কোথাও পানীয় জলের সমস্যা, কোথাও মিড-ডে মিল রান্নার ঘর নেই, আবার কোথাও লাগামছাড়া দূষণে জেরবার ছাত্রছাত্রীরা। স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ, বারাবনি ব্লকের বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুল এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির হাল এমনই। দ্রুত স্কুলগুলির হাল ফিরিয়ে সামগ্রিক উন্নয়নের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের আশা, পঞ্চায়েত ভোটের পরে হয়ত সমস্যাগুলি মেটাতে উদ্যোগী হবেন কর্তৃপক্ষ।
বারাবনি ব্লকে মোট ৮৮টি প্রাথমিক স্কুল ও ৩৭টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। প্রাথমিক স্কুলগুলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অধীনে থাকলেও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির দেখভাল করে পঞ্চায়েত সমিতি। সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য ঘরও বানিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা। কিন্তু পানীয় জলের অভাব ও দূষণের জন্য মাঝেমধ্যেই স্কুলগুলিতে রান্না বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এছাড়া পুচরা, দোমহানি বা বারাবনি পঞ্চায়েত এলাকার স্কুলগুলিতে পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা যায়। এলাকাবাসীরা জানান, দোমহানি সিংহবাহিনী আদিবাসী স্কুল, গোপালবাঁধ স্কুল, পুচরার স্থানীয় অবৈতনিক স্কুল, বারাবনি মাজিয়ারা উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য পানীয় জল জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম দশা সয়ম্বর গোষ্ঠীগুলির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকও জানান, জলের অভাবে মাঝেমধ্যেই মিড ডে মিল বন্ধ রাখতে হচ্ছে তাঁদের। |
রেল ইয়ার্ড লাগোয়া এই স্কুলই সব চেয়ে ভুক্তভোগী। —নিজস্ব চিত্র। |
এছাড়া খনি অঞ্চল হওয়ায় বারাবনির প্রায় সবকটি রাস্তা দিয়েই দিনের বেশিরভাগ সময়ে ডাম্পার ও লরি বোঝাই করে কয়লা পরিবহন চলে। ফলে কয়লার গুঁড়োতে খনি ও রাস্তা লাগোয়া স্কুলগুলির জেরবার দশা। বারাবনির জামগ্রাম লাগোয়া স্কুল, লিঙ্ক রোড লাগোয়া নতুনডিহি স্কুল এবং বারাবনির স্টেশন ও রেল সাইডিং সংলগ্ন স্কুলগুলিতে দূষণ অতিরিক্ত ভাবে ছনিয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই স্কুলগুলির শিক্ষকেরাও জানান, স্কুলের মেঝে, চেয়ার, বেঞ্চে কয়লা গুঁড়োর পুরু আস্তরণ পড়ে থাকে। কুয়োর জলও কয়লার গুঁড়োয় ভর্তি। এমনকী মিড-ডে মিলের রান্নাতেও কয়লার গুঁড়ো পড়ে কালো হয়ে যায় বলে তাঁদের দাবি। বাসিন্দারা জানান, দূষণ ঠেকাবার দাবি জানিয়ে তাঁরা বহুবার আন্দোলন করেছেন। একাধিকবার রাস্তা অবরোধ হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে বিক্ষোভ ডেপুটেশনও হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনও হেরফের হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের মধ্যেও এ নিয়ে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির হাল অবশ্য আরও বেহাল। দোমহানি পঞ্চায়েতের মোলডাঙা আদিবাসী শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে দেখা যায়, মেঝেতে চট বা শতছিন্ন পাটি বিছিয়ে গাদাগাদি করে বসে পড়ছে পড়ুয়ারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ব্লকের প্রায় সবকটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের দশায় এমন। সিপিএমের বারাবনি লোকাল কমিটির সম্পাদক তীর্থঙ্কর পাত্র জানান, তাঁরা একাধিকবার ব্লকের প্রাথমিক স্কুল ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির সমস্যা মেটানোর দাবি তুলেছেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রভাত রায়ও। তবে তাঁর দাবি, গত পাঁচ বছরে বারাবনির স্কুলগুলির উন্নতি হয়েছে। মিড-ডে মিল রান্নার ঘর বানানো হয়েছে। তবে কয়েকটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে রান্নাঘর বানানো যায়নি। দূষণ সমস্যা নিয়ে তিনি জানান, যেহেতু কয়লা শিল্পায়নের একটি মূল অস্ত্র, তাই কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় না। সেক্ষেত্রে যে সব এলাকায় রাস্তার পাশে স্কুল রয়েছে সেখানে বনসৃজনের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন তিনি। প্রভাতবাবু বলেন, “এ বার ক্ষমতায় এলে এসব সমস্যার সমাধান করে দেব।” শিক্ষা সংসদের বারাবনি শিক্ষা চক্রের পরিদর্শক ভরত ঘোষের দাবি, এই সমস্যাগুলি বরাবরের। তাও পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল হয়েছে। নির্বাচনের পরে এই বিষয়গুলি নিয়ে সমিতির সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। |