বর্ষার শুরুতেই বেহাল হয়ে পড়েছে সাঁইথিয়া-সিউড়ি রাজ্য সড়ক। অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারে দেরি হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
জেলার দুই ব্যস্ততম শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার (ভায়া ইটাগড়িয়া) দশা অবশ্য আজকের নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই ওই রাস্তা নিয়ে তাঁরা সমস্যায় আছেন। এমনকী প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি বলে তাঁদের দাবি। ফলে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা যেন নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা সংস্কারের দাবিতে পরিবহন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বহু বার বাস ধর্মঘট ডেকেছেন। এমন কী আশে পাশের বহু গ্রাম একজোট হয়ে পথ অবরোধও করেছেন। পরে প্রশাসনের তরফে দাবি মানার অশ্বাসও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত জেলা পূর্ত দফতর থেকে জানানো হয়, সিউড়ি-সাঁইথিয়া, মোট ১৮ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য ব্যাকওয়ার্ড রিজিওনাল ফান্ড থেকে ১৪.৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছর বর্ষার পরে। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই কাজ অনেক দেরিতে শুরু হওয়ায় সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না। তার উপরে মাঝে একবার কাজ বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। ফের কাজ শুরু হলেও তার গতি তেমন আশাপ্রদ নয় বলেই দাবি করছেন তাঁরা। ফলে বর্ষায় ওই রাস্তা যে আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নেবে, তা মেনে নিচ্ছেন জেলা পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরাও। সব স্তরের মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন বলে তাঁদের আশঙ্কা। কনুড়ি গ্রামের অপূর্ব সাহা কিংবা মদনপুরের মনোজ মণ্ডল, প্রত্যেকেই বলছেন, “ঝুঁকি নিয়ে আমরা ওই রাস্তা পার হই। প্রশাসন তাড়াতাড়ি রাস্তাটি না সারালে সমস্যা আরও বাড়বে।” এ দিকে বাস মালিক কল্যাণ সমিতির সহ-সম্পাদক পতিতপাবন দে ও বাস মালিক সমিতির কর্মী তরুণ সেনদের ক্ষোভ, “বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়েই রাস্তার বেহাল অবস্থা। যে রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাই দায়, সেখানে কী ভাবে বাস চালাই তা আমরাই জানি!”
পূর্ত দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সাঁইথিয়া রেল সেতুর পর থেকে এই রাস্তাটি পূর্ত দফতরের আওতায় পড়ে। কাজেই সেখান থেকেই গত বর্ষার শেষে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেল সেতুর পর থেকে সিউড়ির দিকে যেতে শহরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত, ১ কিমি’র বেশি রাস্তায় এখনও কোনও কাজই শুরু হয়নি। এ দিকে মাস তিন-চার আগে সাঁইথিয়া শহরের শেষ প্রান্ত থেকে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল। ৭-৮ কিলোমিটার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িও করা হয়। কিন্তু বর্ষার আগে সেই কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় রাস্তার ওই অংশের অবস্থা আরও খারাপ হয়। মাঠপলশা থেকে কুমুড়ি পর্যন্ত ৪ কিমি রাস্তার অবস্থা তুলনায় ভাল হলেও মাঠপলশা থেকে সাঁইথিয়া পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা তথৈবচ।
চালক মিলন মণ্ডল, পলাশ মণ্ডল, মহম্মদ ইসমাইলদের অভিযোগ, রেল সেতুর পর থেকে শহরের পশ্চিমের শেষ প্রান্ত পর্যন্তই একই অবস্থা। বাসস্ট্যান্ডের সামনের চত্বর-সহ রাস্তার বিভিন্ন জায়গার অবস্থাও কার্যত একই। সাঁইথিয়ার স্কুলশিক্ষক সোমনাথ দত্তের কটাক্ষ, “রীতি মতো মাছ চাষ শুরু করা যাবে!” এ দিকে পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শিবশঙ্কর চক্রবর্তীর অবশ্য সাফ কথা, “রাস্তার কাজ চলছে। বর্ষার আগে কাজ শেষ হবে কি না, এখনই তা বলা সম্ভব নয়।” ফলে বর্ষা শুরু হতেই আপাতত একরাশ আশঙ্কা নিয়েই থাকতে হচ্ছে সাঁইথিয়া-সিউড়ি রাস্তা ব্যবহারকারীদের। |