সভা করার জন্য বামফ্রন্টের তরফে সরকারি ভাবে আর কোনও অনুমতি নেওয়া হবে না। বিনা অনুমতিতেই রাস্তায় সভা করা হবে। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে রাজভবন থেকে বেরিয়ে সোমবার ফের সেই কথা জানিয়ে দিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু।
সাম্প্রতিক কালে কলকাতা শহরেই বামেদের একাধিক সভার অনুমতি দিতে টালবাহানা করেছে পুলিশ-প্রশাসন। কখনও অনুমতি দিয়েও প্রহ্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, কখনও প্রথমে ‘না’ বলেও চাপে পড়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বার বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের জন্য ২১ জুন ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে বিমানবাবুরা এ দিন যখন রাজ্যপালের কাছে দরবার করছেন, তখন খবর আসে ২১ জুনের অনুষ্ঠানের জন্য ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট পাওয়া যাবে না। বিষয়টি তখনই রাজ্যপালকে জানান তাঁরা। পরে রাজভবনের বাইরে আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি, ডিএসপি-র প্রবোধ সিংহ প্রমুখকে পাশে নিয়ে বিমানবাবু বলেন, “আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল বলেই সভা করার জন্য অনুমতি চাই। কিন্তু নিয়ম মেনে চলা যদি দুর্বলতা হয়, তা হলে আমাদের ভিন্ন পথে চলতে হবে।” ভিন্ন পথ কী, তা-ও জানিয়ে দেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “আমরা এখন থেকে কোথাও সভা করার জন্য আইন মেনে অনুমতি নেব না। কোনও হলেও সভা করব না। সভা করার জন্য রাস্তা বেছে নেব। কারণ, রাস্তাই আমাদের একমাত্র জায়গা!”
বর্ষার জন্য বাম জমানায় বামফ্রন্ট সরকারের বর্ষপূর্তি পালিত হত নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। এ বছরও বামেরা প্রথমে সেখানেই সভা করার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বিকল্প হিসাবে তারা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলের জন্য আবেদন করে। গত শনিবারই ওই হলে এসএফআইয়ের সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে কড়া আক্রমণ করেছিলেন। সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, “ওই হলটি যে অছি পরিষদ দেখাশোনা করে, তার চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি প্রথমে হল দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেননি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, হলটি সারানো হচ্ছে। তাই ওখানে সভা করা যাবে না।” জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য পাল্টা বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছুই
জানি না।”
পঞ্চায়েত ভোটের ব্যাপারে হাইকোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে যে নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্য সরকারের বাধায় তা কার্যকর করা যাচ্ছে না বলে বামেরা এ দিন রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানায়। বিমানবাবুদের অভিযোগ, কোচবিহারের ফ ব বিধায়ক উদয়ন গুহ-সহ রাজ্য জুড়ে বাম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। যাঁরা আক্রান্ত তাঁদেরই আক্রমণকারী বলে অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে! রাজ্যপাল সক্রিয় ভূমিকা পালন না করলে পঞ্চায়েত ভোট প্রহসনে পরিণত হবে বলে বামেদের মত। বিমানবাবু বলেন, “রাজ্যপালকে সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, তিনিও কিছু জানেন।” প্রার্থীদের নিরাপত্তা, অবাধ পঞ্চায়েত ভোটের দাবিতে আজ, মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে বামেরা অবস্থান করবে। বামেদের কর্মসূচির আগেই এ দিন বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম থেকে মিছিল করে গিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে দেখা করে ভোট স্থগিত না করার দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের মহিলা সংগঠন। কমিশন-রাজ্যের আদালত-যুদ্ধে জনমানসে যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে সংগঠনের তরফে কৌশলে কমিশনের উপরে চাপ বাড়ানো হয়েছে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত।
এ বারই প্রথম পঞ্চায়েতে ৫০% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সেই আসনে যে প্রার্থীরা মনোনীত হয়েছেন, তাঁরা যাতে বঞ্চিত না হন, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখার অনুরোধ করা হয়েছে কমিশনকে। তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সভানেত্রী তথা
মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর নেতৃত্বে মিছিলকে কমিশনের দফতরের কিছুটা আগে আটকে দেয় পুলিশ। বিধায়ক স্মিতা বক্সী, শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন-সহ চার জনের একটি প্রতিনিধিদল কমিশনারের কাছে গিয়ে তাদের দাবি জানায়।
পরে দোলা বলেন, “আগের ৭টি পঞ্চায়েত ভোটের ঘটনাক্রম মাথায় রেখে এ বারের ভোট দ্রুত করার দাবি জানানো হয়েছে। গ্রামে বর্ষায় দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখেও দলমত নির্বিশেষে যে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের স্বার্থে ভোট স্থগিত না করার আবেদন জানিয়েছি।” |