যুদ্ধ পরে, চর বাঁচাতে ভোটে বন্ধু সব দল
দীর হাল তো ভাল ঠেকছে না গো কর্তা! ভিড়ে ঠাসা নৌকার এক মাথায় বসে বললেন নিবারণ সরকার। পাহাড়ে মাত্র ক’দিনের বৃষ্টিতেই তিস্তা সবে ফুঁসতে শুরু করেছে। পাক খেয়ে ঘোলা জল আছড়ে পড়ছে চরের গায়ে। খসে পড়ছে বালি-মাটির চাঙর। নৌকায় মাঝির পাশে বসে গুনগুন করে গান ধরেছিলেন হারাধন দাস। তিস্তার বুকে জেগে থাকা মতিয়ার চরের বাসিন্দা। বয়স ষাট। সাদা চুলে হাত বুলিয়ে নিবারণবাবুর দিকে চেয়ে বললেন, “কী আর খারাপ হবে গো। আমাগো কষ্ট কেডা বুঝব। ভোট আইছে। কত নেতার ভিড় চরে। অন্য সময় কেউ তো পুছেও না।”
ভোট দেবেন না?
এই প্রশ্ন শুনে হারাধনবাবু নদীর ওই পারে বাঁধের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু পরে বললেন,“দেখি।”
এক তিস্তা অভিমান নদীতে ঘেরা ময়নাগুড়ি ব্লকে মতিয়ার চর, পদমতির চর, লক্ষ্মীর চর, ফাটার বাড়ি কিংবা জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাহির চর, কালামপুর চর, কোচবিহার মেখলিগঞ্জে নিজতরফ চর জুড়ে। অন্তত ১৫ হাজার মানুষের বাস। মতিয়ার চরে ভোটদাতা প্রায় ৩০০, কালামপুরে প্রায় চারশো। বিস্তর অভিযোগ। ২০০৯ সালে অন্তত একশ জনকে নিয়ে চর বাঁচাও কমিটি গড়বেন কেন ওঁরা। শুধু তাই নয়, তিস্তার জলের মত অভিমানের স্রোত সাফ করেছে রাজনৈতিক দ্বৈরথ। চর বাঁচাও কমিটিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভিটে চাষের জমি রক্ষার জন্য লড়ে যাচ্ছেন সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা। পিঠার বাড়ি থেকে মেখলিগঞ্জের নিজতরফ পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিমি বাঁধ তৈরির জন্য আন্দোলন চলছে। চর বাঁচাও কমিটির সভাপতি শান্তি রায় কংগ্রেস সমর্থক। সম্পাদক জিতেন বিশ্বাস সিপিএমের সমর্থক। রয়েছেন তৃণমূলের কর্মী অনিল রায়, আমিনুল রহমান। প্রত্যেকে বলছেন, “ভোট আসে-যায়, কিন্তু ভিটে মাটি, চাষের মাঠ রক্ষার জন্য কেউ এগিয়ে আসেন না।” এ বার কমিটি নিজেরাই প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সভাও করা হয়। কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক বলেন, “প্রার্থী দেওয়া হবে ঠিক ছিল। অনেকে বলেছেন প্রার্থী দিলে শত্রুতা বাড়বে। কেউ ভোট বয়কটের কথা বলেছেন। অশান্তি চাই না বলে সরে দাঁড়িয়েছি।”
এই সিদ্ধান্তের কথা শোনার পর রাজনৈতিক দলগুলিও সক্রিয়। বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলছে প্রত্যেকে যেন ভোট দেন। ভোট দিতে চরের লোককে নদী পার হয়ে, নলখাগড়ার জঙ্গল দিয়ে সাত কিমি পথ ভেঙে বুথে যেতে হবে। সব দলই নৌকার ব্যবস্থা করতে তৎপর। ময়নাগুড়ি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শশাঙ্ক বসুনিয়া বলেন, “ওটা নিরপেক্ষ সংগঠন। চরে লোকজন যেন ঠিকমত ভোট দিতে পারেন তা দেখা হচ্ছে।” সিপিএমের ময়নাগুড়ি জোনাল সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলেন, “ভরা বর্ষায় নদী পথে যাতায়াতের বিষয়টির জন্য প্রশাসনের কর্তাদের বলা হয়েছে।”
তিস্তা চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা জানেন প্রশাসনের কর্তারাও। জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “চরের বাসিন্দার দাবি খতিয়ে দেখার জন্য সেচ দফতর সমীক্ষা করছে।” সেই সঙ্গে প্রশাসনের কাছে খবর যাঁরা চরে আছেন, বাঁধের ওপারেও তাঁদের একাংশের বাড়ি আছে। জেলাশাসক বলেন, “ওদের সরতে বলা হয়েছে।”
চরের বাসিন্দারা নদী বাঁধের ও পারের এলাকাকে বলেন কায়েম। চরে সবজি ও ধান চাষ করে অনেকে কায়েম-এ জমি কিনেছেন। সেখানে ছেলেমেয়েদের রেখে পড়াচ্ছেন। বর্ষা এলে অনেকে সেখানে আশ্রয় নেন। প্রায় প্রতি বছর তিস্তা খাত পাল্টাচ্ছে। তখন জলোচ্ছ্বাসে পুরনো চর নিশ্চিহ্ন হয়ে নতুন চর জাগছে। ভেসে যাচ্ছে গাছগাছালি, ঘরদোর সংসার। আশ্রয় নিতে হয় কায়েমে। স্থানীয় সন্দীপন সরকার বলেন, “কায়েমে এক বিঘায় ৬০ মন আলু হয়। চরে দেড়শ মন শাকসবজি। বিপদ বুঝেও তাই সোনার জমি ছেড়ে কেউ যেতে রাজি নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.