সাতাত্তরের একটা ঘটনা দিয়ে ম্যচ রিপোর্টটা শুরু করি। মোহনবাগান-কসমস সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের পর পেলে পার্টিতে বলেছিলেন, “ব্রাজিল ফুটবলটা খেলে হৃদয় দিয়ে। আর সেটাই মাঠে ফারাক গড়ে দেয়।”
দিন বদলেছে। সময় বদলছে। বদলেছে কোচদের স্ট্র্যাটেজি, ফুটবলারের মানসিকতা। যারা এত দিন ফুটবলটা খেলত হৃদয় দিয়ে, যে সুন্দর ফুটবলকে পর্তুগিজেরা বলে ‘জোগা বোনিতো’, তারাই এখন অঙ্কের ফুটবলের মনোযোগী ছাত্র। দৃষ্টিনন্দন স্কিল, পাস, ড্রিবল কোথায় সে সব? জাপানের বিরুদ্ধে যে খেলা শনিবার রাতে নেইমাররা দেখাল, তাতে হৃদয়ের বদলে মস্তিষ্কের ছাপই বড় বেশি চোখে পড়ল।
অবশ্য এর পিছনে কারণ আছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিল এখন বাইশ নম্বরে। কিন্তু ব্রাজিলীয়রা আজও স্বপ্ন দেখছে দেশের মাটিতে আগামী বছর ‘হেক্সা চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার। যার টেস্ট পরীক্ষা এই কনফেডারেশন কাপ। সেই লক্ষ্যেই ছ’মাস আগে দলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পেলের দেশেরই দুই বিশ্বজয়ী কোচকে। কার্লোস আলবার্তো পাহিরা (টিডি) এবং লুই ফেলিপে স্কোলারি। শনিবারের ম্যাচের আগে শেষ সাত ম্যাচে ব্রাজিল জয় পেয়েছে মোটে দু’ ম্যাচে। |
কনফেডে সাম্বার দিন। ছবি: রয়টার্স |
স্কোলারিরা জানেন এই দলে কোনও রোনাল্ডো, রোমারিও, লুসিও, কাফু, রোনাল্ডিনহো নেই। থিয়াগো সিলভা, ফ্রেড, অস্কার, নেইমারদের দিয়েই বাজিমাত করতে হবে। এই ব্রাজিল কাফু, কার্লোসের মতো ওভারল্যাপে গিয়ে ঠিক সময় নেমে আসতে পারে না। এই ব্রাজিল গুচ্ছের মিস পাস করবে। থিয়াগো-ডেভিড লুইজের ডিপ ডিফেন্সকে চাপের মুখে নড়বড়ে দেখাবে। তাই জোগা বোনিতো বাদ। আমদানি মস্তিষ্কের ফুটবল। অঙ্কের ফুটবল।
স্কোলারি-পাহিরার ৪-২-৩-১ ছকে তাই ভুল কিছু নেই। বরং চালটা এ রকম ছিল:
এক) ব্যাক ফোরের সামনে দাঁড়িয়ে হোন্ডাদের পা থেকে বলটা কাড়বেন লুইস গুস্তাভো। সেখান থেকে বলটা যাবে দলটার মাঝমাঠে পওলিনহোর কাছে। ও বল হোল্ড করে বক্স টু বক্স ফুটবলটা খেলে। সুযোগটা তৈরি করে নিতে পারে। আবার গোলটাও চেনে।
দুই) অ্যাটাকিং থার্ডে অস্কার বল পেলে ওর দু’পাশে থাকা নেইমার কিংবা হাল্ককে কখনও বাড়াবে। একদম সামনে একা দাঁড়ানো ফ্রেডের কাজটা হবে ডাউন দ্য মিডল কিংবা উইং থেকে আসা বলকে কাজে লাগানো। মানে, আক্রমণের সময় বিপক্ষ বক্সে থাকছে সাত জন। আমি দুই সাইড ব্যাকের ওভারল্যাপকে ধরে বলছি।
আর অঙ্কের এই ট্যাকটিক্সের পরিণাম? ব্রাজিল-৩ : জাপান-০! |
ব্যালান্স শিট |
ব্রাজিল
গোলে শট ১৩
ফাউল ১৬
কর্নার ৫
অফসাইড ১
বল দখল ৬৩%
হলুদ কার্ড ০
লাল কার্ড ০ |
জাপান
গোলে শট ১১
ফাউল ১৪
কর্নার ০
অফসাইড ১
বল দখল ৩৭%
হলুদ কার্ড ১
লাল কার্ড ০ |
|
তা হলে নেইমারের এবং জো’য়ের গোলে সৃষ্টিশীলতা নেই? আলবাত আছে। প্রথম গোলের সময় ফ্রেডের চেস্ট ট্র্যাপিংয়ে সাম্বা-জাদু ছিল, তৃতীয় গোলের সময় অস্কারের সোলো রানে কাকাকে মনে পড়েছে, পওলিনহোর কয়েকটা ড্রিবলিংয়ে মনে হয়েছে যেন রোনাল্ডিনহো। লুকাস মৌরাও অসম্ভব প্রতিভাবান। কিন্তু নেইমারকে নিয়ে আমি খুব খুশি বলব না। মেসির চেয়ে গতি, আগ্রাসনে নেইমার পিছিয়ে। শুধু শু্যটিং আর স্কিলটা আছে। একা ম্যাচ বার করতে পারবে না। অতএব, এখনও গ্রেট নয়। আর একজনকে নিয়ে স্কোলারির বিস্তর খাটাখাটনি কপালে আছে। ডেভিড লুইজ। স্লো। ট্যাকল জঘন্য। হোন্ডাদের সামনে যা ওর অবস্থা দেখলাম, মেক্সিকোর জেভিয়ার হার্নান্ডেজ বা ইতালির বালোতেলিকে আটকাতে কিন্তু কালঘাম বেরোবে।
ভরসা একটাই। দলটার কোচ ও টিডি দুই বিশ্বজয়ী। যারা পেলের দেশকে খুব খারাপ সময় থেকে দুই ভিন্ন সময়ে বের করে এনেছে। ২০০২ সালের বিশ্বকাপেও স্কোলারির ব্রাজিল দৃষ্টিনন্দন ফুটবল বিশেষ খেলেনি। কিন্তু কাজের কাজটা করে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে ‘পিক’-এ উঠে।
এ বারও কিন্তু ওই একই ইঙ্গিত থাকছে! |
আজ কনফেডারেশন কাপে
গ্রুপ বি: তাহিতি-নাইজেরিয়া
(বেলো হোরাইজন্তে, রাত ১২ ৩০টা) |