পরিবার আর ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবার, উভয়েই জনস্মৃতিতে ফিকে হয়ে গিয়েছেন।
|
পুরনো খবর: ধর্ষকের শাস্তি চাওয়ায় হেনস্থা, যুবক আত্মঘাতী |
|
|
|
|
|