কনফেড কাপ
সেই মাঝমাঠ ত্রয়ীই পেলের দেশেও স্পেনের হৃদপিণ্ড
স্পেন-২ (পেদ্রো, সোলদাদো)
উরুগুয়ে-১ (সুয়ারেজ)
লা রোখা বনাম লা সেলেস্তে। স্পেন বনাম উরুগুয়ে। ভিসেন্তে দেল বস্কি বনাম অস্কার তাবারেজ। বুস্কেটস, জাভি-ইনিয়েস্তা বনাম সুয়ারেজ-কাভানি। টুকরো টুকরো এ রকম অনেক লড়াই দেখতেই ভোর রাতে টিভি খুলে বসেছিলাম। কিন্তু খেলা শেষে সেই সারসত্যটাই ঘুরে ফিরে এল বিশ্ব ফুটবলে দেল বস্কির টিমকে হারানো এই মুহূর্তে একটা বিরাট কষ্টসাধ্য কাজ। যে কাজটা লাতিন আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন (কনমেবল) কোচ অস্কার তাবারেজও মাথা খাটিয়ে বের করতে ব্যর্থ। নিট ফল সেই পাস-পাস-পাসের ফুলঝুরি দেখিয়ে কনফেডারেশন কাপের প্রথম ম্যাচটা ঠিক বের করে নিয়ে গেল ফাব্রেগাস, পিকে, রামোসরা।
একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়ে গেল ছোট্ট একটি ঐতিহাসিক তথ্যও। লাতিন আমেরিকায় আর্জেন্তিনা বাদে স্প্যানিশভাষী ৮টি রাষ্ট্রের কাছে আজ পর্যন্ত কোনও দিন হারেনি স্পেন। তা সে প্রীতি ম্যাচ হোক কিংবা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। সেই রীতি রবিবার রেসিফের এরিনা পারনামবুকো স্টেডিয়ামেও বজায় রইল। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে যেমন বেরিয়ে আসে একতরফা যুদ্ধে লাতিন আমেরিকায় স্পেনের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার মুঠো মুঠো সব তথ্য, সে রকমই নিজেদের তিকিতাকা ফুটবল দিয়ে অস্কার তাবারেজের উরুগুয়েকে নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করলেন দেল বস্কি। বিস্তারিত ভাবে বললে বুস্কেটস-জাভি-ইনিয়েস্তাকে নিয়ে সাজানো তাঁর মাঝমাঠ। কেমন তার ধরন? নোটবইয়ের পাতা উল্টে দেখছি প্রথমার্ধে উরুগুয়ে খেলেছে ৬৮টা পাস।
মজার ব্যাপার এটাই যে, স্পেনের মাঝমাঠে এই সময়েই একা জাভির পা থেকেই বেরিয়েছে সমসংখ্যক পাস। এখান থেকেই বোঝা যায়, ম্যাচের রাশ কতটা নিজের হাতে রেখেছিল লা রোখা ব্রিগেড। স্পেনের এই পাসিং ফুটবলের সামনে উরুগুয়ের মাঝমাঠ, রক্ষণ, আক্রমণ মাঝেমাঝেই তালগোল পাকিয়ে কেমন দিশাহারা হয়ে যাচ্ছিল। বল ধরতে পর্যন্ত পারছিল না। যেখান থেকে ম্যাচ বার করা আরও অসম্ভব হয়ে যায় কাভানি-সুয়ারেজদের। ম্যাচের শেষ লগ্নে দুর্দান্ত ফ্রিকিকে সুয়ারেজের ব্যবধান কমানো গোলটা ছাড়া উরুগুয়ের পক্ষে লেখার আর কিছুই নেই বললেই চলে।
নিজে ফুটবলের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকার সুবাদে জানি, একটা দল যদি গোটা ম্যাচে ৭১ শতাংশ বল পজেশন নিয়ে থাকে তা হলে অনেক সময়ই তা ফুটবল জনতার চোখের পক্ষে ভাল নয়। খেলাটা একঘেয়ে হয়ে যায়। কিন্তু উরুগুয়ের বিরুদ্ধে স্পেন কিন্তু সেই অফুরন্ত পাসের সঙ্গে গতিটাকেও মিলিয়ে দেওয়ায় কখনই একঘেয়ে লাগেনি। বরং কিক অ্যান্ড রানের চেয়ে এই খেলাটা অনেক আকর্ষক এবং ফলপ্রদ। আর এটা দিনের পর দিন সাফল্যের সঙ্গে করেই তো দেল বস্কির ছেলেরা গত ২৩ ম্যাচ অপরাজিত। দুটো ইউরো কাপ আর একটা বিশ্বকাপ দেশে নিয়ে গিয়েছে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত ভাবে সোলদাদোকে নামিয়ে স্পেনের বর্ষীয়ান কোচের চালটাকে কিছুটা ফাটকা বলব। কারণ খুয়ান মাতা, তোরেস, ভিয়া, দাভিদ সিলভারা থাকতে সোলদাদো প্রথম একাদশে? এটা নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও দেখছিলাম বিতর্ক। এর কারণ একটাই নিজেদের সচল মাঝমাঠ। গোটা ম্যাচে জাভি-ইনিয়েস্তা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আক্রমণে এত বল যুগিয়ে গেল তা থেকে গোলের সংখ্যা আরও বাড়ল না কেন সেটাই একটা প্রশ্ন। আর একজন বুস্কেটস। বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিজেদের আক্রমণ গড়া। বার্সার জার্সি গায়ে যে কাজটা দিনের পর দিন করে এসেছে, সেটাই তেল খাওয়া মেশিনের মতোই করে গেল জাতীয় দলের হয়েও। তাই সোলদাদোকে নামিয়ে ফটকাটাও খেলার সাহস দেখাতে পারেন স্পেনের কোচ। তবে গোল করে কোচের মুখটাও রেখেছেন ভ্যালেন্সিয়ার স্ট্রাইকার।
এই স্পেনের ভয় একটাই। এরা সুযোগ তৈরি করেও গোলের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো পেদ্রোর গোলটা না হলে কিন্তু এই ম্যাচ রিপোর্টটাই অন্য রকম ভাবে লিখতে হতে পারত। এই জায়গাটায় দেল বস্কিকে নজর দিতে হবে। না হলে জমাট রক্ষণ এবং ঝলমলে মাঝমাঠ নিয়ে বিশ্বকাপ, ইউরোর পরে স্পেন কিন্তু এ বার কনফেডারেশন কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। টুর্নামেন্ট যত এগোবে ততই কিন্তু ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে লাল-হলুদ জার্সি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.