মির্জাপুর থেকে উইম্বলডন পিঙ্কির রূপকথার সফর
মির্জাপুরের ‘অজ পাড়াগাঁ’ থেকে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টমাত্র এগারো বছর বয়সেই যে সাত সমুদ্র, তেরো নদী পেরিয়ে টেনিসের কিংবদন্তি ও সেরা তারকাদের সঙ্গে হাত মেলাবে সে, তা কখনও ভাবতে পেরেছে পিঙ্কি সোনকর? একটা অস্ত্রোপচারই জীবনটা পাল্টে দিল ছোট্ট মেয়েটির।
রজার ফেডেরার কে? কে-ই বা রাফায়েল নাদাল? এ সব পিঙ্কির না জানাটা এমন কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার না। উত্তর প্রদেশের যে গ্রামে থাকে সে, সেখানে টেনিস ব্যাপারটা কোনও ভিনগ্রহের প্রাণীর মতোই অদ্ভুত। রজার, রাফারা সেখানে গিয়ে মনের সুখে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে। কেউ অটোগ্রাফও চাইতে আসবে না, কেউ তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়ে বিরক্তও করবে না। তবে ৭ জুলাইয়ের পর অবস্থাটা আর এমন থাকবে না। সে দিন সারা বিশ্বের ৭০টি দেশের ৩০ কোটি মানুষ দেখবে পিঙ্কিকে। উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে সে-ই ঠিক করে দেবে পুরুষদের সিঙ্গলসের দুই ফাইনালিস্টের টস-ভাগ্য। তার টস করা কয়েনেই ঠিক হবে কে আগে সার্ভ করবেন সেই ম্যাচে। টস হয়ে যাওয়ার পর টেনিস দুনিয়ার তাবড় ভিআইপি-দের সঙ্গে বসে সে দেখবে উত্তেজনায় ঠাসা গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল। সত্যিই, একটা অস্ত্রোপচারই পাল্টে দিল ছোট্ট মেয়েটির জীবন।
উইম্বলডনের রাস্তায় পিঙ্কি
কি সেই অস্ত্রোপচারের কাহিনি? কেমন সেই রূপকথা? এ বার তা শোনানো যাক। কাটা ঠোঁট বা ‘ক্লেফট লিপ’ নিয়ে জন্মেছিল পিঙ্কি। এতে তার বা তার বাবা-মায়ের কোনও দোষ না থাকলে কী হবে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠতে বিন্দুমাত্র দেরি হয়নি তার। ‘স্বহৃদয়’ ব্যক্তিদের কাছে আবার করুণার পত্রীও হয়ে উঠেছিল সে। প্রায়ই তার বাবা-মা-কে শুনতে হত, “আহা রে, কী কপাল ওর। ঈশ্বর যেন মেয়েটাকে এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি দেয়।” ঈশ্বরের দয়াতেই হয়তো তার খোঁজ পেল বিশ্ববিখ্যাত সংস্থা ‘স্মাইল ট্রেন’, এমন শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোই যাদের ব্রত। তাদেরই উদ্যোগে ২০০৭-এ অপারেশন টেবিলে তোলা হয় পিঙ্কিকে। নজিরসৃষ্টিকারী অস্ত্রোপচার ক্যামেরাবন্দি করে তা নিয়ে এমিজয়ী পরিচালক মেগান মাইলান তৈরি করেন ৩৯ মিনিটের এক তথ্যচিত্র ‘স্মাইল পিঙ্কি’, ২০০৮-এ যা পেল অস্কার সম্মান। সারা দুনিয়ায় পিঙ্কির জনপ্রিয়তা সেই সময় থেকেই। তবে এ বার যে সেই জনপ্রিয়তা দ্বিগুন হবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই ‘স্মাইল ট্রেন’-ই পিঙ্কির এই সফরের উদ্যোক্তা।
জীবনের এই ক’টা দিন পিঙ্কির জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকতে চলেছে। ২ জুলাই, যে দিন সে রওনা হবে, সে দিন ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার স্যর জেমস বিভান পিঙ্কির সন্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। প্রথমেই পিঙ্কি যাবে নিউ ইয়র্কে। সেখানকার ম্যাডিসন পার্কে উইম্বলডন উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে মণিকা সেলেস ও জিম কুরিয়েরের সঙ্গে অংশ নেবে পিঙ্কি। সেখান থেকে উইম্বলডনের ফাইনালে এবং লন্ডনে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও নিয়ে যাওয়া হবে তাকে। ফাইনালের আগে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁয় লাঞ্চেও থাকবে সে। গোটা সফরে পিঙ্কির সঙ্গে থাকবেন সেই ডাক্তার, যিনি তার ঠোঁটে অস্ত্রোপচার করেছিলেন, ডা. সুবোধ কুমার সিংহ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.