রোগা ছিপছিপে চেহারা। গায়ের রং ফর্সা। হাতে শাখা পলা আর নোয়া। আর কোনও গয়না নেই। সাদামাঠা ঘরোয়া মহিলা। পরনে ছাপা শাড়ি। কাজের পাশাপাশি মেয়ে সামলাতে ব্যস্ত বছর ২৫-র রীতা রায়। এ ঘর থেকে ও ঘরে দৌড়ে যাচ্ছেন কাজ দ্রুত শেষ করতে। গরমে ঘেমে নেয়ে রান্নার করতে করতে ছুটে এলেন দেড় বছরের মেয়ের চিৎকারে। খালি গায়ে মাটি মেখে ঘুরে বেড়ানো মেয়েকে হাত-পা ধুইয়ে তৈরি করলেন। মেয়েকে নিয়েই যেতে হবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে। ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে হলদিবাড়ি নেতাজি সুভাষ কলেজ থেকে পাশ করেছেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকের পর বিয়ে। তারপর ঘর সামলে পড়াশুনা। এ বার সংসার সামলে রাজনীতিতে!
কাঁচা রাস্তা, বাড়িতে ঢোকার মুখে কিছুটা খোলা জায়গা। দুটি পাকা ঘর আর বারান্দা। উঠোনের এক পাশে তুলসী মঞ্চ। বাড়ির বাইরে খেলছিল দেড় বছরের মেয়ে। আর মাটির রান্না ঘরে প্রতিদিনের মত রান্না করছিলেন বোয়ালমারি নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী রীতাদেবী। কিন্তু রান্নার সময়ই তাঁকে ডাকাডাকি শুরু করেছেন বাসিন্দারা। তাড়া দিতে শুরু করেছেন রীতাদেবীর স্বামী হরিপদবাবু। সব শেষ করে মেয়েকে কোলে নিয়ে শতাধিক সমর্থকের সঙ্গে রওনা হলেন জলপাইগুড়ি সদর ব্লক অফিসে।
মনোনয়ন জমা দিয়ে ফিরে আসার পরও আশেপাশের লোকেরা ছিলেন বাড়িতে। গরমে অস্থির হয়ে কান্নাকাটি করছিল মেয়ে অনুস্মৃতি। তাকে সামলে ফের কাজে লেগে পড়লেন রীতাদেবী। বিকেল হতেই বাড়ির উঠোন পরিষ্কার করে তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ফের রান্নার কাজে হাত লাগালেন। গ্রামের আর পাঁচ জন মহিলার মতই সংসারের কাজ করে উন্নয়নের কাজ করতে তিনি উৎসাহী। তাই এ বার ভোটে প্রার্থী।
গ্রামের অন্য মহিলার মত সাধারণ রীতাদেবী। প্রথম বার প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আগে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। প্রতিবেশীদের দাবি আর স্বামী তাঁকে দাঁড়াতে বলেছেন তাই। তাঁর কথায়, “সংসার সামলে সব কাজ করতে পারব। স্বামীও কিছুটা সাহায্য করবে। কাজের মাঝে প্রচার সারব। বিকাল নাগাদ একটানা প্রচার করব।” স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে খুশি হরিপদবাবু। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক রীতাদেবীর স্বামী বলেন, “স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় আমি খুশি। ওর কাজে সাহায্য করব। এলাকার মানুষের সঙ্গে ওঁর খুব ভাল সম্পর্ক তাই প্রার্থী হতে বলি।”
বোয়ালমারি নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বামেদের দখলেই ছিল। এলাকায় ১০০ দিনের কাজ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরি হলেও জলের কিছুটা সমস্যা রয়েছে। সজলধারা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তা শেষ না হওয়ায় জল পাননি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। রীতাদেবী বলেন, “যদি জিতি প্রথমেই জলের সমস্যা মেটাতে চেষ্টা করব। পাশাপাশি সেচের জলের ব্যবস্থা করব। রাস্তাঘাট-সহ নানা প্রকল্পে নজর দিতে হবে।”
রীতা দেবীর জয় নিয়ে আশাবাদী স্থানীয় বামফ্রন্ট নেতারা। তাঁরা বলেন, “কানাপাড়া বুথে রীতা রায় জিতবে। তৃণমূল সরকার পঞ্চায়েতগুলির অবস্থা যা করছে তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তাই জয় নিশ্চিত।” |