মানিকচকে নৌকাডুবিতে ১০ জন যাত্রী মারা যাওয়ার পরেও সেই গঙ্গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভুটভুটি নৌকায় যাত্রী পারবার চলছেই বলে অভিযোগ। নৌকাডুবির ঘটনার রুস্তমপুর ফেরিঘাটে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকায় পারাপার সাময়িক বন্ধ হলেও মানিকচকের বাকি ৮টি ঘাটে একই অবস্থা রয়েছে বলে অভিযোগ। গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা অন্তত ২৪টি চরে চাষাবাদ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১০ হাজারের বেশি গ্রামবাসী পারাপার করেই চলছেন। এই ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির অভাবেরও অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের।
দুর্ঘটনার ডেরে সতর্ক করার পরেও ভুটভুটিটে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে নদী পারপার বন্ধ না হওয়ায় জেলা প্রশাসন কাল, মঙ্গলবার জেলার সমস্ত নদীর মাঝি ও ঘাটোয়ালদের বৈঠক ডেকেছে। মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “মানিকচকের ঘটনার পরেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকায় গঙ্গা পারাপারের অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আনতেই হবে। আমরা প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছি। সেখানে মাঝি ও ঘাটোয়ালদেরও ডাকা হচ্ছে।
তিনি জানান, গঙ্গার পাশাপাশি জেলার সমস্ত বড় নদীতে যাত্রী পারাপারের উপর নিয়ন্ত্রন আনতে জেলাপরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের নিয়ন্ত্রনাধীন গঙ্গা, মহানন্দা, ফুলহার, কলিন্দ্রী নদীর ঘাটের ঘাটোয়াল ও মাঝিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে তাঁদের নদী পারাপারের সমস্ত নিয়মকানুন প্রতিটি ঘাটে সরকারি নোটিশ বোর্ড ঝোলানো হবে। প্রশাসন নজরদারি করবে। আইন ভাঙলে এবার কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার, লিজ বাতিলও করা হবে।
একইভাবে জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারপার রুখতে জেলার সমস্ত থানার আইসি-ওসিদের নজর রাখার জন্য নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারাপারের অভিযোগ পেলেই মাঝি ও ঘাটোয়ালদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহের আবজুন বিবি জানান, গঙ্গায় প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের জন্য নৌকাডুবি হচ্ছে। আমরা বারবার বলেও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বন্ধ করতে পারিনি। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে কিছু হবে না। যা এখনও হচ্ছে।
মানিকচকের বিডিও সাংগে ডুকপা বলেন, “কিছুতেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারাপার বন্ধ করা যাচ্ছে না। বাসিন্দারা সতর্ক না হলে কিছু করার নেই।” গঙ্গাভাঙন প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির সদস্য খিদির বক্স জানান, এ দিনও পঞ্চানন্দপুর ঘাট থেকে এক নৌকায় গরু ও মানুষ পারাপার করেছে। কেউ বাধা দেয়নি।
মানিকচকের নিউকদম তলার সুরেশ মন্ডল , ওয়ায়েদমারার শেখ সামসুদ্দিন জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। একটি নৌকা ছাড়ার পর এক-দুইঘন্টা পর পর ভুটভুটি ছাড়ছে। দেরিতে চরে পৌঁছালে কাজ পাওয়া যাবে না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পারাপার হতে হচ্ছে। |