নির্বাচনী বিধি ভাঙছেন শাসকদলের বিধায়ক। কংগ্রেসের দায়ের করা এই অভিযোগের ভিত্তিতে নলকূপ খোঁড়া ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ বন্ধ করল পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লক প্রশাসন। পাশাপাশি কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এলাকায় মিনিকিট ও ত্রিপল বিলি করার অভিযোগও কংগ্রেস এনেছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে বিডিও এবং এলাকায় কমিশনের পর্যবেক্ষকের কাছে স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে পাঁচ দফা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ করেছে কাশীপুর ব্লক কংগ্রেস। কাশীপুরের বিডিও তপন ঘোষাল বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এলাকায় নলকূপ খোঁড়ার কাজ করছে। ওই দফতরের আধিকারিকদের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য পোঁতা খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনার প্রকল্প আধিকারিককে।”
কাশীপুর ব্লক এলাকায় তৃণমূলকে ভাঙিয়েই কংগ্রেস নিজের সংগঠন শক্ত করেছে। তৃণমূলের আগের ব্লক সভাপতি কার্তিক মালাকার বর্তমানে ব্লক কংগ্রেস সভাপতি। শুক্রবার কার্তিকবাবু নির্বাচন কমিশন এবং বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক দাঁড়িয়ে থেকে ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ খোঁড়াচ্ছেন। কার্তিকবাবুর অভিযোগ, “তিন মাস আগে গরমের সময়ে ব্লকে শতাধিক নলকূপ খোঁড়ার অনুমোদন মিলেছিল। কিন্তু, সেই সময়ে কাজ হয়নি। বিধায়ক পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেই কাজ এখন শুরু করেছেন।” বিডিও অবশ্য বলেন, “কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ পেয়ে এলাকায় গিয়ে বিধায়ককে দেখা যায়নি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে সেই কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।” কংগ্রেসের আরও অভিযোগ ছিল, নির্বাচনের আগে বড়রা অঞ্চলের বিষহরিতলা, রাঙামাটি ও কালিদহ অঞ্চলের ইন্দ্রবিল বাজার ও মহুলকোঁকা গ্রামে তৃণমূল বিধায়কের নির্দেশে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার কাজ হচ্ছিল। বিডিও জানান, তদন্তে দেখা গেছে কিছু এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ফেলা হয়েছিল। সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে।
কাশীপুরের ডমনকেয়রি গ্রামে বিধায়ক বৃহস্পতিবার মিনিকিট বিলি ও শুক্রবার ন’পাড়া গ্রামে ত্রিপল বিলি করেছেন বলেও প্রশাসন ও কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। এ ছাড়াও গীতাঞ্জলি প্রকল্পে প্রাপকদের তালিকা নিয়ে তৃণমূল ভোটের প্রচার করছে বলে কংগ্রেসের দাবি। কার্তিকবাবু বলেন, “বিধায়কের স্বাক্ষরিত গীতাঞ্জলি প্রকল্পের সেই তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, মোট ৪২৭ জন প্রাপকের নাম রয়েছে। সেই তালিকা নিয়ে এলাকায় প্রচার করছে তৃণমূল।” বিধায়কের পাল্টা কটাক্ষ, “ওদের (কংগ্রেস) নিয়মকানুন সম্পর্কে আরও জানতে হবে। পানীয় জল বা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার মতো আবশ্যিক ও জরুরি যে-সব কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছে, সেই কাজ নির্বাচনের সময়ে বন্ধ হয় না।” বিধায়কের দাবি, মিনিকিট ও ত্রিপল বিলি করেছে প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, মিনিকিট বা ত্রিপল প্রযোজনের ভিত্তিতে ব্লক থেকে দেওয়া হয়। বিডিও জানান, এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছিল। কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। |