সম্পাদকীয় ২...
মানুষের স্বার্থে
রাজ্য সরকারের চাকুরি করেন, এমন মানুষদের বেশির ভাগই কাহারও না কাহারও জামাই। কেহ কেহ শ্বশুর-শাশুড়িও বটে। অতএব, জামাইষষ্ঠী উৎসবটি দুর্গাপূজার তুলনায় কিছু কম গুরুতর নহে। বস্তুত, দুর্গাপূজায় যদিও বা ঘরে বসিয়া থাকা যায়, জামাইষষ্ঠীর দিন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করা ভিন্ন গতি নাই। অনেকেই স্ব-তাগিদে যান। যাঁহাদের সেই তাগিদ নাই, তাঁহারাও গিন্নির অশ্রুছলোছলো মুখের কথা ভাবিয়া আর দ্বিরুক্তি করিবার সাহস পান না। জামাইষষ্ঠী অপরিহার্য। তাহার জন্য যদি অফিসে হাজিরা দিয়াই কাটিয়া পড়িতে হয়, তাহাই সই। অফিস সম্বৎসরের, জামাইষষ্ঠী মাত্র এক দিন। ফলে, প্রতি বৎসরের ন্যায় এই বৎসরও জামাইরা যখন অফিস কাটিয়াই শ্বশুরবাড়ি যাত্রার পরিকল্পনা আঁটিতেছিলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলিলেন অর্ধদিবস ছুটি। অফিসও থাকিল, ষষ্ঠীও মরিল না। দেড়শো টাকায় মুরগির মাংসের ব্যবস্থা পূর্বেই হইয়াছিল, এই বার জামাইষষ্ঠীর ছুটিও পাওয়া গেল।
তবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ছুটির সিদ্ধান্তকে যাঁহারা জনমোহনের আরও একটি কৌশল অথবা খামখেয়ালিপনার দৃষ্টান্ত জ্ঞান করিতেছেন, প্রশাসনিক বিচক্ষণতা বিষয়ে তাঁহারা নিতান্তই অজ্ঞ। মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন, দফতর খোলা থাকিলেও কর্মচারীদের দেখা মিলিবে না। এবং, তাহার পর ‘এই তো কর্মসংস্কৃতির হাল’ মর্মে অপপ্রচার আরম্ভ হইবে। তিনি সেই প্রচারকে গোড়ায় মারিয়া রাখিলেন। কর্মীরা কাজে না আসিবার সুযোগই পাইলেন না। আঁতোয়াঁ দ্য সঁজুপেরি’র ‘দ্য লিটল প্রিন্স’ গল্পটি মনে পড়িতে পারে। সেই গল্পে এক অতি ক্ষুদ্র গ্রহের রাজা বহু বৎসর প্রজার অপেক্ষায় থাকিয়া শেষ পর্যন্ত লিটল প্রিন্সের সাক্ষাৎ পাইয়াছিলেন। রাজা দেখিলেন, বালক খালি হাই তুলিতেছে। বারণ করায় ক্লান্ত বালক অপারগতা জানাইল। রাজা তৎক্ষণাৎ আদেশ দিলেন, তুমি হাই তুলিতেই থাকো। বালক শেষে চলিয়া যাইতে চাহিল। আটকাইতে না পারিয়া রাজা বলিলেন, যাও, তোমাকে রাষ্ট্রদূত করিয়া দিলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশও তদ্রুপ অমান্য করিবার প্রশ্ন নাই, কর্তৃত্বেও আঁচড় পড়িবে না।
বস্তুত, এই পথটি শিক্ষণীয়। আইনকে যদি বাস্তব অনুযায়ী খানিক বাঁকাইয়া লওয়া যায় এমন ভাবে, যাহাতে সমস্ত বে-আইনই আইনে ঢুকিয়া পড়িতে পারে তবেই আর বে-আইনি কিছু ঘটিবার জো থাকিবে না। যেমন, ছাত্ররা অধ্যক্ষকে হেনস্থা করিলে তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করিয়া দেওয়া যায়, ইহা শরীর শিক্ষার অংশ। স্থানীয় কাউন্সিলর ঘুষ খাইলে তাহাকে ‘বিশেষ সুবিধা কর’ নাম দিয়া বৈধ করিয়া লইলেই চলিবে। পুরসভা তো হামেশাই এমন করে যথেচ্ছ বাড়ি বানাইয়া তাহার পর খানিক জরিমানা দিলেই তাহা ‘বৈধ’ হইয়া যায়। আইন মানুষের জন্য, মানুষ আইনের জন্য নহে কথাটি সর্বদা স্মরণে রাখা বিধেয়। সেই মানুষের জন্য প্রয়োজনে ঘেঁটু পূজায় পূর্ণদিবস ছুটির ব্যবস্থা করিতে হইবে বইকী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.