জলপাইগুড়ির ফুলবাড়িতে কংগ্রেসের সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর হালদারের সমর্থনে প্রচার চালানোর সময়ে সিপিএম কর্মীরা হামলা চালান বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। কংগ্রেসের দাবি, চুনাভাটি এলাকায় কংগ্রেসের বুথ অফিস ভেঙে দিয়ে সমর্থকদের মারধর করা হয়। করিম আলি এবং রহিমা খাতুনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায় এবং রাজগঞ্জ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক রাতেই পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যদিও সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার দাবি করেছেন, “ইচ্ছেকৃতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই অভিযোগ তোলা হয়েছে।”
|
জলপাইগুড়িতে তৃণমূল কার্যালয়ে পুলিশ প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র। |
গত বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে পলাশতলিতেই সিপিএমের সমর্থকদের হাতে কংগ্রেস নেতা সূর্যমোহন দেবনাথের খুনের অভিযোগ ওঠে। একই দিনে জেলার রাজগঞ্জের মিলনপল্লিতে তৃণমূল সমর্থকদের হাতে জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসুর আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগও ওঠে। এদিন কংগ্রেসের জেলা কংগ্রেস সভাপতির উপর হামলার ঘটনায় রাজগঞ্জের দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরা দুজনেই তৃণমূল সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত। হামলার ঘটনায় তৃণমূল নেতা কর্মী-সহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে ঘটনার তিনদিন পরে ২ জনকে গ্রেফতার করার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ কংগ্রেস নেতারা।
ঘটনার পর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা পুর চেয়ারম্যান মোহনবাবুকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর চোখের নীচে গুরুতর চোট রয়েছে। এদিন দলের তরফেই তাঁকে সদর হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে নেওয়া হয়। আজ, সোমবার শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি চোখের হাসপাতালে মোহনবাবুকে ভর্তি করা হবে। ঘটনার জেরে জলপাইগুড়ি শহরেও রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের পাটগোলা তৃণমূল পার্টি অফিসে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।
জলপাইগুড়ি শহর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “তৃণমূলের এখন পুলিশের নিরাপত্তায় থাকা ছাড়া উপায় নেই। ওঁরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার তৃণমূল বিধায়ক পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।” রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, “দলের কেউ মোহনবাবুর উপর আক্রমণে জড়িত নয়। কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
পাশাপাশি, আলিপুরদুয়ারে কংগ্রেস কর্মী খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও এক অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই নিয়ে এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতেরা সকলেই সিপিএম সমর্থক বলে কংগ্রেসের দাবি। কংগ্রেস কর্মী খুন এবং জেলা কংগ্রেস সভাপতির উপর হামলার ঘটনার জেরে বুধবার জেলা বন্ধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। সেই বন্ধ সমর্থনে জেলা জুড়ে প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেস।
এই পরিস্থিতে আজ, সোমবার জেলায় এসে পৌঁছোবে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি আলিপুরদুয়ারের পলাশতলিতে যাবে। সেখানে তাঁদের একটি জনসভা করার কথা রয়েছে। কাল, মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলটি মোহনবাবুকে দেখে, মিলনপল্লি এলাকা পরিদর্শন করবে। রাজগঞ্জের মিলনপল্লি এলাকাটি জলপাইগুড়ি জেলায় হলেও এলাকাটি শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতাভুক্ত। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকেও স্মারকলিপি দেবে প্রতিনিধি দলটি।
রবিবারও আলিপুরদুয়ারের পলাশতলিতে পুলিশ পিকেট ছিল। এলাকার অনান্য গ্রামে ভোটের প্রচার শুরু হলেও পলাশতলি গ্রামে প্রচার থমকে রয়েছে। গত তিনদিন কোনও রাজনৈতিক দলই গ্রামে প্রচার করেনি। |