|
|
|
|
মাঝরাতে কালীঘাট থানায় ভাঙচুর, ধৃত ৬ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছেই কালীঘাট থানায় ভাঙচুর ও পুলিশকে মারধরের ঘটনা ঘটল। অভিযোগের আঙুল উঠল তৃণমূলের দিকে। দল অবশ্য তা মানতে চায়নি।
ঘটনার সূত্রপাত কর্তব্যরত পুরকর্মীদের উপরে হামলার ঘটনা থেকে। পুলিশ জানায়, খবর আসে মত্ত অবস্থায় এক দল যুবক তাণ্ডব চালাচ্ছে। ঘটনাস্থলে গেলে তাঁরা পুলিশকর্মীদেরও মারধর করেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, এক সাব-ইনস্পেক্টর ও এক কনস্টেবলের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে নেন তাঁরা। পরে তাঁদের কালীঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও রীতিমতো ভাঙচুর এবং তাণ্ডব চালানো হয় বলে অভিযোগ তুলেছে পুলিশ। অভিযোগ, তাঁদের প্রহারে জখম হয়ে এক গ্রিন পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি শুরু হয় কালীঘাট থানা থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে। ঘটনাস্থল থেকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি হাঁটা পথে বড়জোর মিনিট দশেক।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার হওয়ার পরে থানার লক-আপে বন্দি হয়েও ধৃত যুবকেরা চোটপাট করতে থাকেন, যাতে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা না করানো হয়। পুলিশের বক্তব্য, ধৃত ছ’জনের এক জন কৌশিক সাহা নামে এক স্থানীয় তৃণমূলকর্মী। বাকি পাঁচ জন হলেন প্রসেনজিৎ দাস, কৃশানু দাস, অভিষেক সাহা, সোমনাথ দাস ও দীপকুমার ঘোষ। কৃশানু রেলকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী মজুমদার অবশ্য দাবি করেন, ধৃতেরা তাঁর দলের কি না, তা তাঁর জানা নেই। |
|
এ ভাবেই ভাঙচুর হয়েছে কালীঘাট থানায়। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ৪৩-এ কালী টেম্পল রোডে পুরসভার কাজকে কেন্দ্র করেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। ওই জায়গায় পুরসভা পানীয় জলের পাইপলাইনের কাজ করছে। রাস্তা খুঁড়ে ওই কাজ মূলত রাতেই হয়। এর জন্য রাস্তার একটি অংশ ট্রাফিক পুলিশের গার্ড ওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ একটি গাড়ি নিয়ে কৌশিক ও তাঁর পাঁচ শাগরেদ সদানন্দ রোড থেকে ওই রাস্তায় ঢুকে পড়েন। তাঁদের সকলের বাড়ি কালীঘাট থানার আশপাশে ও লাগোয়া এলাকায়। কিছু দূর গিয়েই তাঁদের গাড়ি আটকায় পুরসভার ওই কাজের জন্য।
পুলিশ জেনেছে, এর পরেই ওই যুবকেরা গাড়ি থেকে নেমে পুরকর্মীদের জিজ্ঞেস করেন, এত রাতে ওই জায়গায় কীসের কাজ হচ্ছে? কৌশিক পুরকর্মীদের কাছে ওয়ার্ক অর্ডার দেখতে চান। পুরকর্মীরা তা দেখাতে অস্বীকার করলে ওই ছ’জন তাঁদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান এবং পুরকর্মীদের মারধর করেন বলেও অভিযোগ। আক্রান্ত পুরকর্মীদের কয়েক জন ছুটে গিয়ে কালীঘাট থানায় খবর দেন। খবর দেওয়া হয় ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রীদেবীকেও। তিনিও থানায় ফোন করে অভিযোগ জানিয়ে পুলিশের সাহায্য চান। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ওই যুবকেরা তাঁদের উপরেও চড়াও হন। অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করার সময়ে দু’জন কনস্টেবলের গলা থেকে হার ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন তাঁরা। এক সাব-ইনস্পেক্টর ও এক কনস্টেবলকে মারধর করে তাঁদের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে নেন বলে অভিযোগ। দীপক বেরা নামে এক গ্রিন পুলিশ তাঁদের হাতে গুরুতর জখম হন।
পুলিশের অভিযোগ, মারধরের সময়ে কৌশিক সাহা নামে ওই যুবক নিজেকে তৃণমূল যুবার নেতা বলে বারবার পরিচয় দিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে থানা থেকে আরও পুলিশকর্মী পৌঁছন। তখনও ওই যুবকেরা পুলিশকে হুমকি দিতে থাকেন। তার পরে তাঁদের সকলকে কালীঘাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই কৌশিক মোবাইল থেকে ফোন করে আরও ১০-১২ জন বন্ধুকে চলে আসতে বলেন। অভিযোগ, তাঁরা কাছাকাছি আসতেই থানার ভিতরে তাণ্ডব শুরু করেন কৌশিক ও তাঁর সঙ্গীরা। থানার এক তলায় ডিউটি অফিসারের ঘরে ঢোকার মুখে একটি আয়নার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়, থানার চেয়ার-টেবিলও উল্টে ফেলে ভাঙচুর করা হয় বলে পুলিশের অভিযোগ।
মঞ্জুশ্রীদেবী শুক্রবার বলেন, “তৃণমূলের যে সব যুবক আমার কাছে আসেন, এঁরা তাঁদের কেউ নন। তবে পুরসভার একটা কাজ করাতে যেখানে এত পরিশ্রম করতে হয়, সেখানে অকারণে এই ভাবে কাজে বাধা দেওয়া এবং পুরকর্মীদের মারধর করার জন্য দোষীদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।” কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে।” ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। |
|
|
|
|
|