নির্বাচন অনিশ্চিত। তবু তার পরোক্ষ দাপটে আয়োজন সম্পূর্ণ সত্ত্বেও বিয়ে পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। কেন? সহজ উত্তর: বিয়ে বাড়ির জন্য ভাড়া গাড়ি প্রায় দুষ্প্রপ্য হয়ে গিয়েছে। এমনকী ব্যক্তিগত গাড়ি নির্বাচনের চোখ রাঙানিতে সরকারি রিক্যুইজিশনের তালিকায় উঠে যাওয়ায় সে গাড়ি আর ঘরে নেই। ছাঁই হয়েছে নির্বাচনী কার্যালয়ে। গাড়ির এই প্রবল অভাবে বিয়ের তারিখই তাই পিছিয়ে দিতে হচ্ছে।
সব ঠিকঠাক চললে নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা ৬ জুলাই। তা হোক না অনিশ্চিত তার জেরে এলাকা থেকে বাস ও ছোট গাড়ি নেওয়ার ধুমে পরে গিয়েছে। ফলে বর বা কনে বিয়ের আসরে যাবেন কিসে? যানবাহনের আকালে তাই বেলডাঙাতেই বহু বিয়ে আপাতত স্তব্ধ।
সোমবার নির্বাচন কমনিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। তাই নির্বাচন অনিশ্চিত। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় বেলডাঙার সুদীপ মণ্ডল থেকে বহরমপুরের রবীন্দ্রনাথ পাল। তাদের কথায়, “জুলাইয়ের ৫ তারিখে বিয়ে। মে মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কিন্তু বিয়ের বাজার করতে নেমে সব চেয়ে বেশি সমস্যা গাড়ি পেতে। বরকে তো বিয়ে করতে যেতে হবে। তাদের সঙ্গে বরযাত্রী ও কন্যাযাত্রীও যাবে। না হলে বিয়ে কবে কারা? কিন্তু বাস নেই। তাই আমরা বিয়ের দিন পরিবর্তন করেছি।”
বেলডাঙার কুমারপুর গ্রামের বাসিন্দা পরিমল মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমার মেয়ের বিয়ে মালদহে। অনেক আগেই তা ঠিক হয়েছিল। কিন্তু পাত্রপক্ষের কথা মতো আমরা বিয়ের দিন এগিয়ে এনেছি। ৫ জুলাই থেকে এখন পয়লা জুলাই। এ ছাড়া আমাদের বাড়ি যে অঞ্চলে সেখানে বিগত নির্বাচনে হিংসা ছড়িয়েছিল। তাই ঝুঁকি নিলাম না। তা ছাড়া ওই দিন গাড়িও অমিল। তাই আমরা দিন এগিয়ে আনতে বাধ্য হলাম।” বহরমপুরের সৈদাবাদের পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নদিয়ার শান্তিপুরে বিয়ে। এতটা রাস্তা যেতে ভাল বাস ও বরের গাড়ি গত এক মাস ধরে খুঁজে চলেছি। শেষতক একটা পাওয়াও গিয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে বাস মালিক জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটবাবুরা বাস নিয়ে নিয়েছেন।” বেলডাঙা বোগুহারি এলাকার রেণুকা মণ্ডলের অভিজ্ঞতা:“আমার মেয়ে বিএড পড়ছে। পরীক্ষার পর বিয়ের তারিখ ঠিক করেছিলাম। কিন্তু এখন ভোট পড়ে গেল। কোচবিহারে বিয়ে। আমরা লাক্সারি এসি কোচ বাস অগ্রিম করেছিলাম। বাস মালিক গত সপ্তাহে আমাদের টাকা ফেরত দিল। ভোটর কাজে তার বাস নিয়ে নেওয়া হয়েছে।এখন তাই বিয়ে বন্ধ। আগে ভোট তারপরে বিয়ে!”
মুর্শিদাবাদ জেলার পরিবহণ ব্যবসায়ী সংস্থার তপন কুমার মণ্ডল বলেন, “ভোট অনিশ্চিত জানি। কিন্তু সরকারি রিক্যুইজিশন আমাদের হাতে। ফলে বিয়েতে অগ্রিম নিয়েও টাকা ফোরানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।” মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “বাসের চাহিদা অন্য বারের চেয়ে এ বার বেশি। ভোটের আগের দিন বিয়ে পড়ে যাওয়ায় বাসের একটা বড় সমস্যা হবে।” একেই বোধহয় বলে ভোট বড় বালাই! |