|
|
|
|
বাংলার বৃষ্টি-ভাগ্যে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আগাম বর্ষা উত্তর ভারতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
উত্তরবঙ্গে একটু দেরি হলেও গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমি বায়ু এ বার হাজির হয়েছিল নির্ঘণ্ট মেনেই। কিন্তু রাজস্থান এবং উত্তর ভারতের পাহাড়ে বর্ষা পৌঁছে গেল নির্দিষ্ট সময়ের এক মাস আগে! এবং আষাঢ়ের প্রথম দিনেই।
দিল্লির মৌসম ভবন রবিবার ঘোষণা করেছে, এ দিনই বর্ষা ঢুকেছে গোটা উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর এবং রাজস্থানে। অর্থাৎ সারা দেশই এখন বর্ষার আওতায়। বাংলায় নির্ধারিত সময়ে বর্ষার আগমন স্বাভাবিক। কিন্তু আবহবিদদের মতে, সারা দেশে ১৬ জুনের মধ্যে বর্ষার ঢুকে পড়াটা অস্বাভাবিক ঘটনা। শেষ কবে এমনটা ঘটেছিল, তা জানতে নথিপত্র ঘাঁটতে শুরু করেছেন তাঁরা।
বর্ষার কোষ্ঠীবিচারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তার এই আগাম আবির্ভাবের প্রবণতার জন্যই। কৃষি ও পর্যটনে এর দু’রকম প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
• এই আগাম বর্ষা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের কৃষি-ক্যালেন্ডার খানিকটা বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। এবং তার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাতেও। কারণ উত্তর ভারতে সাততাড়াতাড়ি বর্ষা হাজির হওয়ায় টান পড়তে পারে বাংলার বৃষ্টিতে।
• জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের পর্যটনেও আঘাত হানতে পারে বর্ষার এই অস্বাভাবিক আগমন।
স্বাভাবিক ছন্দে চললে দিল্লিতে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুলাই। তার ১৫ দিন পরে অর্থাৎ ১৫ জুলাই বর্ষা পৌঁছনোর কথা উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর এবং রাজস্থানে। মৌসুমি বায়ু ১ জুন কেরলে ঢুকলে তা জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছয় দেড় মাস পরে। কিন্তু এ বার কেরল থেকে কাশ্মীর এই দীর্ঘ যাত্রা মাত্র ১৫ দিনে শেষ করে ফেলল বর্ষা। উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ এবং কাশ্মীরে শনিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। তিন পাহাড়ি রাজ্যে জীবনযাত্রা পুরোপুরি বিপর্যস্ত
হয়ে গিয়েছে। |
|
বর্ষার আবির্ভাবের ক্ষেত্রে এই অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল কী ভাবে?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এ বার ১ জুন থেকেই আরবসাগর আর বঙ্গোপসাগরে পাল্লা দিয়ে তৈরি হয়ে চলেছে নিম্নচাপ আর ঘূর্ণাবর্ত। সেই সব নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের যুগলবন্দিই মৌসুমি বায়ুকে ঝড়ের বেগে দক্ষিণ থেকে উত্তরে টেনে তুলেছে।
আরবসাগরে এ বার প্রথম থেকেই নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্ত তৈরির সংখ্যা ছিল তুলনায় বেশি। ফলে পূর্ব ভারতের তুলনায় পশ্চিম ভারত দিয়ে বর্ষা এগিয়েছে অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে। মহারাষ্ট্র, গোয়া, গুজরাতে বর্ষা ঢুকেছে নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ-ছ’দিন আগেই। মৌসুমি বায়ুর দাক্ষিণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমের থেকে পূর্ব ভারত পিছিয়ে পড়ার মুখে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয় একটি নিম্নচাপ। ফলে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট দিনেই (৮ জুন)। আর ওই নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা দ্রুত পৌঁছে গেল উত্তরপ্রদেশে।
বঙ্গোপসাগরের এ বারের নিম্নচাপ স্থলভূমিতে ঢুকে দুর্বল হয়ে গিয়েছে শনিবারেই। তাই উত্তরপ্রদেশে ঢুকে পড়া বর্ষা কবে দিল্লি-সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছবে, তা নিয়ে মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল।
তা হলে বর্ষা কী ভাবে এ দিন পৌঁছে গেল উত্তর-পশ্চিমের সর্বত্র?
আবহবিদেরা জানান, আরবসাগরে তৈরি হওয়া একটি নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়ে উঠে রাজস্থান হয়ে ঢুকে পড়েছে গোটা উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং রাজধানী দিল্লিতেও।
এ ভাবে উত্তর ভারত ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে এক মাস আগে বর্ষা ঢুকে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্য মার খাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আবহবিজ্ঞানীদের মধ্যেই। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই বৃষ্টি কমে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে ঘন মেঘ দেখা গেলেও রবিবার দুপুরের অধিকাংশ সময়েই আকাশ ছিল রোদ-ঝলমলে। আরবসাগরের দিকে বর্ষা অতি সক্রিয় হয়ে পড়ায় সে-দিক দিয়েই তুলনায় অনেক বেশি মেঘ ঢুকছে পরিমণ্ডলে। বর্ষার সুনজর এখন বঙ্গোপসাগরের থেকে আরবসাগরের উপরে সরে গিয়েছে। তাই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার তীব্রতা কমতে পারে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। দক্ষিণবঙ্গে জোরদার বর্ষণের জন্য নতুন একটি নিম্নচাপের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই। এখানকার চাষ-আবাদে এই পরিস্থিতির কতটা প্রভাব পড়ে, সেটাই দেখার।
উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের চাষিরাও খুব স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না। কারণ, সেখানে বর্ষার মূল বর্ষণ হয় জুলাইয়ের মাঝামাঝি। এ বার তা এক মাস আগেই শুরু হয়ে যাওয়ায় সেখানকার কৃষকেরাও কিছুটা অপ্রস্তুত। বর্ষা যে এত আগে পৌঁছে যাবে, তার পূর্বাভাস মৌসম ভবনও দিতে পারেনি তাঁদের। বর্ষা কেমন হবে, তার উপরেই নির্ভর করবে দেশের খাদ্যভাণ্ডারের অবস্থা। সেই জন্য ‘অস্বাভাবিক’ এই বর্ষা সামগ্রিক ভাবে দেশের কৃষির উপরে কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সে-দিকেই নজর রাখছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। |
|
|
|
|
|