এখনও ধোঁয়াশা
• কোথায় কত স্কুলবাড়ি দরকার বাহিনীর থাকার জন্য
• আগাম চিঠি দিতে দেরি হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল ছাড়বেন কি না
• বুথ পাহারা দিতে কত কনস্টেবল পাঠাতে হবে কোন থানা থেকে
• বহিরাগত বাহিনীর জন্য কত বাস, গাড়ি জোগাড় রাখতে হবে। রাজ্যের নয়টি জেলায় প্রথম দফার পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা ২ জুলাই। তার মাত্র দু’সপ্তাহ আগে পর্যন্ত বুথগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে এখনও অন্ধকারে ওই জেলাগুলির পুলিশের কর্তারা। নানা সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য ব্যবস্থা করতে গিয়ে আরও জটিল হয়ে পড়েছে তাঁদের কাজ।
প্রথম দফায় হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই নয় জেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সব জেলার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী কোথায় কত আসবে, তা অনিশ্চিত। তাই এই হয়রানি হচ্ছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি বুথে সশস্ত্র বাহিনী দেওয়া হয়েছিল।
ওই সময়ে নির্বাচনের অন্তত এক মাস আগে থেকে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোন থানায় কতজন কেন্দ্রীয় পুলিশ যাবে। সেই মতো তাদের থাকার ব্যবস্থা, বুথগুলিতে তাদের পৌঁছে দেওয়া এবং ফিরিয়ে আনার কাজটি করেছিল সংশ্লিষ্ট থানাগুলি। নির্বাচনের দু’দিন আগে হাজির হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। আগাম পরিকল্পনা করে রাখায় তাদের থাকা বা যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে থানাগুলির কোনও অসুবিধা হয়নি।
কিন্তু এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এখনও পর্যন্ত কত বাড়তি পুলিশ আসবে সে কথা থানাগুলিকে জানানো হয়নি। বুথের নিরাপত্তা বিষয়ে আদালতের নির্দেশ অনুসারে প্রথম দফার ভোটে অন্তত ৬৮ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী বা ভিন রাজ্যের পুলিশের প্রয়োজন হবে। কিন্তু ভিন রাজ্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ মিলিয়ে ঠিক কতজন পুলিশকর্মী আসবেন তার থানাওয়াড়ি তালিকা এখনও পর্যন্ত নয়টি জেলার পুলিশ প্রশাসনের কাছে আসেনি।
একটি জেলার পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশ এলে তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা একরকম হবে, ভিন রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য অন্যরকম ব্যবস্থা করতে হয়। বুথে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সশ্লিষ্ট থানার একজন পথপ্রদর্শক থাকলেই চলে।
অন্য দিকে ভিন রাজ্যের পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য থানাগুলিকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। রাজ্য পুলিশকে বাসে করে বুথে পৌঁছে দেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য ছোট গাড়ির ব্যবস্থা রাখতে হয়।
এইখানেই সমস্যায় পড়েছে জেলা পুলিশ এবং জটিলতাও দেখা দিয়েছে সেই কারণে। বিভিন্ন জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ভিনরাজ্যের পুলিশ প্রত্যেকের জন্যই পৃথক পৃথক বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখতে হচ্ছে থানাগুলিকে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা হল, গ্রীষ্মের ছুটির পরে স্কুলগুলি খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু বাহিনী কত আসবে সে কথা জানতে না-পারায় স্কুলগুলি নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আগাম চিঠি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল পুরোপুরি চালু হয়ে যাওয়ার পরে সেগুলি দিতে কর্তৃপক্ষ রাজি হবেন কিনা সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন থানার ওসিরা।
জেলা পুলিশের নিজস্ব সমস্যাও রয়েছে। স্বাভাবিক বুথে একজন সশস্ত্র কনস্টেবল এবং একজন লাঠিধারি পুলিশ দেওয়ার কথা বলেছে হাইকোর্ট। একটি জেলা পুলিশের কর্তা জানান, জেলা পুলিশের নিজস্ব সশস্ত্র কনস্টেবলদের একটা বড় অংশ একা বুথে যেতে রাজি হচ্ছে না। ওই পুলিশ কর্তা বলেন, “ঠিক কতজন কনস্টেবল লাগবে তা জানতে পারলে আগাম পরিকল্পনা করা যেত। কিন্তু শেষ মূহুর্তে সমস্যাটি প্রকট হলে তার সমাধান বেশ কঠিন হবে।”
হাওড়া জেলা পুলিশের একটি থানার ওসি বললেন, “যেহেতু আমরা জানিই না, কতজন কেন্দ্রীয় পুলিশ আসবে বা কতজন রাজ্য পুলিশের লোক আসবেন তাই আমাদের সব কিছুর জন্য সমান্তরাল ব্যবস্থা করে রাখতে হচ্ছে। এতে কাজটি কঠিন হয়ে গিয়েছে।” একই সমস্যার উল্লেখ করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি থানার ওসি বললেন, “এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে আমরা কখনও পড়িনি।” রাজ্য পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানালেন, বাহিনী নিয়ে জটিলতার সমাধান করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। “পুলিশকে সবরকম পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়” বলেন তিনি। |
সহ প্রতিবেদন: রানা সেনগুপ্ত, বরুণ দে। |