|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
মনোজ নাগ (২৮)
স্ত্রী স্মিতা (২৮)
• মেয়ে (১.৫) • রাজ্য সরকারি সংস্থার কর্মী • পেনশন নেই, ছুটি বিক্রি ও গ্র্যাচুইটি আছে • স্ত্রী সরকারি স্কুলে পড়ান,
পেনশন রয়েছে • নিজেদের বাড়ি • সারাতে চাই ৫ লক্ষ • ফ্ল্যাট কিনতে দরকার ২০ লক্ষ • মেয়ের পড়াশোনার জন্য
সঞ্চয়ে উত্সাহী • দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা আছে • এসআইপি-তে আগ্রহী • লক্ষ্য সচ্ছল অবসর |
|
|
মাসে নিট আয় |
মনোজ: ২৬,০০০ |
স্মিতা: ২২,০০০ |
|
টাকা রাখেন (বছরে) |
• পিএফ (মনোজ) |
৩৬,০০০ |
• পিএফ (স্মিতা) |
১২,০০০ |
• এলআইসি এনডাওমেন্ট |
২,৩৯৭ (২০১৮ পর্যন্ত, বিমা মূল্য ১.৪ লক্ষ) |
• জীবন সরল |
১২,০১০ (২০২৫ পর্যন্ত, বিমা মূল্য ২.৫ লক্ষ) |
• জীবন সরল |
৫,৮৮০ (২০২৫ পর্যন্ত, বিমা মূল্য ১.২৫ লক্ষ) |
• জীবন তরঙ্গ |
৩৪,৩৬১ (২০২৬ পর্যন্ত, বিমা মূল্য ৫ লক্ষ) |
খরচ (মাসে) |
• সংসার চালাতে |
১৮,০০০ |
সম্পদ |
• স্থায়ী আমানত
১৫,০০০: (২০১৮ পর্যন্ত, পাবেন ৩৬,০০০)
৫০,০০০:
(২০১৪ পর্যন্ত, পাবেন ৫৪,০০০)
২০,০০০:
(২০১৬ পর্যন্ত, পাবেন ৩১,০০০)
২০,০০০:
(২০১৭ পর্যন্ত, পাবেন ৩১,০০০) |
• নগদ সঞ্চয়
২০,০০০ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
আজকের লেখা শুরুর আগে একটা কথা সবাইকে বলতে চাই। আমাদের কাছে প্রচুর চিঠি আসছে যাঁদের মধ্যে অনেকেই তরুণ দম্পতি বা সবেমাত্র নিজেদের চাকরি জীবন শুরু করেছেন, এখনও বিয়ে হয়নি। এ থেকে বলতে পারি, আজকের তরুণ প্রজন্ম এখন অনেক বেশি সঞ্চয় নিয়ে চিন্তিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে এঁদের অবসরের পর নিয়মিত পেনশনের সুবিধা নেই, তাই এখন থেকেই বেশি করে তাঁরা নিজেদের সম্পদ তৈরিতে আগ্রহী হয়েছেন। যা এক দিক থেকে ভাল। এতে পরবর্তী জীবনে চাপ কম পড়বে। বর্তমানে ঝঁুকি নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি হওয়ার কারণে অনেক বেশি লগ্নিও করতে পারবেন।
মনোজ ও স্মিতা এমনই এক তরুণ দম্পতি। চিঠি দেখে ভাল লাগল যে তাঁরা নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন এবং সেই অনুসারে সঞ্চয়ও শুরু করেছেন। পাশাপাশি, আবার পরিবার পরিকল্পনার দিকটিও মাথায় রেখেছেন। আপাতত মনোজ যে-কয়েকটি লক্ষ্যের কথা বলেছেন, তা পর পর সাজিয়ে নিলে দাঁড়ায়— |
লক্ষ্য |
ফ্ল্যাট কেনা ও বাড়ি সারানো
২০ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট কিনতে ন্যূনতম ডাউনপেমেন্ট করতে হবে ৩ লক্ষ টাকা। স্থায়ী আমানত ও নগদ যোগ করলেও এই টাকা এখন জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই যত দিন না টাকা হাতে আসছে, তত দিন ফ্ল্যাট কেনা স্থগিত থাকুক। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং ৫ বছরের লক্ষ্য নিয়ে এখনই ব্যাঙ্কে রেকারিং শুরু করুন। অথবা এসআইপিতে টাকা রাখুন। মাসে ন্যূনতম লগ্নি হতে হবে ৫,০০০ টাকা। এ থেকে আপনি ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড় করতে পারবেন।
