আলোচনায় বসতে আগ্রহী তালিবান। দোহায় রাজনৈতিক দফতর খুলে আজ এ কথা ঘোষণা করেছে তারা। সব ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহের শেষেই দোহায় তালিবানের দফতরে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তাঁদের পর কাতারে যাওয়ার কথা আফগান দলেরও। ২০০১-এ আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ঢোকার পর থেকে যে দীর্ঘ যুদ্ধের আরম্ভ, তা শেষ করার লক্ষ্যে এই প্রথম সরকারি ভাবে কোনও আলোচনা শুরু হতে চলেছে। তাই তালিবানের আজকের ঘোষণাকে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে ছোট কিন্তু বিরাট পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।
|
মুহাম্মদ নাইম |
কাতারের রাজধানী দোহা থেকে আজ এক টিভি সম্প্রচারে হাজির হন মুহাম্মদ নাইম নামে তালিবানের এক মুখপাত্র। নাইম জানান, তালিবানের সামরিক ও রাজনৈতিক যা কিছু লক্ষ্য, তা শুধু আফগানিস্তানেই সীমাবদ্ধ। “আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে কাউকে অন্য দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে দেব না” বলেন তিনি। আর বলেন, সংঘর্ষের রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চান তাঁরা।
স্পষ্টতই আশ্বস্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তালিবানের এই ঘোষণাকে “সমঝোতার পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তাঁর মতে, বিষয়টি রয়েছে একেবারেই প্রাথমিক স্তরে। উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে জি-৮ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সঙ্গে বৈঠকে ওবামা বলেন, “আমরা ধরেই নিচ্ছি, অনেক হোঁচট খেতে হবে।”
তালিবানকে আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা চলছিল বহুদিন ধরেই। শেষ চেষ্টা হয়েছিল মাস ১৮ আগে। কিন্তু তা ভেস্তে যায়। আমেরিকার অভিসন্ধি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তালিবান নেতৃত্ব। তা-ও মার্কিন কূটনীতিকদের তরফে চেষ্টা জারি ছিল। কিন্তু তাঁরা জানতেন না, তালিবানের হয়ে কথাটা বলবেন কে (আজ তালিবান মুখপাত্রের উদয় সেই সংশয় ঘুচিয়েছে)। তবে সেনার শীর্ষ কর্তারা মেনেই নিচ্ছিলেন, তালিবান ও তাদের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে শুধু যুদ্ধ করে জেতা যাবে না।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আফগানিস্তানের মাটি সন্ত্রাসে ব্যবহার হতে না দেওয়ার যে ঘোষণা আজ তালিবান করেছে, তাতে মার্কিন কর্তারা উৎসাহিত। কারণ, এই ঘোষণায় তালিবানের সঙ্গে আল-কায়দার বিচ্ছেদের প্রকাশ্য ইঙ্গিত রয়েছে বলে তাঁরা আশা করছেন। ৯/১১ হামলা চালানোর সময়ে তালিবানের কাছেই আশ্রয় পেয়েছিল আল কায়দা।
এখন আলোচনা শুরু হলে মার্কিন ও আফগান প্রতিনিধিদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে আল কায়দার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির থেকে তালিবানকে আলাদা করে এনে শেষ পর্যন্ত তাদের অস্ত্র ত্যাগ করানো। সেই সঙ্গে আফগান সংবিধানের প্রতি তাদের আস্থা ফেরানোর বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে আলোচনা শুরু হলেও চটজলদি যে কোনও সমাধান বেরিয়ে আসবে না, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন মার্কিন কর্তারা।
ওবামা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যদি কিছু হয়ও, কোনও নিশ্চয়তা নেই যে সেটা তাড়াতাড়ি হবে।” এই দোলাচলের পেছনে কারণ অবশ্যই তালিবান ও আমেরিকার মধ্যে এতদিনের অবিশ্বাসের বাতাবরণ। আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যদিও শান্তিপ্রক্রিয়ার পক্ষে, কিন্তু তাঁকেও অতীতে ‘আমেরিকার হাতের পুতুল’ বলে কটাক্ষ করেছে তালিবান। কারজাই চেয়েছিলেন, কোনও শান্তি আলোচনা হলে তা আফগানিস্তানের মাটিতেই হোক। কিন্তু তালিবানের দাবি ছিল, আলোচনা হবে নিরপেক্ষ কোনও দেশে। শেষ পর্যন্ত কারজাইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ‘সর্বোচ্চ শান্তি পরিষদ’কেই যেতে হবে কাতারে।
তবে কারজাইয়ের উদ্বেগ, মুখে শান্তি আলোচনার কথা বলে হয়তো রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড়ের উদ্দেশ্যেই কাতারের দফতরকে ব্যবহার করতে পারে তালিবান। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কথা বলে আজ তেমন ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছে তারা। উল্টে বরং বলেছে আফগান প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবে ‘প্রয়োজন হলে’।
কাজেই আশার সঙ্গে ধোঁয়াশা রইল। হাজার হোক, আলোচনায় তাদের আস্থা ফিরল কেন, তার কোনও কারণ তো স্পষ্ট করেনি তালিবান। |