|
|
|
|
|
আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ |
মাঝরাতে ঘুমের মধ্যেও দেখে
ফেলি চন্দ্র বাউন্স করাচ্ছে
গৌতম ভট্টাচার্য • কার্ডিফ |
|
তিনি ডেনিস অ্যামিস। ভারতের বিরুদ্ধে রাক্ষুসে রেকর্ড সমন্বিত প্রাক্তন ইংল্যান্ড ওপেনার। ক্রিকেট ইতিহাসে
তারও
আগে
থাকবেন হেলমেটের প্রথম জন্মদাতা হিসেবে। ওয়ারউইকশায়ারের প্রাক্তন মহাকর্তা নতুন চিন্তার
দিশারী
হিসেবে
ইংরেজ
ক্রিকেটমহলে খ্যাত। মঙ্গলবার ট্রেডমিল থেকে নেমে এক রকম হাঁপাতে হাঁপাতে
বার্মিংহ্যামের
বাড়ি থেকে
ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারে। |
|
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কেমন দেখছেন?
অ্যামিস: খুব মন দিয়ে দেখছি। ইন্ডিয়া টিমকে দারুণ লাগছে।
প্র: ফেভারিট বলবেন?
অ্যামিস: নিশ্চয়ই। আমি বিলক্ষণ জানি যে ওয়ান ডে ম্যাচে নিশ্চিত ফেভারিট বলে কিছু হয় না। একটা ভাল ব্যাটিং বা বোলিং স্পেল সব ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমি এ-ও জানি যে ইংল্যান্ড জিতলে খুব খুশি হব। কিন্তু ক্রিকেট বুদ্ধি বলছে ধোনিরা জিতবে। পাকিস্তানকে যে ভাবে ওরা হারাল, এজবাস্টনে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি।
প্র: ইন্ডিয়ান টিমে কাকে ভাল লাগল?
অ্যামিস: শিখর ধবন ছেলেটা বেশ ব্যাট করে। ওপেনিং পেস বোলার দুটো খুব ভাল। বিশেষ করে কুমার। তাই তো?
প্র: ভুবনেশ কুমার!
অ্যামিস: ইয়েস ইয়েস। এই ছেলেটা খুব বুদ্ধি করে সুইং করাচ্ছে। আমাদের সময়ে ছিল সোলকার আর আবিদ আলি। কোনও রকমে ২/৩ ওভার করে বল করত। এরা তার চেয়ে অনেক এগিয়ে। আর ধোনি!
প্র: ধোনি কী?
অ্যামিস: ধোনির ক্যাপ্টেন্সিটা আমার খুব পছন্দ। নিঃশব্দ একটা কন্ট্রোলিং স্টাইল আছে ওর, যেটা আমার দারুণ লাগে।
প্র: এজবাস্টন মাঠেই লারার ৫০১। তখন আপনিই কাউন্টির মহাকর্তা ছিলেন।
অ্যামিস: হ্যাঁ ফাইভ হান্ড্রেডটা অদ্ভুত ভাবে হয়েছিল। দশ রানের মধ্যে ও ছ’বার চান্স দেয়। সহজ ক্যাচ দুটো পড়ে যায়। তার পরই লারা মারতে শুরু করে। আমি কখনও ভুলব না। অফিসে আমার চেম্বারে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ শুনলাম হান্ড্রেড হয়ে গেছে। তার পর কে এসে খবর দিল, স্যর দুশো হয়ে গেছে। তার পর হন্তদন্ত হয়ে ইনিংসটা দেখেছি। আমার ধারণা, কাউন্টি ম্যাচে সর্বকালের সেরা ইনিংস! এজবাস্টনে তো অবশ্যই!
প্র: তেন্ডুলকর তুলনায়!
অ্যামিস: তেন্ডুলকর আমার দেখা সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যান। ওর বিরুদ্ধে খেলিনি তা-ও বলছি, সব আছে সচিনের মধ্যে। আর অত অত রান। |
|
|
ফ্ল্যাশব্যাক ১৯৭২: ডেনিস বনাম চন্দ্র। |
|
প্র: গাওস্করের বিরুদ্ধে এত খেলেছেন। সচিনকে আগে রাখবেন?
