দলের কেউ গণ্ডগোল করে গ্রেফতার হলে পুলিশের থেকে ছাড়িয়ে আনা হবে না বলে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার বর্ধমান শহরে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে দলের পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রার্থী এবং ব্লক সভাপতিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন কথাই বলেছেন পার্থবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটকে রাজনীতির যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করুন। সিপিএমকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। দেখবেন ওদের এক সময়কার শক্তিশালী দুর্গে ওরা যেন ফিরে আসতে না পারে। তবে বন্দুকের রাজনীতি করবেন না। গোলমালে জড়িয়ে আমাদের ফোন করবেন না। আমরা কিন্তু পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়াতে যাব না!”
বর্ধমান জেলা যে সিপিএমের অন্যতম দুর্গ ছিল, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন মহাসচিব। তাঁর কথায়, “এই জেলা থেকেই সিপিএমের উত্থান। এখান থেকে নেতারা রাজ্য চালাতেন। ওঁরা কিন্তু আজও রাজনৈতিক ভাবে শেষ হননি। পঞ্চায়েত ভোটে ওরা যেন ফিরে না আসতে পারে, সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাই বারবার বলছি, ওদের প্ররোচনায় কোনও মতেই পা দেবেন না। ওরা যদি বেআইনি কাজ করে তা হলে এই ভোটেও ওদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” |
জেলায় ৪০৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৮০৭টি ও পঞ্চায়েত সমিতির ৭৭৯টি আসনের মধ্যে ১২৬টি ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল। নানা জায়গায় বিরোধী প্রার্থীদের ভয় দেখিয়ে প্রথমে মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়া ও পরে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ রয়েছে। শাসকদলের সন্ত্রাসে প্রচারও করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু বৈঠকের পরে সেই প্রসঙ্গ উঠতেই দৃশ্যত উত্তেজিত পার্থবাবু বলেন, “এই সব মিথ্যা কথা! সিপিএমের অপপ্রচার। নিজেদের দলটাকে হাস্যকর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। ওরা যদি প্রার্থী দিতেই না পারল, রাজ্যের ১ লক্ষ ৯০ হাজার আসনে ওদের প্রার্থীরা দাঁড়াল কী করে?” তাঁর দাবি, “আসলে ওদের নিচুতলায় কোনও সমর্থক নেই। গ্রামের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাই ঝুড়ি-ঝুড়ি মিথ্যে বলতে হচ্ছে।”
জেলার বিভিন্ন জায়গাতেই টিকিট না পেয়ে দলের নেতারা নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় চারশো এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে শ’খানেক নির্দল প্রার্থীর অনেকেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বলে সন্দেহ নেতাদের। এই নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এখনও অব্যাহত। জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের মতে, “যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরই দায় এঁদের সরে দাঁড়াতে বলা। ব্লক সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে এই গোঁজ প্রার্থীদের বাড়ি-বাড়ি যান। অনুরোধ করুন, তাঁরা যেন দলের আসল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামেন অথবা বসে যান।” সভা শেষের পরে বেশ কয়েক জন ব্লক সভাপতি ও নেতা-কর্মীরা পার্থবাবুর কাছে অনুযোগ করেন, এত দিন ধরে দলের পতাকা বয়েও তাঁদের অনেকে মনোনয়ন পাননি। পার্থবাবু তাঁদের দলের সিদ্ধান্ত মেনে প্রচারে নামতে বলেছেন। |