অনেক ব্যাঙ্কই সম্পত্তির বদলে ঋণ দেয়। সাধারণত ব্যাঙ্কগুলি বাড়ির চরিত্র অনুসারে চলতি বাজার দরের ৫০-৬৫% ঋণ হিসেবে দিয়ে থাকে। বাড়ি সারানোর জন্য আপনি এই ঋণ নিতে পারেন। এ ভাবে ৫ বছরের জন্য ঋণ নিলে মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ১০,০০০ টাকা। ঋণ শোধ হয়ে গেলে আপনি নতুন ফ্ল্যাট কেনার কাজে হাত দিতে পারবেন।
সন্তানের পড়াশোনা
মনোজ ও স্মিতার দেড় বছরের মেয়ে রয়েছে। পাশাপাশি, আগামী বছরে আরও এক সন্তানের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। আগামী দিনে পড়াশোনার খরচ যে ভাবে বাড়ছে, তার জন্য এখন থেকে প্রস্তুত না-হলে মুশকিল। তাই আমার মতে, মনোজের স্থায়ী আমানতগুলি সন্তানের পড়াশোনার জন্য সরিয়ে রাখা জরুরি। পাশাপাশি, দুই সন্তানের কথা ভেবে দু’টি আলাদা এসআইপি শুরু করুন। যার মূল লক্ষ্যই হবে সেই অর্থ সন্তানের ১৮ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার কাজে লাগানো। এ ভাবে তাঁরা কত টাকা জমাতে পারবেন, তার আনুমানিক হিসাব দিলাম— |
প্রথম সন্তান |
লগ্নি:
সম্ভব্য রিটার্ন:
মেয়াদ:
সম্ভাব্য আয়: |
১,৫০০
১২%
১৭ বছর
৯.৯২ লক্ষ |
দ্বিতীয় সন্তান |
লগ্নি:
সম্ভব্য রিটার্ন:
মেয়াদ:
সম্ভাব্য আয়: |
১,৫০০
১২%
১৮ বছর
১১.৩৬ লক্ষ
|
|
স্মিতার স্বাস্থ্য বিমা |
স্মিতার নিজস্ব কোনও স্বাস্থ্য বিমা নেই। এমনকী মনোজের অফিসের বিমাতেও স্মিতার নাম নেই। ফলে তাঁর জন্য আলাদা স্বাস্থ্য বিমা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে কয়েকটি বিষয় দেখে নিন—
• বিভিন্ন সংস্থার বিমার প্রিমিয়ামের তুলনা করুন। সাধারণ ভাবে ৩ লক্ষ টাকার বিমার জন্য খরচ পড়বে ৪,২০০ টাকা বছরে (মাসে ৩৫০ টাকা)।
• অনেক সময়ে ফ্যামিলি ফ্লোটার পলিসি নিলে খরচ কম পড়ে।
• কোন কোন রোগের নাম রয়েছে, তা দেখে নিন। প্রথম কয়েক বছরে কী কী রোগের ক্ষেত্রে বিমার সুবিধা পাবেন না, তা ভাল করে দেখে নিন।
• পলিসির মধ্যে ক্যাশলেস সুবিধা ও হাসপাতালের নাম ভাল ভাবে দেখুন।
• এর সঙ্গেই কোনও রাইডার রয়েছে কি না, যাচাই করে নিন তা-ও। |
এসআইপি-র সাত সতেরো |
এসআইপি-র অন্যতম সুবিধা হল কোন সময়ে শেয়ার বাজারে লগ্নি করা উচিত, কত টাকা লগ্নি করা উচিত এই চিন্তা থেকে মুক্তি। কারণ নিয়মিত বেশি সময় ধরে নিজের পকেট বুঝে টাকা ঢালার সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনই দরকারে লগ্নি বন্ধের সুবিধাও রয়েছে। পাশাপাশি, জমানো টাকা নিজের পছন্দমতো সময়ে তুলেও নিতে পারবেন। দীর্ঘ দিন লগ্নি করায় ঝঁুকির পরিমাণও কিছুটা কমে। এক বার মাত্র চেক জমা দিয়ে সংস্থাকে নির্দেশ দিলেই হবে। পরের মাস থেকে আপনার বেছে দেওয়া দিনে অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা কেটে নেবে ফান্ড সংস্থা। এ ছাড়াও কী কী সুবিধা রয়েছে, আসুন এক নজরে দেখে নিই—
নিয়মানুবর্তিতা
সম্পদ গড়ে তোলার মূল মন্ত্রই হল নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করা। ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে যে-ভাবে অল্প অল্প করে প্রতি মাসে টাকা জমানো যায়, এসআইপি-তেও ঠিক সে ভাবেই সঞ্চয় করা যায়। প্রতি মাসে ন্যূনতম ৫০০ বা ১,০০০ টাকা লগ্নির সুবিধা থাকায় এক দিকে পকেটে চাপ পড়ে না, অন্য দিকে টাকা জমানোর অভ্যাসও তৈরি হয়।
চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ
প্রথমে হয়তো এসআইপি আকর্ষণীয় না-ও মনে হতে পারে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর চালিয়ে গেলে তা ভাল রিটার্ন দেবে। তাই কম বয়সেই এস আই পি-তে লগ্নি শুরুর পরামর্শ দেব।
ধরে নিন, এক জন ৩০ বছর বয়সে এসআইপি-তে বছরে ১০,০০০ টাকা লগ্নি শুরু করলেন। আর এক জন ৩৫ বছর বয়স থেকে একই টাকা জমালেন। ৬০ বছর বয়সে গিয়ে দেখা গেল প্রথম জন জমিয়েছেন ১২.২৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় জনের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৭.৮৯ লক্ষ। এ ক্ষেত্রে চক্রবৃদ্ধি সুদ ধরা হয়েছে ৮%। চক্রবৃদ্ধি সুদে সময় যত বেশি, সম্পদের পরিমাণও ততই বাড়বে। তাই, ৫০ হাজার টাকা বেশি লগ্নি করে প্রথম জন ৪ লক্ষ টাকার বাড়তি সম্পদ গড়ে তুলতে পেরেছেন। এস আই পি রিটার্নের চরিত্র নিয়ে গত সংখ্যাতেই একটি চার্ট দিয়েছি। দেখে নিতে পারেন সেটিও।
রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং
মূলত শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত এসআইপিগুলির ক্ষেত্রে এই বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা বেশি। বাজারের নিয়মে দাম কম থাকলে বেশি শেয়ার (ইউনিট) কিনবেন আপনি। আর দাম বাড়লে ঠিক উল্টোটা হবে। অর্থাত্ সব মিলিয়ে শেয়ারের গড় দাম অনেকটাই কম পড়বে। এ ভাবে লগ্নি করাকে বাজারের ভাষায় ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং’ বলা হয়। আর এই পদ্ধতিতে দীর্ঘ দিন ধরে লগ্নি করা হলে বাজারের ওঠা-পড়া আপনাকে ছুঁতে পারবে না। লগ্নিও থাকবে তুলনামূলক ভাবে সুরক্ষিত।
সব শেষে বলতে পারি, এস আই পি-তে লগ্নির আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিজের ফান্ড বাছুন। |
অবসরের আয় |
মনোজের পেনশন নেই। তাই এখন থেকেই সচ্ছল অবসর কাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমার পরামর্শ—
১) পিপিএফে প্রতি মাসে অন্তত ২,৫০০ টাকা রাখুন।
২) ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে মাসে ২,০০০ টাকার একটি রেকারিং চালু করুন। মেয়াদ শেষে যার পুরোটাই স্থায়ী আমানতে রাখুন। এ ভাবে অবসর নেওয়া পর্যন্ত লগ্নি চালিয়ে যান।
৩) ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে মাসে ২,০০০ টাকার এসআইপি করুন। এই খাতে লগ্নি কিন্তু প্রতি বছর নজরে রাখতে হবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাতে ঝঁুকি কমাতে সেগুলিকে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে বদলে নেওয়া যায়।
৪) ছুটি বিক্রির টাকার পুরোটাই অবসরের জন্য রাখুন।
|
জীবন বিমা |
মনোজের প্রায় ১০ লক্ষ টাকার জীবন বিমা আছে। তাই আপাতত জীবন বিমায় লগ্নি না-বাড়ানোই ভাল। বরং পরামর্শ দেব সুবিধা মতো পছন্দের অঙ্কের একটি টার্ম পলিসি করে নিতে।
এর পর আয় বাড়লে অবশ্যই বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আশা করব এই পরামর্শ আগামী দিনে মনোজ ও স্মিতাকে কিছুটা হলেও দিশা দেখাবে। শুভেচ্ছা রইল।
|
অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত। (ফাইল চিত্র) |
|
|
|
|
|