|
|
|
|
চন্দ্রকোনায় ধৃত তৃণমূল নেতা |
স্কুলছাত্রীর বিয়ে রুখতে গিয়ে চরম হেনস্থা পুলিশের
নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দ্রকোনা |
নাবালিকার বিয়ে রুখতে গিয়ে চূড়ান্ত হেনস্থা হতে হল পুলিশকে। ভাঙচুর করা হল গাড়ি, কাদা মাখিয়ে দেওয়া হল পুলিশকর্মীদের গায়ে। মহিলা পুলিশকর্মীদের শ্লীলতাহানি, মারধরের অভিযোগও উঠেছে। রবিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার এই ঘটনায় জখম হন ৮ জন পুলিশকর্মী। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের মদতে গোটা ঘটনাটি ঘটেছে। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সীতারাম ঘোষ-সহ তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে।”
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এমন একটি ঘটনায় দলের নেতা-কর্মীদের নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের চন্দ্রকোনা-১ ব্লক সভাপতি চিত্ত পাল বলেন, “ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আমরাও তদন্ত করছি। তবে পুলিশের তদন্তে দলের তরফে কোনও ভাবেই নাক গলানো হবে না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিল বাঁশগেড়িয়া গ্রামের বছর একুশের যুবক মঙ্গল দোলই। ওই স্কুলছাত্রীর বাড়ি ঘাটাল থানার ইড়পালায়। মেয়েটির বৌদির বাপের বাড়ি বাঁশগেড়িয়ায়। শনিবার শীতলা পুজো উপলক্ষে বাবা-মার সঙ্গে সেখানেই এসেছিল ওই নাবালিকা। অভিযোগ, রবিবার দুপুরে হঠাৎ ওই বাড়িতে চড়াও হয় মঙ্গল। আত্মীয়দের বাধা উপেক্ষা করে মেয়েটিকে নিয়ে চলে যায় সে। |
সীতারাম ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র |
এর পর বহু খুঁজেও ওই নাবালিকার সন্ধান পাননি তার পরিজনেরা। ইতিমধ্যে মঙ্গলের সঙ্গী জনা পঞ্চাশেক যুবক নাবালিকার পরিজনদের হুমকি দেয়। তাদের দাবি ছিল, রবিবারই মঙ্গলের সঙ্গে ওই নাবালিকার বিয়ে দিতে হবে। অভিযোগ, মঙ্গলের পক্ষ নেন তৃণমূলের মাংরুল অঞ্চল সভাপতি সীতারাম ঘোষ ও তাঁর দলবল। তার জেরে ওই নাবালিকার পরিজনেরা প্রথমে পিছু হটেন। রবিবার সন্ধের পর অবশ্য ওই নাবালিকার বাবা মঙ্গলের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণের লিখিত অভিযোগ করেন। মেয়েটির বাবার সঙ্গে রাতেই গ্রামে যায় পুলিশ।
জানা গিয়েছে, পুলিশ প্রথমে অভিযুক্ত মঙ্গলের বাড়িতে যায়। তবে সেখানে ওই নাবালিকা বা মঙ্গল কেউই ছিল না। এরপর গোটা গ্রামে তল্লাশি শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। অভিযোগ, তখনই সীতারামের নেতৃত্বে শতাধিক গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় মারধর। রেয়াত করা হয়নি মহিলা পুলিশকর্মীদেরও। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সব শেষে বালতি বালতি পাঁক এনে পুলিশকর্মীদের গায়ে মাখানো হয়। খবর পেয়ে চন্দ্রকোনা থানার ওসি আশিস জৈন পুলিশ বাহিনী নিয়ে গ্রামে পৌঁছন। বিশাল বাহিনী গ্রামে ঢুকছে জানতে পেরে হামলাকারীরা পালাতে শুরু করে। তারই মধ্যে সীতারাম-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতভর বাঁশগেড়িয়া গ্রামে তল্লাশি চললেও আর কেউ ধরা পড়েনি। ধৃত তিন জনকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠিয়েছে ঘাটাল আদালত।
সোমবার বিকেলে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। গোটা ঘটনায় সে বিধ্বস্ত। ওই স্কুলছাত্রীর বাবা শুধু বলেন, “আত্মীয় বাড়িতে এসে এমন ঘটনা ঘটবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।” |
|
|
|
|
|