সিপিএমের ডাবলু আনসারির দিন গিয়েছে। এখন তৃণমূলের আজাদ মুন্সীর জমানা। কিন্তু মঙ্গলকোট বা কেতুগ্রামে এখনও সিপিএমের মতো ঘর গোছাতে পারেনি তৃণমূল।
সৌজন্যে, সেই গোষ্ঠী কোন্দল!
সিপিএমের জমানায় ‘ত্রাস’, আপাতত এলাকাছাড়া ডাবলু এক সময়ে পশ্চিম মঙ্গলকোটে কার্যত একতরফা ভোট করতেন। তাঁরই ডান হাত আজাদ এখন তৃণমূলে ভিড়ে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা লাটে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। রাজ্যে পরিবর্তনের আগে এবং পরেও ‘সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর’ বলে পরিচিত পশ্চিম মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রাম ১ ব্লকে আপাতত তৃণমূলেরই দাপট। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মঙ্গলকোটের পাঁচটি এবং কেতুগ্রাম ১ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে তারা।
কিন্তু মঙ্গলকোটের কিছু জায়গায় যেমন, কেতুগ্রামেও জোড়াফুলের পায়ে বিঁধেছে চোরকাঁটা। দলের প্রতি ক্ষোভে কখনও নির্দল সেজে, কখনও বিপক্ষের আস্তিনে লুকিয়ে যাঁরা হুল ফুটিয়ে চলেছেন। অন্যথায় মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে অন্তত আরও দু’টি করে পঞ্চায়েত তৃণমূল বিনা যুদ্ধে পেতে পারত। হিসেব তা-ই বলছে।
পশ্চিম মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা, পালিগ্রাম, লাখুরিয়া, চানক ও সদর মঙ্গলকোটে লড়াই ছাড়াই পঞ্চেয়েতের দখল পেয়েছে তৃণমূল। পূর্ব মঙ্গলকোটের ঝিলু ১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েতেও একই সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ওই দুই পঞ্চায়েতেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল গোষ্ঠীর নেতারা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝিলু ১ পঞ্চায়েতে জোট করে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। কিছু দিন পরেই দুই তৃণমূল সদস্য সিপিএমে যোগ দিলে পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে চলে যায়। সেই পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল তিনটি (৫, ৬, ৭ নম্বর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জিতেছে। বাকি ৬টি আসনের মধ্যে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা দু’টি করে আসনে লড়ছেন। ফলে ছ’টি আসনেই তৃণমূলের সঙ্গে বিপক্ষের লড়াই হচ্ছে সরাসরি। দু’টি আসনে বিক্ষুব্ধেরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে না পড়লে ভোটের আগেই পাঁচটি আসন পেয়ে পঞ্চায়েতের দখল পেয়ে যেত তৃণমূল। এখানেই পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন গত বারের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তপন ঘোষ। তপনবাবুকে প্রার্থী করবে বলেও শেষ পর্যন্ত প্রতীক দেয়নি তাঁর দল।
ঝিলু ২ পঞ্চায়েতে ১১টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে ২টি আসনে। কিন্তু বাকি ছ’টি আসনে দলের বিক্ষুব্ধরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত হস্তগত করার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। ওই এলাকায় তৃণমূল নেতা বাশেদ আলি এবং কাশেম কাজির সম্পর্কের কথা রাজ্য নেতারাও জানেন। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ওই দুই নেতার অনুগামী গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই লেগে রয়েছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকেও নামতে হয়েছে ময়দানে। দলের একাংশের ধারণা, প্রার্থীদের টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে দল বাশেদ আলিকে গুরুত্ব দেওয়ায় কাশেম কাজি বেঁকে বসেছেন। যদিও কেউ এই নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে নারাজ। কাশেম কাজির কথায়, “আমরা তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের স্থানীয় কিছু নেতা আমাদের মতো পুরনোদের গুরুত্ব দেননি। সে কারণে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেখাতে চাইছি, মানুষ পুরনো তৃণমূল কর্মীদেরই বিশ্বাস করে।” অন্য শিবিরের এক নেতার কথায়, “সিপিএমের সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের যে একটা বোঝাপড়া রয়েছে, প্রার্থী দেওয়ার ধরন থেকেই তা পরিষ্কার।”
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রামে ৪টি আসনেও প্রার্থী দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। শুধু তা-ই নয়। বাকি আসনগুলিতেও তাঁরা কংগ্রেসকে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নিরোলে ১০টি আসনের মধ্যে ৮টিতেই বিক্ষুব্ধরা নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। তবে এই পঞ্চায়েতে সিপিএম এবং কংগ্রেসও প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের একাংশের দাবি, কংগ্রেসের একটা বড় অংশ তাদের সমর্থন করছে। তাই বিক্ষুব্ধদের বাধা কাটাতে পারলে নিরোল ভাল ফলের সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁদের বাগে আনার চেষ্টাও চলছে। তেমনই এক বিক্ষুব্ধ নেতার দাবি, “আমার প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তা প্রত্যাহার করা যায়নি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জনগণের কাছে প্রচারপত্র বিলি করে জানিয়ে দেব, তৃণমূলের জোড়াফুল প্রতীকেই ভোট দিন।”
শেষমেশ সত্যি ফুল ফোটে না কি ‘এপ্রিল ফুল’, সে হিসেব তো পরে! |