সৈদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪টি মৌজা দক্ষিণ দিনাজপুরের বদলে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকে অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছিলেন বাসিন্দারা। তা নিয়ে মামলায় কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর বোর্ড গঠন হয়নি হরিরামপুর ব্লকের সৈয়দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের ওই এলাকায় তাই সার্বিক গ্রাম উন্নয়নের কাজও থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ। ফের পঞ্চায়েত ভোটের মুখে উন্নয়নের হিসাব চেয়ে সরব বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে এখন বাম, ডান রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রচারে নেমেছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক প্রলয় রায়চৌধুরী জানান, সৈয়দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুরমানপুর, ভবানীপুর বেজপুকুর, বিমলপাড়া এবং সৈয়দপুর পশ্চিম এই ৪টি মৌজার মানুষ দক্ষিণ দিনাজপুরের বদলে আগের মতো উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের সঙ্গে এলাকাগুলির অন্তর্ভুক্তির দাবি তোলেন। তাঁরা উচ্চ আদালতে মামলাও করেন। তার জেরে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হয়নি।” পঞ্চায়েত আধিকারিক প্রলয়বাবুর দাবি, রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মৌজাগুলি হরিরামপুরের অংশ ধরে পুনর্বিন্যাস করে নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। পুরনো মামলার জের আর থাকছে না। নতুন বোর্ড গঠনে সমস্যা হবে না। তবে বাসিন্দারা ফের মামলায় গেলে আগের মতোই জটিতলা হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
১৯৯২ সালে বাম জমানায় সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভাগ হয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর গঠন হয়। চারটি মৌজার বাসিন্দারা তা মানেননি কেন না হরিরামপুরের চেয়ে দূরত্বের বিচারে তাদের অনেক কাছে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লক। ২০০৮ সালের মে মাসে পঞ্চায়েত ভোটে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১১টি এবং সিপিএম ৩টি আসনে জয়ী হয়। এর পরই জুনের শেষে সৈয়দপুরের ৩ জন সদস্যকে ইটাহার ব্লকের পতিরাজ গ্রামপঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত করার সরকারি নির্দেশ আসে। নির্দেশ মতো ভবানীপুর বেজপুকুর সংসদের দু’জন কংগ্রেস গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য পতিরাজপুরে শপথ নেন। কিন্তু বিমল পাড়ার সিপিএম সদস্য পতিরাজপুরে যোগ দেননি। তাঁর দাবি, ইটাহারে নতুন গ্রামপঞ্চায়েত তৈরি হলে তিনি যেতে রাজি। অন্যথায় দক্ষিণ দিনাপুরের সৈয়দপুরে থেকে যাবেন। এ নিয়ে দু’তরফে মামলা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে বহু রাস্তা তৈরি থেকে গ্রাম উন্নয়নের অনেক কাজই ব্যহত হয়েছে বলে অভিযোগ।
জেলা কংগ্রেস সম্পাদক মিজানুর রহমানের অভিযোগ, “সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে সিপিএম আমাদের বোর্ড গঠন আটকাতে বিমলপাড়ার সদস্যকে দিয়ে মামলা করায়।” সিপিএমের হরিরামপুর জোনাল সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম পাল্টা দাবি করে বলেন, “বিমলপাড়ার দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য আলাদা পঞ্চায়েত গঠনের দাবি করে মামলায় গিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস জেলা ভাগের জন্য এলাকা পুনর্বিন্যাসের সমস্যা না মিটিয়েই গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন না করার জন্য মামলা করে জটিলতা বাড়িয়েছে।” তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সোনা পালের অভিযোগ, মামলা মোকদ্দমা করে সৈয়দপুরে অচলাবস্থা তৈরি করে সিপিএম এবং কংগ্রেস।
সৈয়দপুরের খয়েরবাড়ি এলাকার দিনমজুর আব্দুল মণ্ডল বলেন, “জব কার্ড থেকেও লাভ হয়নি। ১০০ দিনের কাজ না পেয়ে অধিকাংশ মানুষ ভিন রাজ্যে গিয়েছেন।” গ্রামবাসীরা বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, ইন্দিরা আবাসের ঘর থেকে বঞ্চিত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নলকূপ দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে গেলে সারানো হয়নি। পঞ্চায়েত অফিসে যাওয়ার একটি রাস্তাও ঠিক নেই। |