অ্যামিস: হ্যাঁ সুনীল দুর্দান্ত ব্যাট ছিল। কিন্তু সচিন তবু আগে। পৃথিবীর সব পরিবেশে চূড়ান্ত সফল। সুনীলের কাছে রাখব আমি রাহুল দ্রাবিড়কে। টপ প্লেয়ার।
প্র: জনপ্রিয় একটা চিন্তার ঘরানা বলে, হেলমেটের আর প্রাক হেলমেট কোনও তুলনাই হওয়া উচিত নয়। প্রোটেক্টেড হয়ে এখন তো সবাই বলের লাইনে যেতে পারে।
অ্যামিস: আমি পুরোপুরি একমত নই। আগে যেটা হচ্ছিল, ক্রিকেটে যে পরিমাণ ফাস্ট বোলার চলে এসেছিল তাতে বাইশ গজে এক রকম জঙ্গলের নিয়ম প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল। বল লেগে রক্তারক্তি। ব্যাটসম্যান রোজ হাসপাতালে যাচ্ছে। সে আর ব্যাট করতে পারছে না। এখনও হেলমেটে বল লাগলে ব্যাটসম্যানের ব্যথা ঠিকই লাগে কিন্তু সে অন্তত ব্যাট করতে পারে।
প্র: ক্রিকেট মাঠে হেলমেটের আবিষ্কর্তা আপনি। অথচ প্রাক হেলমেট যুগে তো আপনি সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন।
অ্যামিস: হেলমেটের মতো কোনও প্রোটেকশন ছাড়া উপায় ছিল না। আমি যখন এটা চালু করি তখন আমরা সব প্যাকার ক্রিকেটে। মোট আঠারো জন ফাস্ট বোলার ছিল প্যাকার ক্রিকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমেই তো চারটে। কী স্পিডে বল করত ওরা একজন। প্যাকারে আরও সমস্যা ছিল, আমরা অফিশিয়াল গ্রাউন্ড একটাও পাইনি। আনঅফিশিয়াল মাঠের পিচ ভাল থাকত না। সেখানে ঘণ্টায় ৯০/৯৫ কিলোমিটার স্পিড ম্যানেজ করা সম্ভব নাকি? তখন ভাবি হেলমেট ইউজ করার কথা। জানতাম রক্ষণশীল ইংল্যান্ডে কোনও দিন সেটা করা যাবে না। সাহস করে যদি চালু করতে হয় তা হলে অস্ট্রেলিয়ায়। টনি গ্রেগ আমাদের ক্যাপ্টেন ছিল। ওকে গিয়ে বলতে রাজি হয়ে গেল।
প্র: কেরি প্যাকার?
অ্যামিস: উনি তো দারুণ খুশি হলেন। এমনিতে উনি নানান অভিনবত্ব আমদানি করছিলেন। তার সঙ্গে এই হেলমেটটা যোগ হয়ে গেল। কিছু দিন বাদে গ্রাহাম ইয়ালপ আমার দেখাদেখি টেস্ট ম্যাচে ইউজ করল। তার পর এটাই চালু হয়ে গেল। যদিও আমাকে গোড়াতে প্রচুর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সইতে হয়েছিল।
প্র: যাদের দৌলতে এটা নিলেন, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলারদের প্রতিক্রিয়া কী হল?
অ্যামিস: কী আবার হবে— আমার জন্য বাউন্সার সংখ্যা বেড়ে গেল। বলল মুখ ঢেকে রেখেছিস তো ওখানেই মারব। পাবলিকও আওয়াজ দিল, ডেনিস বাবা কি ব্যাট কিনে দেয়নি?
প্র: আর ইংল্যান্ডে যখন প্রথম ব্যবহার করলেন?
অ্যামিস: ওরে বাবা কী টিটকিরি! গ্যালারি থেকে বলল মোটরবাইক কিনে দিচ্ছি। ক্রিকেটমাঠ থেকে পালা।
প্র: দুটো ইন্ডিয়ান টিমকে আপনি মাঠে দাঁড়িয়ে কার্যত পালাতে দেখেছেন। আর দুটোতেই আপনার সেঞ্চুরি রয়েছে। একটা লর্ডসে ৪২ অল আউট। আর একটা বিশ্বকাপে গাওস্করের সেই ৬০ ওভারে ৩৬।
অ্যামিস: ফর্টি টু অল আউট আই ক্যান এক্সপ্লেন। সেকেন্ড ইনিংসে সে বার যখন ইন্ডিয়া ব্যাট করছে, তখন পরিবেশটা অসম্ভব রকম বোলিং সহায়ক ছিল। বল সুইং করছিল খুব বেশি। সিমও। এই পরিবেশে চরম অভ্যস্ত একটা টিমের হতেই পারে। কিন্তু সুনীলের ওয়ার্ল্ড কাপ ব্যাটিংটা আমাদের খুব আশ্চর্য লেগেছিল। এত বড় ব্যাটসম্যান সে স্ট্রোক খেলছে না কেন? পরে মনে হয়েছিল, ও হয়তো ভেবেছে চালিয়ে লাভ কী? ইংল্যান্ড তো এত রান করেছে যে টার্গেট হাতের বাইরে।
প্র: আর সেই ইন্ডিয়ার কাছেই প্রথম সিরিজ হারা?
