কনফেডারেশন কাপ অভিযান শুরু হতে না হতে দু’টো ব্যাপার ঘটে থাকল ব্রাজিলে।
এক, ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব বিদ্রোহ দেখা গেল দেশবাসীর। এক অদ্ভুত অভিযোগকে কেন্দ্র করে। যা শেষ পর্যন্ত বদলে গেল দাঙ্গায়! মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়িতে স্রেফ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল! যে ঘটনায় আহত হলেন ৩৮ জন। তিরিশ জন গ্রেফতার।
দুই, জাপানের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এক আশ্চর্য যুদ্ধে নেমে পড়তে হল নেইমার-অস্কারদের। যে যুদ্ধটা দেশের সর্বকালের সেরা কিংবদন্তি পেলের বিরুদ্ধে!
প্রথম ঘটনার প্রেক্ষাপট কনফেড কাপের উদ্বোধনী ম্যাচ শুরুর প্রাক্-মুহূর্ত।
দ্বিতীয় ঘটনার প্রেক্ষাপটউদ্বোধনী ম্যাচ শেষের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা।
শনিবার ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকে মানে গ্যারিঞ্চা স্টেডিয়ামের বাইরে হাজারখানেক মানুষের ভিড় জমতে দেখা যায়। যাঁদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের ঠকিয়ে, তাঁদের টাকা দিয়ে বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম তৈরি করছে ফুটবল ফেডারেশন। চিৎকার করে বলা হতে থাকে, ফেডারেশন নব্বই শতাংশ টাকা খরচ করেছে দেশবাসীর পকেট থেকে। তাঁদের ঠকিয়ে। যা নাকি আগে প্রাইভেট ফান্ড থেকে দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছিল ফেডারেশন। ‘ফিফা গো ব্যাক’ বলে তুমুল বিদ্রুপ শুরু হয়ে যায়। মাঠে ঢোকার রাস্তা আটকে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও নির্বিচারে লাঠি চালাতে শুরু করে। পরে গ্রেফতার করাও শুরু হয়। |
কনফেড-উদ্বোধনে অভিনব দাঙ্গা দেখল ব্রাজিল |
মাঠে যদি নেইমারদের পারফরম্যান্স মাঠের বাইরের বিদ্রোহকে কিছুটা প্রশমিত করে থাকে, তা হলে নতুন যুদ্ধের খোঁজ পাওয়া গেল ম্যাচ শেষের কয়েক ঘণ্টা পরেই।
খোদ ফুটবলসম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হল তাঁর পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশকে! এবং নামিয়ে দিল ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যম।
ঘটনাটা কী?
কনফেড-যুদ্ধে নামার এক দিন আগে ফুটবলসম্রাট সাফ বলে দিয়েছিলেন, নেইমারদের ব্রাজিলের পক্ষে সম্ভব নয় কনফেডারেশন কাপ জেতা। যতই সেটা নিজেদের দেশে হোক। বরং স্পেনকে এক নম্বর বাজি হিসেবে ধরছিলেন পেলে। শনিবার রাতে জাপানের বিরুদ্ধে জয়ের পরপরই তাই গোটা বিশ্বের প্রচারমাধ্যমে বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছে যে, পেলের প্রিয়পাত্র নেইমারের দায়িত্ব এখন পেলেকে ভুল প্রমাণ করা। ‘ডেইলি মেল’ যেমন লিখে ফেলেছে, কাপ জেতার থেকেও ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পেলেকে জবাব দেওয়া।
পেলের মন্তব্য নিয়ে কোনও পাল্টা মন্তব্য শোনা যায়নি নেইমার বা অন্য কোনও ‘সেলেকাও’ প্লেয়ারের মুখ থেকে। কিন্তু শনিবার ব্রাজিলের পারফরম্যান্সের যা নির্যাস, তাতে সমর্থকদের হতাশ হওয়ার বিশেষ জায়গা নেই। যদিও ব্রাজিল কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারি বলে দিয়েছেন, “তিন গোলে জিতলেও আরও উন্নতি করতে হবে। মেক্সিকোকে হারিয়ে আগে সেমিফাইনালে উঠতে হবে।”
টিমের মতো নেইমারও রাতারাতি আবার শিরোনামে চলে এসেছেন। জাপানের বিরুদ্ধে অনবদ্য এক গোলের পর। ব্রাজিল প্রচারমাধ্যমে বলা হতে থাকে, সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেকনিক আর স্কিল না থাকলে এ জিনিস সম্ভব নয়। সতীর্থ, বিপক্ষসবাই মুগ্ধ। ফ্রেড যেমন বলছেন, “পাসটা দিয়েই দেখলাম, ও শট মারার জন্য প্রস্তুত। দেখছিলাম, বলটা কোথায় যায়। দুর্ধর্ষ গোল।” নেইমারকে আটকানোর দায়িত্ব যাঁর উপর ছিল, জাপানের সেই ডিফেন্ডার ইওসিদাও বলে ফেলেছেন, “ভাবতেই পারিনি, নেইমার বলটা পেয়েই শট নেবে।”
আর নেইমার নিজে কী বলছেন?
দুর্ধর্ষ গোলের পরেও ব্রাজিলের ‘পোস্টার বয়’-এর মুখে ‘আমি’ নয়। ‘আমরা’। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নয়। দেশ। নেইমার বলেও ফেলেছেন, “সমর্থকদের উৎসাহ আমাদের আরও তাতিয়ে দিয়েছিল। তবে আমার নিজের গোলের চেয়েও জরুরি ছিল টিমের জয়।” |