কলেজ -ফেরত বাসস্ট্যান্ডে নামার পরে কামদুনির সেই ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর কাকার। এলাকায় ছাতু বেচেন তিনি। সেই কাকা জানান, ভাইঝিকে একা বাড়ি ফিরতে দেখে তিনি তাঁকে বলেন, ‘‘সাবধানে যাস।’’ তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ধর্ষিত ও খুন হন সেই তরুণী। সেই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার মিছিলে তিনি থাকবেন বলে বুধবার জানান কাকা। তাঁর কথায়, “ওর মুখটা এখনও চোখে ভাসছে। আমি অবশ্যই কলকাতার মিছিলে হাঁটতে যাব।”
কাল, শুক্রবার কলকাতায় বিশিষ্টজনেদের ডাকা মিছিলে যোগ দিতে মুখিয়ে আছেন ধর্ষিত ও নিহত তরুণীর প্রতিবেশী সুকান্ত কয়াল থেকে শুরু করে এলাকার অন্য অনেক বাসিন্দাও। সুকান্তবাবুর কথায়, “এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। আমাদের গ্রামের মেয়েকে মনে করে এত লোক পথে নামছেন। আমরা কী করে বসে থাকি ! ” একই ভাবে গেদে ও গাইঘাটার ধর্ষিত -নিহত স্কুলছাত্রীদের প্রতিবেশী -পরিচিতেরাও মহানগরের পথে নামবেন বলে জানিয়েছেন মিছিলের আয়োজকদের একাংশ। মিছিলের ডাক দিয়ে বিবৃতিতে সই করেছেন শঙ্খ ঘোষ, মহাশ্বেতা দেবী, মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন প্রমুখ। ২১ জুন বেলা ৩টেয় কলেজ স্কোয়ারে মিছিল শুরু হওয়ার কথা। |
“জানি না বুদ্ধিজীবীরা কী চাইছেন?” বুধবার চুঁচুড়ার কর্মিসভায় বলেন
পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন সুব্রত বক্সীও। —নিজস্ব চিত্র |
মিছিলের আয়োজকদের তরফে রতন খাসনবিশ, দেবাশিস সরকার, চন্দন সেন ও বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তাঁরা জানান, গেদেয় নিহত মেয়েটির গ্রাম থেকে ১৫ জন এবং গাইঘাটায় নিহত মেয়েটির বাড়িরও কয়েক জন আসবেন। তাঁদের বক্তব্য, কামদুনির ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। দুর্বল ও গরিব ঘরের মেয়েরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা একটা সামাজিক ক্ষতি। ওই মেয়েদের নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শহুরে পরিবারের মেয়েদের মধ্যেও রাস্তায় বেরোনো নিয়ে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। এ -হেন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সজাগ হওয়ার ডাক দিচ্ছে এই মিছিল।
বিকাশবাবু কলকাতা পুরসভায় বামফ্রন্টের পুরবোর্ডে একদা মেয়র হয়েছিলেন। শুক্রবারের মিছিলের আয়োজকেরা কেউ কেউ সিপিএম -ঘনিষ্ঠ। তাই ওই মিছিলের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেও সন্দেহ দানা বাঁধছে কোনও কোনও মহলে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ -সব আসলে সরকারকে অপদস্থ করার রাজনীতি বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বিশিষ্টজনেদের ভূমিকা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, “মানুষ একটা জঘন্য অপরাধের প্রতিবাদ করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা খেয়াল করছি, রাজ্যের কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমস্যা তৈরি হলেই সেটাকে জিইয়ে রাখতে এবং অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী যেন ময়দানে নেমে পড়ছেন ! এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।”
এ দিন চুঁচুড়ায় দলের একটি কর্মিসভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, “মানুষ চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী কামদুনিতে যান। তিনি গেলেন। মানুষ চেয়েছিলেন, দোষীরা যেন গ্রেফতার হয়, শাস্তি পায়। দোষীরা গ্রেফতার হয়েছে। শুধু তা -ই নয়, মুখ্যমন্ত্রী আরও এগিয়ে তাদের চরমতম শাস্তির কথা বলেছেন। জঘন্যতম অপরাধের জন্য ফাঁসি চেয়েছেন। জানি না, এর পরেও বুদ্ধিজীবীরা কী চাইছেন ! ”
কালকের মিছিলের আয়োজকেরা বলেন, “এই মিছিল কোনও সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্য নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরোধিতা করাও এর লক্ষ্য নয়।” ধর্ষণের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী যে -ভাবে সংবাদমাধ্যমকে কটাক্ষ করেছেন, সেটাকে ‘গণতন্ত্রের উপরে আঘাত’ হিসেবে দেখছেন এই বিশিষ্টজনেরা।
|