অ্যামিস: ইলিংওয়ার্থ ক্যাপ্টেন ছিল সে বার আমাদের। আমরা চন্দ্রশেখরকে একদম খেলতে পারিনি। ইলি-কে গিয়ে আমি বলেছিলাম, কী করব ওর সামনে কিছু বুঝতেই পারছি না। গুগলি ধরতে পারছি। কিন্তু ওর বাউন্সার। বা হঠাৎ জোরে করা ডেলিভারি তো পুরো রহস্য। ইলি তখন পরামর্শ দেয়, চন্দ্রকে পেস বোলার মনে করে খেল। ব্যাকফুটে যাও। তাতেও আউট করে দিচ্ছিল। আমি তো আজও মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে চন্দ্রকে দেখি বাউন্স করাল ডেলিভারিটা (হাঃ হাঃ)।
প্র: কিন্তু আপনি তো ভারতে সিরিজ হারার পর বেদীকে দিয়ে কায়দা করে অনুশীলন করিয়ে নিয়েছিলেন। দেড় ঘণ্টা প্র্যাক্টিসের পর ভারতীয় স্পিন বোলিং সম্পর্কে রহস্যময়তা এমনই কেটে গিয়েছিল আপনার যে, সেই বেদীকে প্রচণ্ড পিটিয়ে পরে সব ম্যাচে রান করেছেন।
অ্যামিস: এ ভাবে বলাটা ঠিক নয়। আমায় আউট করছিল চন্দ্র। ওর বিরুদ্ধে প্র্যাক্টিস করতে চেয়ে আমি কিছু পাইনি। ইন্ডিয়ানরা তাদের মোক্ষম অস্ত্র বার করেনি। আমায় প্র্যাক্টিস দিয়েছিল বেদী-প্রসন্ন। তা-ও ওদের আমি রিকোয়েস্ট করেছিলাম এর পর পাকিস্তানে যাচ্ছি। একটু যদি প্র্যাক্টিস দাও। ওরা খুব বড় মনের। এক কথায় রাজি হয়ে যায়।
প্র: আজও বেদী ভারতীয় ক্রিকেট মহলে সে জন্য অভিসম্পিত হন। লোকে বলে, সর্দারজি বুদ্ধি। নইলে কেউ অপোনেন্টকে নিজের রহস্য ফাঁস করে দেয়?
অ্যামিস: অন্যায়— যদি কেউ সেটা বলে। বিষেণকে আমি তার কাউন্টি সার্কিট থেকেই চিনি। ও এক জন পেশাদার। আর এক পেশাদারকে হেল্প করেছিল।
প্র: বয়কটের সঙ্গে আপনি বহু ওপেন করেছেন। নিজের পছন্দের ওপেনার বাছতে বললে কাকে নেবেন? গাওস্কর না বয়কট?
অ্যামিস: আমি সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ জিমি জেমসনের সঙ্গে। আমরা বহু ওপেন করেছি একসঙ্গে। তবে গাওস্কর-বয়কট দু’জনই ওপেনার হিসেবে অসামান্য। যে কোনও এক জনে কাজ চলবে।
তবে বয়কট...(হাঃ হাঃ)
প্র: হাসছেন কেন?
অ্যামিস: হাসছি কারণ বয়কটকে পঁয়তাল্লিশ বছর আগে একটা টেস্ট ম্যাচে রান আউট করেছিলাম। সেটা আজও ভুলতে পারে না।
প্র: তাই?
অ্যামিস: আরে সে দিন আমার ন’বছরের নাতিকে ওর সঙ্গে আলাপ করাচ্ছিলাম। বয়কট বলল, তোমার দাদু তো আমায় যা-তা করেছিল পঁয়তাল্লিশ বছর আগে। আমি তখন একটা গালাগাল দিলাম। এত বছর পর নাতিকেও লাগাচ্ছিস। জেফরিও পাল্টা গালাগাল দিল। নাতি তখন হাঁ। বলছে দাদু তোমরা কী ভাষায় সব কথা বলছ (হাসি)! |
|
|
|
|
|