সম্পর্কের ‘সুসময়ে’ পঞ্চায়েত ভোটেও এ বার তৃণমূলের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ডুয়ার্সের যে এলাকাগুলিতে চা বাগান রয়েছে, তার কালচিনি, মাদারিহাট, বাগরাকোট, কুমারগ্রাম, জয়গাঁ এলাকায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় দুশো আসনে প্রার্থী দিয়েছে মোর্চা। এই সব এলাকাতেই প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূলও। আজ, সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারই মোর্চার বিরুদ্ধে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “আমরা চাই মোর্চার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক।
ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে আলোচনা করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে কোনও না কোনও পথ ঠিকই বার করা যাবে।”
|
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে মোর্চা নেতাদের বৈঠক। রবিবার দার্জিলিঙে। ছবি: রবিন রাই। |
রবিবার গৌতমবাবুর সঙ্গে মোর্চার নেতাদের ঘণ্টাখানেক ধরে বৈঠক হয়েছে দার্জিলিংয়ে। ওই বৈঠকে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি-সহ বৈঠকে ছিলেন মোর্চার দুই বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী এবং ত্রিলোক দেওয়ানও। রোশন ও হরকাবাহাদুর মোর্চা নেতাদের মধ্যে তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। দিনহাটা থেকে গৌতমবাবুর দার্জিলিং যান। বৈঠকের পরে রোশন বলেন, “মোর্চা মোট ১৮৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩৭টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের ৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।” গৌতমবাবুর কথায়, “ভোট আসে যায়। কিন্তু সম্পর্কটা বেশি জরুরি। আমরা চাই পাহাড় ও সমতলের মেলবন্ধন অটুট থাক।”
বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ও মোর্চার মধ্যে জোট হয়েছিল। ২০টি আসনে মোর্চা তৃণমূলকে সমর্থন করে। তবে তার পরে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে দু’দলের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরে। তার পরে আবার সম্পর্কের বরফ সম্প্রতি গলেছে। তৃণমূল অন্দরের খবর, যদি কোথাও শেষ পর্যন্ত মোর্চার বিরুদ্ধে প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা
যায়, তা হলে সেই সব ক্ষেত্রে জিটিএ নির্বাচনের মতো ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হবে। ওই নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও ভোটের মুখে প্রচার করে দেন যে, তাঁরা নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাই ব্যালটে নাম থাকলেও, তাঁরা নিজেদের পক্ষে ভোট দেওয়ার কোনও প্রচারও করেননি। কিন্তু তবু, তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে ভোট পড়ে।
এ বার ভোটে মোর্চার জোট রয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র সঙ্গে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেএমএম যে আসনগুলিতে প্রার্থী দিয়েছে, সেগুলির সঙ্গে অবশ্য কোনও রকম সমঝোতায় যাচ্ছেন না তাঁরা।
তৃণমূল ও মোর্চার এই দিনের বৈঠকে পাহাড়ে উন্নয়ন নিয়েও কথা হয়েছে। মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের অনুরোধ মতোই এই দিন এই বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পরে গৌতমবাবু বলেন, “প্রতি মাসেই এই রকম বৈঠক করার কথা হয়েছে। কেননা, সেক্ষেত্রে পারস্পরের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা করে অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধান করে ফেলা যাবে।” রোশনও বলেন, “আমরা রাজ্য সরকার ও জিটিএর মধ্যে সম্পর্ক ঝালাই করে নিতেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে জিটিএ সুষ্ঠুভাবে চালাতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা খুশি।” |