দেড় বছর ভাতা বন্ধ, বিপাকে প্রতিবন্ধী যুবক
ভাতা পেয়েছিলেন মাসখানেক। তারপর হঠাৎ করেই ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের এক প্রতিবন্ধী যুবক। বছর দেড়েক ধরে পঞ্চায়েত অফিস থেকে ব্লক অফিস, সেখান থেকে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও ভাতা মেলেনি কাশীপুর পঞ্চায়েতের মধ্যবাজারের লালচাঁদ গরাই।
জন্ম থেকেই লালচাঁদের হাঁটার ক্ষমতা নেই। দু’টি পা অস্বাভাবিক রকমের সরু। হাতে-পায়ে ভর দিয়ে হামাগুড়ি তিনি চলাফেরা করেন। স্বাস্থ্য দফতর পরীক্ষা করে জানিয়েছে, তাঁর প্রতিবন্ধকতা ৮০ শতাংশ। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সত্যনারায়ণ বাউরির উদ্যোগে লালচাঁদের প্রতিবন্ধী ভাতা শুরু হয়েছিল। ২০১১ সালের গোড়া থেকে মাসে ৪০০ টাকা করে ভাতা পেতে শুরু করেন। তাঁর কথায়, “জমি-জমা নেই। ছোটদের টিউশন পড়িয়ে বাবা সামান্য রোজগার করেন। ভাতার টাকায় বাবা, মা ও আমার দু’বেলার ডাল-ভাত নিশ্চিত হয়। সে সুখ টিকল না। মাস পাঁচেক পরে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারি, প্রশাসন আমার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে।”
কাশীপুর ব্লক অফিসে খোঁজ করতে গিয়ে লালচাঁদ জানতে পারেন, পঞ্চায়েত থেকে জানিয়েছে, তিনি অন্য ভাতা পান। তাই প্রতিবন্ধী ভাতা তিনি পাবেন না। এর পর থেকেই লালচাঁদের ভাতা আদায়ের লড়াই শুরু হয়। লালচাঁদের দাবি, “আমি অন্য কোনও ভাতা পাই না। পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে সে কথা জানাতে ওরা আমার ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে। ওঁদের কথায় ফের ব্লক অফিসে যাই। তখন ব্লক অফিসের কর্মীরা আমি যে অন্য কোনও ভাতা পাইনা তা পঞ্চায়েত থেকে লিখে আনতে বলেন। ২০১১ সালের অগস্ট মাসে পঞ্চায়েতের ওই স্বীকারোক্তি ব্লক অফিসে জমা দিই। কিন্তু তার পরেও ভাতা চালু হয়নি।” মাস খানেক পরে ব্লক অফিসে খোঁজ করতে গেলে এ বার তাঁকে ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা করতে বলা হয়। দফায় দফায় সচিত্র ভোটার পরিচয় পত্র, ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের নকল চাওয়া হয়। জমা করেও ভাতা চালু হয়নি।
ব্লক অফিসের সামনে লালচাঁদ গরাই।
এরপর পঙ্গু শরীর টেনে লালচাঁদ রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে যাতায়াত শুরু করেন। লালচাঁদ জানান, মহকুমাশাসক সেই ব্লক অফিসেই যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ দেন। গত বছরের জুলাই মাসে ব্লক অফিসের এক কর্মী তাঁকে পঞ্চায়েত অফিসে ডেকে একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু ভাতা চালু হয়নি। এ বার জেলাশাসকের অফিসে যাতায়াত শুরু করেন লালচাঁদ। আশ্বাস ছাড়া অবশ্য আর কিছু জোটেনি। হয়রানির কথা অক্টোবরে ফের বিডিও, মহকুমাশাসক ও জেলাশাসককে চিঠি লিখে জানান। তাঁর অভিযোগ, “চিঠির জবাব আসেনি। ব্লক অফিসে খোঁজ করতে গেলে এক কর্মী আমাকে জানান, দারিদ্র সীমার নীচে থাকলেও আমি ভাতা পাওয়ার মতো গরিব নই!”
অথচ জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেই যে কেউ ওই ভাতা পাওয়ার যোগ্য। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এ ক্ষেত্রে বিচায্য নয়। তা হলে লালচাঁদের ভাতা চালু হচ্ছে না কেন? কাশীপুরের বিডিও তপন ঘোষাল বলেন, “সেই সময় আমি এখানে ছিলাম না। তাই ভাতা বন্ধের কারণ জানি না। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।” কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জানান, ভাতা প্রাপকদের সম্পর্কে পঞ্চায়েতের কাছে প্রশাসন তথ্য চেয়েছিল। কাশীপুর পঞ্চায়েত ভুল তথ্য দেওয়ায় লালচাঁদের ভাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনিও জেলা প্রশাসনের কাছে লালচাঁদের ভাতা চালুর অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই তথ্য পাঠানোর দায়িত্বে থাকা কাশীপুর পঞ্চায়েতের কর্ম সহায়ক চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের দাবি, “লালচাঁদ যে পঞ্চায়েত থেকে আর কোনও ভাতা পান না, তা আমরা লিখিত ভাবেই ব্লক অফিসকে জানিয়েছিলাম। আমরা কোনও ভুল তথ্য দিইনি।” খবর পৌঁছেছে কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার কাছে। তাঁর আশ্বাস, “বিষয়টি জেলাশাসককে দেখতে বলেছি।” জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “ওঁর ফাইল খুঁজে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.