পোস্টার-ফেস্টুনের দাপট
দেওয়াল লেখার শিল্পীরা কোণঠাসা
বিধি নিষেধের কড়াকড়িতে ভোটের প্রচারে ভাটা পড়েছে দেওয়াল লিখনে। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে ফ্লেক্সের পোস্টার, ফেস্টুন। এর উপরে সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও জেলার বেশ কিছু জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন প্রার্থীরা। ওই সব জায়গায় নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। এই অবস্থায় হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন দেওয়াল লিখন শিল্পীরা।
প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি দেওয়ার লিখন অপরিহার্য অঙ্গ। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে দেওয়াল লিখন অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে রং, তুলি-সহ শিল্পীর পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে জটিলতাও। এ ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকে দেওয়ার দখল করে রাখতে হয় রাজনৈতিক দলগুলিকে। তা ছাড়া, সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে লিখে ফেললেই আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। আবার ব্যক্তিগত দেওয়ালে লিখতে গেলে বাড়ি মালিকের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন শুধু তাই নয়, নির্বাচনের পরে ওই দেওয়াল পরিষ্কার করে দেওয়ার শর্ত থাকে। কোনও কোনও সময় বৃষ্টি ও রোদে লিখন নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
সোমবার দুবরাজপুরে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
তার তুলনায় ফ্লেক্সের খরচ কম এবং ব্যবহারও সহজ। নেতাকর্মী, দলীয় প্রতীক ও প্রার্থীর ছবি-সহ আকর্ষনীয় ভাবে তৈরি করা ফেস্টুন বা ব্যানার নির্বাচনের পরে ত্রিপল বা বসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলির হিসেব অনুযায়ী ৩\৬ ফুট একটি ব্যানার তৈরিতে খরচ পড়ে ১৫০-১৭০ টাকা। সম আয়তনের একটি দেওয়াল লিখতে মাঝারি মানের রং ও তুলিতে খরচ পড়ে ১৮০-২০০ টাকা। তার উপরে রয়েছে শিল্পীর পারিশ্রমিক। তাও দৈনিক ৩৫০-৫০০ টাকা। গড়ে দিনে তিন থেকে চার জায়গায় দেওয়ার লিখতে পারেন এক জন শিল্পী। তাই দেওয়াল লিখনকে দূরে সরিয়ে জায়গা দখল করে নিয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। সিপিএমের সাঁইথিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক জুরান বাগদি, তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সহ-সভাপতি সাধন মুখোপাধ্যায় বলেন, “দেওয়াল লিখনের তুলনায় ব্যানার-ফেস্টুনে খরচ কম। ব্যবহারও সহজ। তার উপর আকর্ষনীয় করে তৈরি করা যায়। তাই ব্যানার-ফেস্টুনে গুরুত্ব দিচ্ছি।”
এই পরিস্থিতিতে দেওয়াল লিখন শিল্পীরা বিপাকে পড়েছেন। ১৩ বছর ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে দেওয়াল লিখছেন ময়ূরেশ্বরের কামারহাটির কল্যাণ সূত্রধর, ১৫ বছর ধরে ওই কাজ করছেন দুবরাজপুরের লালবাজারের সন্তোষ দে। তাঁদের কথায়, “অন্যান্য নির্বাচনে আমরা দেওয়াল লিখে গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা রোজগার করি। কিন্তু ফ্লেক্সের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কাজ কমে গিয়েছে। কার্যত এ বার হাত গুটিয়ে বসে রয়েছি। সাকুল্যে ৩-৪ হাজার টাকাও আয় হয়নি।” এর উপরে এ বার জেলার বেশ কিছু জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সেখানে দেওয়াল লিখনের প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নানুর, লাভপুর ব্লক-সহ বোলপুর মহকুমার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৃণমূল মনোনীত প্রার্থীরা ছাড়া অন্য দলের কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। দেওয়াল দখল হয়ে থাকলেও ওই সব জায়গায় প্রচার লিখন থমকে গিয়েছে। লাভপুরের মহু গ্রামের গৌতম আচার্য, নানুর হাসপাতাল কলোনির স্বপনকান্তি ভট্টাচার্যরা বলেন, “নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরে প্রথম দিকে সামান্য কিছু দেওয়াল লিখনের কাজ হলেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.