সম্পাদক সমীপেষু...
মুখোশের আড়ালে আসল মোদী?
অমিতাভ গুপ্তের প্রবন্ধ (‘মুখোশের আড়ালে আসল মোদী’কে’, ৪-৬) পড়লাম। গত বারো বছরের নিরবচ্ছিন্ন মোদী-শাসনে গুজরাতের অর্থনৈতিক উন্নতি ভারত তথা বিশ্বের নজর কেড়েছে। শিল্পপতিরা সাধারণত রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্বন্ধে মন্তব্য করেন না, এবং টাটা গোষ্ঠী এ ব্যাপারে দু’শো শতাংশ সতর্ক কিন্তু তার মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুজরাতে ন্যানো কারখানা পলায়নের পরিপ্রেক্ষিতে রতন টাটার ‘গুড এম-ব্যাড এম’ মন্তব্য স্মর্তব্য। স্বভাবতই এই বাড়বাড়ন্ত কংগ্রেসের সহ্য হবে না, তাতে দোষেরও কিছু নেই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, মোদীর তত্ত্বাবধানে গুজরাতের পাশাপাশি কংগ্রেস কোনও কিরণকুমার রেড্ডির অন্ধ্রের উন্নতি বা তরুণ গগৈ-এর অসমের উন্নতি দেখাতে পারছে না। তাই মোদীর ছিদ্রানুসন্ধান।
আমরা এত দিন জানতাম, যে কোনও জাতির পক্ষে অর্থনৈতিক ভাবে উঠে দাঁড়াবার, তার পর হেঁটে বা দৌড়ে চলার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে শিল্পায়ন। এই ভাবেই যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপান, জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া আজকে প্রথম বিশ্বেও অগ্রণী, মাও-বিধ্বস্ত চিন আজকের পৃথিবীতে এক অর্থনৈতিক দৈত্য। কিন্তু, অমিতাভ গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘একবগ্গা শিল্পায়নের ঘোড়া ছোটানো এটাকেই উন্নয়ন বলে চালানোর মধ্যে ‘নাকি’ একটা চরম অন্যায় রয়েছে!’’ শিল্পের ফলে পরিবেশ দূষিত যাতে না হয় তার দিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। যেহেতু জমি ছাড়া অন্তরীক্ষে শিল্পস্থাপনের প্রযুক্তি এখনও আমাদের আয়ত্ত হয়নি, তাই জমিহারাদের পুনর্বাসন করতে হবে এ সব নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু এ সব সুনিশ্চিত করতে গিয়ে ‘একবগ্গা শিল্পায়ন’ করা চলবে না, এ রকম থিয়োরি অনেকটা মাথাধরা সারাতে মাথা কেটে ফেলার মতো।
ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শিল্পের মাধ্যমেই, যা শিল্পপতিকে আরও আরও ধনী করে, একমাত্র তার মাধ্যমেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হতে পারে, এটা কি পরীক্ষিত সত্য নয়? পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতি অপরপক্ষে শ্রমিকের স্বর্গরাজ্য সোভিয়েত দেশ ফেল মেরে যাওয়া কি তাই-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না? তা হলে গুজরাতে যে ‘উন্নয়নের নামে কিছু লোকের লাভের বহর বেড়েই চলেছে’, তাতে দোষের কিছু আছে কি?
২০০২ সালের গোধরায় এক গাড়ি হিন্দু তীর্থযাত্রীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার পরবর্তী দাঙ্গার জের এখনও মোদীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমি বহু মোদী-বিরোধীকে জিজ্ঞাসা করেছি আচ্ছা, মোদী মুসলমানদের মারতে ঠিক কী করেছিলেন বলুন তো? ব্যতিক্রমহীন ভাবে, প্রথমে তাঁরা ফুঁসে ওঠেন, পরে আমতা-আমতা করেন। বস্তুত, এগারো বছর ধরে একটি ব্যক্তির পিছনে এই বিরতিহীন ভাবে লেগে থাকা, মামলা করা, সেই মামলা রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া, সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা একটি বিশেষ অনুসন্ধানকারী সংস্থা প্রয়োগ করা এবং সব কিছুর শেষে অশ্বডিম্ব প্রসব এতে কী বোঝায়?
অমিতাভ গুপ্ত লিখেছেন, ‘সরসঙ্ঘচালক মোহনরাও ভাগবত মোদীকে যতটা অপছন্দ করা সম্ভব, ততটাই করেন’! অথচ, গোয়ায় যে রাজনাথ সিংহ নরেন্দ্র মোদীকে অভিষিক্ত করলেন, তার পিছনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ইচ্ছা কাজ করেছে। ‘অপছন্দ’ করার নমুনা?
‘গুজরাতে তাঁর শাসনে মুসলমানরা সচেতন ভাবেই ব্রাত্য’। কুতুবুদ্দিন নামে এক দর্জির কথা মনে আছে? সজল চোখে জোড়হাত করে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার, যাঁর ছবি সারা ভারতে ছড়িয়ে গিয়েছিল? পশ্চিমবঙ্গের পরম ধর্মনিরপেক্ষ ও মুসলিমদরদি বামফ্রন্ট সরকার সেই কুতুবুদ্দিনকে পশ্চিমবঙ্গে এনে দর্জির দোকান খুলে প্রতিষ্ঠা করে দিলেন। তার পর, উত্তেজনা থিতিয়ে গেলে দেখা গেল, কুতুবুদ্দিন চাটিবাটি গুটিয়ে আবার সেই মোদীর গুজরাতেই পাড়ি দিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.