বিভিন্ন মামলায় নিম্ন আদালত ওঁদের শাস্তি দিয়েছে। তাই ওঁরা এখন বিভিন্ন জেলে বন্দি। কিন্তু মুক্তির আশায় ওঁদের অনেকেই নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করেছেন। ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের আর্জির বিচার করতেও প্রস্তুত। কিন্তু ওই বন্দিদের পক্ষে কোনও আইনজীবীর দেখা মিলছে না। স্রেফ কৌঁসুলিদের উদাসীনতায় আপিল মামলা পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। আর অসহায় অবস্থায় ওঁদের পড়ে থাকতে হচ্ছে জেলে।
আইনজীবীর হদিস না-পেয়ে উচ্চ আদালত ওই সব বন্দির আপিল মামলা শুনতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট সশরীরে হাজির করতে বলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ১১ বন্দিকে। সোমবার ওই বন্দিরা হাইকোর্টে হাজির হন। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা ওই বন্দিদের কাছেই জানতে চান, তাঁদের আইনজীবী কারা? তাঁরা মামলা লড়তে আসছেন না কেন? ওই বন্দিদের কয়েক জন নিজেদের কৌঁসুলিদের নাম বলতে পেরেছেন। কয়েক জন বন্দি জানেনই না, তাঁদের হয়ে কোন আইনজীবী লড়বেন। বন্দিদের জবাব শুনে হতবাক হয়ে যান বিচারপতিরা। এই অবস্থায় নিয়মিত উপস্থিত থেকে ওই সব বন্দির মামলার নিষ্পত্তিতে সাহায্য করার জন্য আইনজীবীদের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্ট এর আগেও বহু বার এই সব বন্দির মামলা দ্রুত শেষ করার কথা বলেছে। নিম্ন আদালতে বিচার শুরু হওয়ার আগেই কয়েক বছর জেল খেটে ফেলেছেন, এমন বন্দির সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা বিচারাধীন বন্দি। দোষী না নির্দোষ, সেটা সাব্যস্ত হওয়ার আগেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাঁদের কারাবাস। দোষী সাব্যস্ত হলে যত বছর কারাদণ্ড হত, অনেক ক্ষেত্রে বিচার শুরু হওয়ার আগেই তত বছর বা তার চেয়েও বেশি জেল খাটা হয়ে গিয়েছে অনেকের। ২৫ বা ২০ বছর জেল খাটার পরে হাইকোর্টে আপিল মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন, গত দু’বছরে এমন নজির ৫০-এরও বেশি। পুরুলিয়ার আদিবাসী মহিলা মালতী বাগদিকে ২৫ বছর জেল খাটার পরে বেকসুর বলে মুক্তি দিয়েছিল হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতে বিচারের সময় দেখা যায়, একটি আত্মহত্যার মামলায় ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ছাড়াই মালতীকে খুনি বলে রায় দেওয়া হয়েছিল নিম্ন আদালতে। দ্রুত বিচারের দাবিতে
বছর দুয়েক আগে বিভিন্ন জেলে বন্দিরা আন্দোলন করেন, অনশন করেন। তখনও হাইকোর্ট রাজ্য সরকার এবং জেল-কর্তৃপক্ষকে বন্দিদের কাগজপত্র দ্রুত ঠিক করে দ্রুত মামলা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। কেন এমন হয়?
সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। ফৌজদারি মামলার আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, যে-সব আবেদনকারী হাইকোর্টে আপিল মামলা করার পরে জামিন পান, তাঁদের মামলা তবু কিছুটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়। কিন্তু জামিনে মুক্ত নন, এমন বন্দিদের আপিল মামলা লড়ার জন্য আইনজীবী পাওয়া যায় না। ডিভিশন বেঞ্চ মানবিক দৃষ্টি থেকেই ওই ১১ জন বন্দির আপিল মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য সরকার পক্ষ এবং আবেদনকারীদের আইনজীবীদের কাছে আবেদন জানায়। আইনজীবী মহলের একাংশ বলছে, হাইকোর্টে এই ধরনের মামলা শোনার জন্য নির্দিষ্ট এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকা দরকার। নইলে বহু বন্দি বিচারের অপেক্ষায় থেকে কারাবাস করতে বাধ্য হবেন বলে তাদের অভিমত। |