আলো-আঁধারি রাস্তায় ছয় যুবককে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল পুলিশের টহলদারি গাড়ির কর্তব্যরত অফিসারের। কিছুটা এগিয়ে গিয়েও গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসতেই চার যুবক একটি মোটরবাইকে চেপে চম্পট দিল। রাস্তার উপর তখন দাঁড়িয়ে দুই যুবক। পাশে পড়ে রয়েছে তাঁদের দু’টি সাইকেল। এক যুবকের কাঁধ ও পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। দেখেই চমকে ওঠেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদের জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, পালিয়ে যাওয়া চার যুবক আদপে ছিনতাইবাজ।
বিষয়টি জেনেই থানায় খবর পাঠান ওই টহলদারি পুলিশ ভ্যানের কর্তব্যরত অফিসার। এর পরেই থানার একটি জিপ রাস্তায় বেরিয়ে ওই চার যুবকের দু’জনকে ধরে ফেলেন। বাকি দু’জন পালিয়ে গেলেও পরে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে প্রগতি ময়দান থানা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, যে দুই যুবককে আক্রমণ করা হয়েছিল তাঁরা নোনাডাঙার বাসিন্দা। রবিশঙ্কর সাউ এবং রাহুল সাউ নামে ওই দুই যুবক শিয়ালদহের একটি বেসরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র। রাত ১১টা নাগাদ টিউশন পড়ে সাইকেল চালিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে বাসন্তী হাইওয়ের দিকে থেকে একটি মোটরবাইকে চার যুবক এসে চৌবাগা বাস স্টপের কাছে ওই দুই ছাত্রের পথ আটকায়। মোটরবাইক থেকে নেমে নিজেদের মোবাইল হারানোর কথা বলে ওই যুবকেরা রবিশঙ্কর ও রাহুলকে জিজ্ঞাসা করে তাঁরা ওই মোবাইল পেয়েছে কি না। এর পরেই আচমকা ওই চার দুষ্কৃতী কোমরে গোঁজা ধারাল অস্ত্র এবং পিস্তল বার করে।
এ দিন বাড়িতে শুয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় রবিশঙ্কর বলেন, “ওঁরা আমাদের মোবাইল, টাকা কেড়ে নিতে চায়। বাধা দিলে আমার উপর চড়াও হয়। হাতাহাতি শুরু হলে এক জন আমার পায়ে ও কাঁধে ছুরি দিয়ে মারে।” অভিযোগ, ওই দুই ছাত্রের থেকে ৮০০ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছিল ওই দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ জানায়, চৌবাগা বাস স্টপের কাছে ফিরে এসে এক যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন থানার ওসি। দুই যুবক তখন ভয়ে কাঁপছেন। বিষয়টি শুনেই থানায় খবর পাঠান ওই অফিসার। এর পরেই থানা থেকে একটি দল গাড়ি নিয়ে সায়েন্স সিটির দিক থেকে আসতে থাকে। ওই সময় তাঁরা দেখেন রাস্তার ধারে চার যুবক একটি মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশের গাড়ি দেখেই তারা ভয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এর পরে পুলিশ ও গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে মোটরবাইকটিকে ধাওয়া করে। কিছুটা যাওয়ার পরে মোটরবাইক ফেলে দৌড়তে শুরু করে চার দুষ্কৃতী। পুলিশও গাড়ি থেকে নেমে দৌড়তে শুরু করে। শেষে মহম্মদ আজিদ ও মহম্মদ রামিজ নামে দুই দুষ্কৃতীকে ধরে ফলে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল মেলে। তাদের থানায় নিয়ে এসে জেরা করে ভোর রাতে তিলজলা ও তপসিয়া থেকে বাকি দুই যুবক আমির আলি গাজি ও আব্দুল সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রবিশঙ্কর ও রাহুল। সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হয়।
এ দিকে, সোমবার সকাল পৌনে ছ’টা নাগাদ মহাত্মা গাঁধী রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে এক যুবককে অস্ত্র দেখিয়ে তাঁর সর্বস্ব লুঠ করে পালাল দুষ্কৃতীরা। বাধা দিতে গেলে তারা ব্লেড দিয়ে বেলেঘাটার বাসিন্দা অভিজিৎ দাঁ নামে ওই ব্যক্তির গাল চিরে দেয় বলে অভিযোগ। অভিজিৎবাবু পুলিশে অভিযোগে জানান, দুষ্কৃতীরা তাঁর মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে পালায়। মানিব্যাগে ৪৮০ টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা ব্লেড দিয়ে তাঁর ডান গালে আঘাত করে। ঘটনার পরেই জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ জানান অভিজিৎবাবু। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ নারকেলডাঙা থেকে মহম্মদ আরমান ওরফে নান মাস্টার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় টাকা ও কাগজপত্র-সহ মানিব্যাগটি। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে। |