প্রায় বছর কুড়ি আগে শুরুটা হয়েছিল ফ্রান্সে। ভাবনাটা ছিল সোজাসাপ্টা- ফরাসি ভাষায় ‘ফেৎ দো লা মিউজিক’, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘মেক মিউজিক’। ফোক হোক বা পপ, জ্যাজ হোক বা ক্ল্যাসিকাল সব রকমের সঙ্গীতকে নিখরচায় সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটা দিন। এমন একটা দিন, যে দিন পেশাদার থেকে অ্যামেচার সব ধরনের শিল্পীরাই শহরজুড়ে রাস্তায় বা কোনও খোলা জায়গায় গান গাইবেন বা কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন। কোথাও কনসার্ট হলে চলবে অনুষ্ঠান, এবং তা অবশ্যই বিনামূল্যে। প্রতি বছর ২১ জুন ‘ফেৎ দো লা মিউজিক’ বা ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’ অথবা ‘বিশ্ব সঙ্গীত দিবস’ উদ্যাপনের শিকড়টা সেখানেই।
তার পরে সেই ভাবনাটা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। জার্মানি থেকে মিশরে, ইতালি থেকে অস্ট্রেলিয়ায়। আর এ বার সেই সুরে সুর মেলাচ্ছে কলকাতাও। আজ, বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে যখন পারি-র রাস্তায় জমে উঠবে গানের আসর, অথবা কলম্বিয়ার কোনও কনসার্ট হলে শোনা যাবে আফ্রো-আমেরিকান জ্যাজ, তখনই এ শহরের পথেও খুঁজে পাওয়া যাবে সেই আন্তর্জাতিকতাকে।
এ বছরের সঙ্গীত দিবসে কলকাতার মানুষকে এই আনকোরা অভিজ্ঞতার সাক্ষী করবে ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’। ডিরেক্টর স্তেফান আমালির জানাচ্ছেন, প্রায় ৭০টি ব্যান্ড অংশ নেবে এই উদ্যাপনে। তাদের মধ্যে রয়েছে পুলিশ ব্যান্ড, লোস আমিগোস এবং ক্যালকাটা মিউজিক সোসাইটি। |
এ ছাড়াও থাকবে দ্য মঙ্কবেরিজ, ইকুইলিব্রিয়াম, স্পেকট্রাম, অক্সিজেন বা নস্টালজিয়ার মতো কিছু ব্যান্ড। থাকবে কিছু শিল্পীর একক অনুষ্ঠানও।
এ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল জয়ের ১০০ বছর। তাকে স্মরণ করে সকাল-সকাল জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা। একটা ট্রাককে ব্যবহার করা হবে খোলা মঞ্চ হিসেবে। তার উপরে লাইভ শো করবেন শিল্পীরা। ট্রাকটি ঘুরবে শহরের রাস্তা ধরে। কোনও কোনও জায়গায় থেমে গিয়ে লাইভ কনসার্ট শুরু হবে। পথচলতি মানুষেরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেখতে ও শুনতে পাবেন সব কিছু। এ ছাড়াও শহর জুড়ে বিভিন্ন শপিং মল, পার্ক, হোটেল, সিনেমা হল অথবা বইয়ের দোকানেও অনুষ্ঠান চলবে। তালিকায় রয়েছে অক্সফোর্ড বুকস্টোর, ব্রিটিশ কাউন্সিল, নন্দন কিংবা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, হেদুয়া পার্ক, পার্ক সার্কাস ময়দানের নাম। এ ভাবেই বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের আন্তর্জাতিক মেজাজটাকে ধরবে শহর।
আয়োজকদের তরফে সৌম্য রায়চৌধুরী জানালেন, শোভাযাত্রাটি শেষ হবে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে এসে। সেখানে বিকেল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান। অবশ্য সারা দিন ধরেই সেখানে অনুষ্ঠান চলবে। এবং যথারীতি সেখানে অংশ নেবেন পেশাদার-অপেশাদার নির্বিশেষে অগুনতি শিল্পী। সব বয়সের সব মেজাজের মানুষের পছন্দের খেয়াল রাখতে থাকবে নানা স্বাদের গান। বিভিন্ন দেশের লোকসঙ্গীত থেকে শুরু করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, জ্যাজ, রক, ব্লুজ থাকবে সবই। সেখানকার অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও শহরের কয়েকটি ক্লাবে আরও রাত পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান।
অন্য দিকে, এ বারের সঙ্গীত দিবসে সঙ্গীতশিল্পী সৌম্যজিৎ ও সৌরেন্দ্র আয়োজন করছেন এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। সেখানে তাঁদের সঙ্গে এক দিকে যেমন অংশ নেবেন উষা উত্থুপ, শ্রাবণী সেন, সোমলতার মতো শিল্পীরা, তেমনই আবার ২০ জন সদস্যের একটি ইউথ কয়্যার সিম্ফনির মাধ্যমে তৈরি করবেন আবহ। তবে এই অনুষ্ঠানের অন্য এক বিশেষ দিকও রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এমন কয়েক জন শিল্পী যাঁরা পথে পথে গান শুনিয়ে বেড়ান। থাকবেন এক কীর্তনশিল্পী যিনি ট্রেনে গান করেন, থাকবেন মেদিনীপুরের এক লোকশিল্পী এবং এক বাঁশিওয়ালা। আর রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবে প্রতিভাবান পাঁচ খুদে, ভিক্ষে করে যারা পেট চালায়।
এ ভাবেই বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে সঙ্গীতের মধ্য দিয়েই হবে সমন্বয়। গানের সুতোয় এ মহানগরের প্রাণের সুর বাঁধা পড়বে বিশ্বের সঙ্গে।
|
কাল, শনিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের ঘোড়াধরায় রামকিঙ্কর মঞ্চে হবে পুতুল নাটক ‘শ্রীচৈতন্যলীলা’। উদ্যোক্তা ‘পিপলস্ ফোরাম ফর চৈতন্য মহাপ্রভু’। ভাবনা ও পরিচালনায় ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি। সংগঠনের অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্র জানান, গত দু’বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার ভিত্তিতে পুতুল নাটকটি তৈরি করা হয়েছে। নাট্যরূপ দিয়েছেন দেবলীনা দাশগুপ্ত। আবহসৃষ্টি করেছেন কবি শুভ দাশগুপ্ত। মোট চল্লিশটি পাপেট বানানো হয়েছে। |