দুর্দিনে বসে গেলে দাওয়াই, বলছে সিপিএম
দুর্গাপুরে পুরভোটের সময়েই কিছু নেতা-কর্মীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দলের মধ্যে। সেই সব দলীয় সদস্যদের কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কারণ কী, সে নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছিল সিপিএমে। শুধুই শাসকপক্ষের ‘সন্ত্রাস’, না কি তলায় তলায় তৃণমূলের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করেছেন ওই নেতারা, প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। জেলার কিছু এলাকায় এমন কয়েক জন নেতাকে চিহ্নিত করেছে সিপিএম। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, এমনকী প্রয়োজনে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে চলেছে বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের প্রক্রিয়া চলাকালীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাদের প্রার্থীদের উপরে হামলার অভিযোগ বারবার তুলেছে সিপিএম। দলের কর্মী-সমর্থকদের টানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকায় স্থানীয় নেতাদের পাশে না পাওয়ায় নিচুতলার কর্মীরা দিশেহারা হয়েছেন, এমন খবর পৌঁছেছে দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, মঙ্গলবার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ওই সব নেতাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হতে পারে।
বর্ধমান জেলা সিপিএমের একটি সূত্রে জানা যায়, একেবারে শেষলগ্নে একযোগে বহু প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের কারণ খুঁজতে গিয়ে তাজ্জব বনে যান দলের জেলা নেতৃত্ব। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে অনেক জায়গায় প্রার্থী দেওয়া যায়নি। কিন্তু অনেক এলাকায় পার্টি সদস্যদের একাংশও যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি। আক্রান্ত প্রার্থীদের নিয়ে গিয়ে বিডিও বা মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হওয়া বা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে উদ্যোগী হননি তাঁরা। প্রকাশ্যে সরব হওয়া তো দূর, ঘটনার নিন্দা বা বিরোধিতার সুরও শোনা যায়নি তাঁদের কাছ থেকে।
সম্প্রতি দুর্গাপুরে সিপিএমের অফিস আশিস জব্বর ভবনে বৈঠকে বসেন সিপিএম জেলা নেতারা। পরে তাঁদেরই এক জন জানান, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের প্রতাপপুর ও জেমুয়া বাদে বাকি চারটি পঞ্চায়েতেই বেশ কিছু প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, লাউদোহা পঞ্চায়েতের ১১টি আসন থেকে মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন দলের প্রার্থীরা। ওই পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। গৌরবাজার পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের ৪টি থেকে মনোনয়ন তুলেছেন সিপিএম প্রার্থীরা। ফলে, সেখানে আর একটি আসনে জিতলেই পঞ্চায়েতের দখল পাবে তৃণমূল। এ ছাড়া গোগলা পঞ্চায়েতের ১৯টির মধ্যে ৬টি এবং ইছাপুরে ১৮টির মধ্যে ৬টি আসনেও সিপিএম প্রার্থীরা সরে দাঁড়িয়েছেন। ওই নেতার দাবি, “সন্ত্রাস যে হয়েছে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কিছু জায়গায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কার্যত কোনও প্রতিরোধ হয়নি। ফলে কিছু প্রার্থী এবং সাধারণ সমর্থক সাহস হারান।” তিনি জানান, এই সব এলাকার দায়িত্বে থাকা পার্টি সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হতে পারে বলে তাঁর দাবি। ধাপে ধাপে গোটা জেলাতেই এই প্রক্রিয়া সারা হবে, জানিয়েছেন তিনি।
সিপিএমের একটি সূত্রে জানা যায়, কাঁকসার কিছু দলীয় সদস্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, এক জোনাল সদস্যের স্ত্রী এ বার পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহার করেন। জোনাল নেতাই যদি স্ত্রীর মনোনয়ন প্রত্যাহার ঠেকাতে না পারেন, তাহলে অন্যদের কী পরিস্থিতি হবে, সেই প্রশ্ন তোলেন এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা। ওই জোনাল সদস্যও সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন বলে খবর।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর ১ (বি) জোনাল এলাকার লাউদোহা, গোগলা ও ঝাঁঝড়া লোকাল কমিটির এক জন করে সদস্যকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা দুর্গাপুর-ফরিদপুরের সিপিএম নেতা শিশির ঘোষ বলেন, “একটি কমিটি সব খতিয়ে দেখছে। দলীয় তিন সদস্যকে আমরা ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছি।” দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক রথীন রায় অবশ্য বলেন, “লাগামছাড়া সন্ত্রাস হয়েছে। তবে কিছু পার্টি সদস্যের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনই এর বেশি বলা সম্ভব নয়।”
লোকসভা ভোটের পর থেকে নানা নির্বাচনে দলের খারাপ ফলের জন্য সারা রাজ্যের মতো বর্ধমানেও শুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে সিপিএম। তারই অঙ্গ হিসেবে বিধানসভা ভোটের পরপরই এক লপ্তে প্রায় তিন হাজার কর্মীর দলীয় সদস্যপদ খারিজ করা হয়। পুরভোটের পরে দুর্গাপুরের এক লোকাল কমিটির সম্পাদককে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “দলের মধ্যে অনুগত কর্মীদের বাছাইয়ের কাজ চলছে। হাজার হাজার কর্মীর মধ্যে হয়তো দু’এক জন কোনও কারণে নিজের ভূমিকা পালন করছেন না। সব নজরে রাখা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.